ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের দুই বছরপূর্ণ হলো আজ। তৎকালীন স্বরাষ্টমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম কোনো কাজে আসেনি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্ত দীর্ঘ দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকৃত খুনীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। দুই দফা হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তদন্ত কার্যক্রম এখন বন্ধ। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে রয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে প্রায় ১৯ মাস আগে দেশের জনপ্রিয় এ সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলা র্যাবের কাছে স্থানান্তর করেন হাইকোর্ট।
র্যাব মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর সাগর-রুনির ডিএনএ’র আলামত সংগ্রহ করে দেড় বছর আগে পরীক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। আজো সে ডিএনএ প্রতিবেদন বাংলাদেশে ফেরত আসেনি। উদঘাটিতও হয়নি মামলার প্রকৃত রহস্য।
হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত খুনীদের গ্রেপ্তারের নামে পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ডিবি ও র্যাব বিগত সময়ে কিছু ‘নাটক’ উপস্থাপন করেছে বলে মনে করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। দীর্ঘ দিন এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সাগর-রুনির পরিবারের সদস্যরা।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব আট জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-রাজাবাজারের সে বাসার দারোয়ান এনামূল, রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির অপর দারোয়ান পলাশ রুদ্রপাল, সন্দেহভাজন ডাকাত রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ।
মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন, ‘এ ঘটনায় খুশী হওয়ার কোনো কারণ নেই। র্যাবের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ করে না। আমরা যোগাযোগ করলে তেমন আগ্রহ দেখায় না।’
তিনি বলেন, ‘সাগর-রুনির মতো সাংবাদিক নিজ বাসায় খুন হওয়ার পর দুই বছর পার হচ্ছে। অথচ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত আসামি চিহ্নিত হয়নি। এটা আমাদের জন্য জন্য ভীষণ কষ্টের।’
মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের ব্যাপারে আমাদের মহাপরিচালক (ডিজি) খুবই আন্তরিক। তবে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন বিষয়ে খুব জটিলতা রয়েছে। তদন্তে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই।’
র্যাবের ডিজি মোখলেসুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। গত দুই বছরে মামলাটি পুলিশ-ডিবির হাত ঘুরে আমাদের কাছে এসেছে। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করছি।’
এদিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্তিতে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ সভা ও স্মরণ সভার আয়োজন করেছে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উভয় অংশ যৌথভাবে প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে। এবারের স্লোগান-সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করো, সাজা দাও।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসার বেডরুমে নিশংসভাবে খুন হন বেসরকারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।
(ঢাকাটাইমস/১১ ফেব্রুয়ারি/এএ/এজে)