বুধবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন
মধ্যবর্তী নির্বাচন চাইতে পারেন রওশন
কামাল শাহরিয়ার, ঢাকাটাইমস
০৭ জানুয়ারি, ২০১৪ ২১:১৭:৫০

ঢাকা: প্রধানবিরোধী দলসহ বেশিরভাগ দলছাড়াই শেষ হলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্তিতে ফেলা জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের পর সর্বাধিক আসন পেয়েছে ।ঘোষিত ২৯২ আসনের ফলাফলে দলটি পেয়েছে ৩৩টি আসন।।এর ফলে এবারই প্রথম সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।
বিশ্বব্যাপী সমালোচিত এ নির্বাচনে নিয়ামানুযায়ী জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরই বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার কথা। কিন্তু সাবেক এই ‘স্বৈরশাসক’ বিরোধীদলের নেতা হতে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। এর ফলে, বিরোধীদলের নেতার আসনে বসানো হচ্ছে জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদকে।
আর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন সাবেক এই ফার্স্ট লেডি। বুধবার বিকালে তার গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে তিনি নির্বাচন ও পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে কথা বলবেন।
তবে জাপাসূত্র জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদের বিরোধীনেতা হতে যাওয়া রওশন এরশাদ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সঙ্কট মোকাবেলায় কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরবেন।এমনকি দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে সবদলকে নিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তাব দিতে পারেন। এনিয়ে দলের শীর্ষ ফোরাম ও সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করবেন রওশন। আর ওই আলোচনাটি আগামীকাল বুধবার দুপুরে তার বাসায় অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে নির্বাচিত এমপিদের বোঝাতে চেষ্টা করবেন বিরোধীদলবিহীন নির্বাচন করে কেউ ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। এতে দেশের সঙ্কট ঘনীভূত হয়। এজন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়াটা দরকার। তবে সেক্ষেত্রে দলীয় ফোরাম ও এমপিতে মতামতকে গুরুত্ব দেবেন রওশন। আজ মঙ্গলবার রাতে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ ও জাপা সূত্র এমন তথ্যই জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাপা প্রথম থেকে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এক বিভ্রান্তিকর অবস্থান তৈরি করে। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ একবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানলেও পরে নির্বাচন বর্জন করেন। সেই সঙ্গে দলের সকল প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এনিয়ে চলে নানা নাটক। পরে এরশাদকে ‘আটক’ করে চিকিৎসার নামে রাখা হয় হাসপাতালে।জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গেলেও এ নিয়েও নানা কথা চালু রয়েছে।
রওশন এরশাদের বাসায় বৈঠকের আগে মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদও মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন । তিনি বলেছেন,‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে। দেশকে বিভক্ত করে কেউ খুশি হতে পারে না। তবে সে নির্বাচনের আগে কিছু বিষয়ে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’য়ে পৌঁছানো দরকার। সহিংসতা কোনো সমাধান হতে পারে না।’
শপথ না নিলে জেলে যেতে হতে পারে এই আশঙ্কায় শপথ নেওয়ার বিষয়ে এরশাদ মনস্থির করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে তিনি শপথ নিলেও বিরোধীদলীয় নেতা হতে রাজি নন। এজন্য সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার আগে নব নির্বাচিত ৩২ এমপির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন রওশন এরশাদ ।
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন- এমন কারণেই গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। কেননা ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর টানা চারদফায় এমপি নির্বাচিত হলেও রওশন ছিলেন সংবাদমাধ্যমবিমুখ। সভা সমাবেশে বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল রওশন এরশাদের কার্যক্রম। এমনকি ১৯৯১ এবং ৯৬ সালের নির্বাচনে পার্টির চেয়ারম্যান কারাবন্দি থাকলেও রওশন এরশাদকে মিডিয়ায় কথা বলতে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী।
১২ ডিসেম্বর এরশাদ অন্তরালে চলে গেলে আলোচনায় আসেন রওশন এরশাদ। এরপর মাঝে-মধ্যেই গুজব ছড়িয়ে পড়তো, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন। এরশাদ চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। এরপর মিডিয়া কর্মীরা তার অবস্থান জানার জন্য দিনের পর দিন ধর্ণা দিতে থাকেন তার বাসার সামনে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রওশন এরশাদের বাসার সামনে সাংবাদিকরা অবস্থান করলেও কোনোদিনই তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মিডিয়া কর্মীদের বাসার সামনে অবস্থানকালে বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হন রওশন। কিছু জানার জন্য বাসার গেটের সামনে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। কিন্তু, রওশন এরশাদ বাসার গেটের ভেতরে গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকেই সোজা বেরিয়ে যান বঙ্গভবনের উদ্দেশে। সাংবাদিকরা গাড়ি ঘিরে দাঁড়ালেও একবারের জন্যও গাড়ির গ্লাস নামাননি রওশন।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন বর্জণের ঘোষণা দিলে জাপা নাটকের সূত্রপাত হয়। একদিন পর ৪ ডিসেম্বর বাসায় ফিরে মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন তিনি। আর মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। এ সময় মিডিয়া তার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো দিনেই মুখ খোলেননি সাবেক এই ফার্স্ট লেডি। এরশাদের বাসায় এলে মিডিয়া ঘিরে ধরলেও তিনি ছিলেন একেবারেই নির্বাক।
(ঢাকাটাইমস/৭জানুয়ারি/এসকে/এ্আর)