logo ০৫ মে ২০২৫
নবম সংসদের ৫০ সদস্য দুদকের তালিকায়

মোছাদ্দেক বশির
২০ জানুয়ারি, ২০১৪ ১৩:৩৪:৫২
image


ঢাকা: মহাজোট সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানকে গত পাঁচ বছরে আলোচনায় আসেননি। তবে সরকারের মেয়াদের শেষ বেলায় তাকে নিয়ে কথা হচ্ছে গোটা দেশে। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় সম্পদের যে হিসাব তিনি দিয়েছেন তা নিয়ে উঠেছে আলোচনার ঝড়।

২০০৮ সালে ২০ একর জমি ছিল মাহবুবুর রহমানের। এখন তার জমি আছে দুই হাজার ৮৪৫ একর। পাঁচ বছরে ব্যাংকে তাঁর জমাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। নিজের ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা। নবম সংসদ নির্বাচনে পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামেও এখন আছে এক কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ।

এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ কীভাবে করলেন এই রাজনীতিবিদ, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কেবল তিনি নন, প্রায় ৫০ জন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের হলফনামা থেকে সম্পদের হিসাব সংগ্রহ করেছে কমিশন। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় যাদের সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তাদের সবার কাছেই জবাবহিদিতা চাইবে সংস্থাটি।

এরই মধ্যে বর্তমান ও সাবেক ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাংসদসহ নয়জনের বিপুল পরিমাণ সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ছয়জন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, দু’জন বিএনপির এবং একজন ১৮ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।

সরকারি দলের এই ছয় নেতা হলেন, আফম রুহুল হক, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মান্নান খান, আসলামুল হক, এনামুল হক ও আবদুর রহমান বদি।

বিএনপি দুই নেতা হলেন শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং মশিউর রহমান। আর জমিয়তের নেতা হলেন মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস।

দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে অস্বাভাবিক সম্পদ বেড়েছে- এমন সংসদ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের দেয়া বিবরণীতে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা হবে।’

অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে এসব নেতাদের হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, সাতক্ষীরা-৩ আসনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আফম রুহুল হকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১১০ শতাংশ। ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়েছে ১০ গুণ।

২০০৮ সালে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানের সম্পদ ছিল সাড়ে ১০ লাখ টাকার মতো। এখন তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা। তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকার বার্ষিক আয় পাঁচ বছরের ব্যবধানে হয়েছে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা।

কক্সবাজার-৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। হলফনামা অনুযায়ী তাঁর বার্ষিক আয় এখন সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। ২০০৮ সালে তা ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা।

ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ মো. আসলামুল হকের সম্পদের বৃদ্ধিকেও অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন দুদক কর্মকর্তারা। তিনি ২০০৮ সালে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। পাঁচ বছর পরে এই জমি বেড়ে হয়েছে ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর। ২০০৮ ব্যবসা থেকে স্বামী-স্ত্রীর আয় ছিল প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৭ টাকা।

রাজশাহী-৪ আসনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য এনামুল হক ২০০৮ সালে বেতন-ভাতা থেকে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। এখন সে আয় বেড়ে হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। তার নিজের, স্ত্রীর ও নির্ভরশীলদের নামে শেয়ার কেনা আছে ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর থাকা দুই কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়।

লক্ষ্মীপুরের বিএনপির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বিরুদ্ধে প্রচুর সম্পদ গড়ার পাশাপাশি জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। ঝিনাইদহ সদরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

রাজনীতিবিদদের অবৈধ সম্পদ খতিয়ে দেখতে দুদকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, দুর্নীতি হয়ে থাকলে এবং তার প্রতিকার করতে পারলে দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে এবং তা হবে বাংলাদেশে দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি।



(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/এমবিএ/জেডএ.)