তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ
কামাল শাহরিয়ার, ঢাকাটাইমস
১৬ জানুয়ারি, ২০১৪ ১৩:৩৮:২৪

ঢাকা: গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পরও নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে এখন আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ-বিদেশের নানা চাপ ও বিতর্ক সামলাতে অনেকটা কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতেও তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগ।দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকলে বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা আন্দোলন জমাতে পারবে না। এজন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা হতাশা দূর করে তাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষ করে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ কার্যালয়, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে সরকার বিরোধীরা। এমনকি জামায়াত শিবিরের হামলায় আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকায়। নির্বাচনের পর দশম সংসদের শপথ হলেও আতঙ্ক কাটছে না বিরোধীদের হাতে হামলা-নির্যাতনের শিকার হওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সারির নেতাকর্মীদের। এ কারণে তাদের আতঙ্ক দূর করতে এবং মনোবল চাঙ্গা করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ মারখাওয়া তৃণমূলকে চাঁঙ্গা করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানা গেছে।এরই অংশ সিহাবে আজ কালের মধ্যেই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা সাংগঠনিক দূর্বলতা কাটাতে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।
সূত্রমতে, চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই দেশের ৫৯টি জেলা এবং এর অধীভুক্ত উপজেলার কাউন্সিল শেষ করবে আওয়ামী লীগ। এজন্য আগামী সপ্তাহের শুরুতেই দেশের প্রত্যেকটি জেলাতে কেন্দ্রের নির্দেশনা পাঠানো হবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কাজের গতি ফেরাতে বেশ ঘটা করে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সাতটি বিশেষ কমিটি করা হচ্ছে। ওই কমিটি সাত বিভাগে খোঁজখবর রাখবেন। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায়ই সবকিছু হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে আগামী মাসেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আরেক দফা জেলা সফর এবং জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এই সব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানাবেন। সহিসংতা ও সরকারবিরোধী আন্দোলন মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
চলতি মাসেই বিএনপি-জামায়াতের সরকার বিরোধী অপপ্রচারের কাউন্টার এবং সরকারের সফলতা তুলে ধরা হবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে সাংগঠনিক বিষয়টিই সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। দলের তৃণমুল নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংগঠনকে গতিশীল, দলীয় এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দুরত্ব কমিয়ে আনা এবং সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি আনতে এই সফর কর্মসূচি নিচ্ছে দলের উচ্চমহল।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে ও কুপিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে হত্যা করেছে। এনিয়ে একপ্রকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এজন্য এখন অনেক জায়গায় তারা মাঠে নামতেই ভয় পাচ্ছে।
তবে সরকারবিরোধীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা ভয় ও আতঙ্ক দূর করতে সরকারের শীর্ষ মন্ত্রী ও আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বাড়িবাড়ি যাবেন। সেখানে গিয়ে তারা সরেজমিন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে একটি প্রতিবেদন দিবেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেবে সরকার। এমনিক এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করে ওইসব কর্মীদের মনোবল শক্ত করা হবে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন পরবর্তী যে কয়েকটি কাজে প্রাধান্য দেয়া হবে তার মধ্যে দলের তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা ।কেননা দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা থাকলে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করা এবং আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা যাবে না।
(ঢাকাটাইমস/১৬ জানুয়ারি/এসকে/ এআর /ঘ.)