এখনো চোখেমুখে আতঙ্ক নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর। কারণও আছে। আলোচিত সাত হত্যা মামলার আসামি নূর হোসেন এবং তার সহযোগীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোথায় আছে তারা? সুযোগ পেলেই যে কারো কাছে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ। একই প্রশ্ন হত্যার শিকার সাতজনের পরিবারের সদস্যদেরও।
‘কী কমু বাবা, মেয়ের-নাতিদের মুখের দিকে তাকাইলে ঠিক থাকতে পারি না। এখনো তো নূর হোসেনসহ অন্য আসামিরা ধরা পড়ল না। উল্টা তার লোকজন হুমকি-ধমকি দেয়। আবার কোনো অঘটন ঘটে, এই আতঙ্কে থাকি।’ বলছিলেন নির্মম হত্যার শিকার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম।
নূর হোসেন এখন নেই নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু তার ভয় এখনো কতটা তাড়িয়ে বেড়ায় তা এক ভুক্তভোগীর কথাতেই বোঝা যায়। দুই বছর আগে এই ব্যক্তিকে গুলি করেছিল নূর হোসেনের লোকেরা। মদনপুর এলাকায় নিজের জায়গা ভরাট করে দখল করে নিয়েছে নূর হোসেন। প্রতিবাদ করতে গেলে আসে প্রাণনাশের হুমকি। ধরে নিয়ে গুলিও করা হয় পায়ে। সেই ঘটনায় ভয়ে মামলা করতে পারেননি এই ব্যক্তি। নূর হোসেন পলাতক, তবু নিজের নামটাও প্রকাশ করতে চাইছেন না এই ব্যক্তি। এই সময়কে তিনি বলেন, ‘এখনো নূর হোসেন ধরা পড়েনি। তার বিরুদ্ধে বললে কখন তার লোকজন এসে আমাকে খুন করে ফেলে তার ঠিক নাই।’
কেবল দুই বছর আগের ঘটনা নয়, ২০০৬ সালে সিদ্দিরগঞ্জের খুন হওয়া স্কুলছাত্র টিপু সুলতানের বাবা নূর হোসেনের ভয়ে মামলা করতে পারেননি আট বছরেও। গত ২০ মে নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি করেন টিপুর বাবা কাজী আক্তার হোসেন।
তবে একদিক থেকে অনেকটা স্বস্তিতে দিন কাটছে এখানকার মানুষের। নেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজের উৎপাত। বরং যেসব জায়গা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নূর হোসেন এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন দখল করে নিয়েছিল সেগুলো ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বন্ধ হয়েছে শীতলক্ষ্যা থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর তোলা। শিমরাইল আন্তজেলা ট্রাক টার্মিনালও এখন শান্ত। মাদকের রমরমা বাণিজ্য, অশ্লীল যাত্রা-জুয়ার আসরও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক দিন পর নিশ্চিন্তে চোখ বুঝতে পারছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। গত বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল, রসুলবাগ, টেকপাড়া, সানারপাড়, নিমাই কাসারি, মদনপুর, নোয়াপুরসহ বিভিন্ন এলাকা এবং শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জবাসীর আতঙ্কের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন এই সময়কে বলেন, ‘আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। নূর হোসেন বা তার লোকজন এসে মানুষের ওপর হামলা করবে এ রকম কোনো আশঙ্কাই নেই। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছেন। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে আমরা সজাগ আছি।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নূর হোসেনের একাধিক বাড়ি জনমানবশূন্য। তবে রসুলবাগে নতুন যে বিলাসবহুল দালান তোলা হয়েছে সেখানের দুটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া আছেন। বাকিরা চলে গেছেন। যারাও আছেন তারা বাসা ছাড়ার চেষ্টায় আছেন। টেকপাড়ার বাড়ি লাগোয়া বিশাল মাছের খামার দেখার কেউ নেই। অথচ একসময় এখানে পর্যায়ক্রমে পাহারায় থাকত নূর হোসেনের লোকজন। এই মাছের খামারের ওপারে বেসরকারি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় একে একে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নূরের মালিকানাধীন এবিএস পরিবহনের বিলাসবহুল ২৩টি বাস।
সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নূর হোসেনের অঢেল ভূসম্পত্তিও পড়ে আছে অরক্ষিতভাবে। যেগুলোর বেশির ভাগই জবরদখল করেছেন নারায়ণগঞ্জের এই ত্রাস। অথচ একসময় এসব দখলের জমিতে অস্ত্রসহ পাহারা দিত নূরের লোকজন। কেউ প্রতিবাদ করলে মৃত্যুই ছিল তার শেষ ঠিকানা। আবার ভাগ্য ভালো হলে প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়েছে এমন শত শত মানুষের উদাহরণ মিলবে সিদ্ধিরগঞ্জের আনাচ-কানাচে।
নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত হত্যার পর পাল্টে গেছে চিত্র। খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর পরিবারসহ আত্মগোপনে গেছেন নূর হোসেন। এত দিন যারা প্রাণের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেত না তারা আজ সরব। বেরিয়ে আসছে ‘ভয়ংকর নূর হোসেনের’ রোমহর্ষক খুন-খারাবির কা-।
ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের একটি অংশ এবং সিদ্ধিরগঞ্জে দীর্ঘকাল ধরে এমন ‘আতঙ্কের জনপদ’ ছিল তা কল্পনাতেও ছিল না কারো। অথচ এখানেও ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন।
এলাকাবাসীদের মধ্যে যারা নূর হোসেন এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়েছে তারা আজ দাবি তুলছে বিচারের। বাড়িঘর ও সম্পদের সামনে দাঁড়িয়ে নূর হোসেনের নাম তুলে অভিশাপ দিচ্ছে দুই হাত তুলে। বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে করে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে কারো কারো।
শিমরাইলের টেকপাড়ায় নূর হোসেন যে বাড়িতে থাকত তার পাশেই একটি আধপাকা বাড়ি। সরেজমিনে গেলে এই প্রতিবেদককে দেখে বেরিয়ে আসেন ওই বাড়ির একজন নারী সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ভাই কখনো ভাবতেও পারিনি দিন এভাবে পাল্টে যাবে। হোসেন চেয়ারম্যান (নূর হোসেন) ও তার লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এই এলাকার মানুষ ভুলে গিয়েছিল যে আল্লাহ একজন আছেন। আল্লাহর যে বিচার আছে এখন মানুষ বুঝতেছে। এত বড় একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী হোসেন চেয়ারম্যান কিন্তু দেশের সরকার এত দিন কিছুই করতে পারেনি। সামনে কী হয় কে জানে।’
কোথাও কেউ নেই : একটি-দুটি নয়, চারটি বাড়ির মালিক নূর হোসেন। এর মধ্যে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল একটি দালানও তুলেছেন কয়েক দিন আগে। কথা ছিল পুরোনো বাড়ি ছেড়ে ওখানেই ওঠার। কিন্তু তার আগেও সাত হত্যার ঘটনায় বেকায়দায় পড়েন নারায়ণগঞ্জের আতঙ্ক নূর হোসেন।
চিটাগাং রোড থেকে হাতের বাঁ দিকে বড় সড়ক। এই সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই টেকপাড়া মাছের আড়ত। এটি নূর হোসেনের। আড়তের দিক পেছন দিকটাতেই তার পুরোনো বাড়ি। যেখানে তিনি থাকতেন। তবে এখন কেউ থাকেন না এখানে। সাত হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সপরিবারে পালিয়ে গেছেন নূর হোসেন। পুলিশ মালামাল জব্দ করে নেওয়ার পর থেকেই বাড়ির গেট খোলা। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ এই সময়কে বলেন, ‘এখন এই বাড়িতে কুকুরও ঢোকে না। খুনি হোসেনের ভিটায় একদিন ঠিকই ঘু ঘু চড়বে।’
ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল আরো দুটি ভবন। এটি নূর হোসেনের ছোট ভাই জজ মিয়ার। কিন্তু ওই বাড়িতেও পাওয়া যায়নি কাউকে।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসনে আরা জানান, একটি নয়, এ রকম আরো চারটি বাড়ি আছে নূরের। এবার সেগুলো খুঁজে বের করার পালা। রাস্তা পার হয়ে রসুলবাগ। এখানেই আছে নূর হোসেনের বিলাসবহুল দালান, যা তিনি তুলেছেন কয়েক দিন আগে। নিপ্পন প্যাকেজিং গলিতে মাদ্রাসা রোডে কিছুদূর গেলেই নূরের অট্টালিকা। বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব বেশি দিন হয় কাজ শেষ হয়নি। রংও নতুন। শিমরাইল মৌজায় ৩৭৩ নম্বর দাগে প্রায় ১১ শতাংশ জমির ওপর প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করে পাঁচতলা ফ্ল্যাট বানিয়েছেন তিনি। ফ্ল্যাটের ওপরের দুই তলায় করেছেন অত্যাধুনিক বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স। অভিযোগ আছে, জমিটির প্রকৃত মালিক নাজির উদ্দিনের ছেলে আশাব উদ্দিন। আশাবকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে ২০ লাখ টাকায় জমিটি কিনেছেন নূর।
এই বাড়িতে ব্যবহার করেছেন ইতালি থেকে আমদানি করা ব্রাউন কালার থাই গ্লাস। ভেতরে ঢুকে মনে হয়েছে গুলশান-বনানীর অভিজাত এলাকার কোনো অট্টালিকা। ইতালি ও ভারত থেকে আনা হয়েছে স্যানেটারি পণ্য। টাইলস ও মার্বেল এসেছে চীন ও নেপালের। জার্মানি থেকে আমদানি করা ঝাড়বাতি। এই বাড়ির প্রায় সব ফ্ল্যাট ফাঁকা। তবে দু-তিনটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া আছেন। তারাও ছাড়ার চিন্তা করছেন।
বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন আব্দুল জব্বার নামে একজন বৃদ্ধ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মাসেই নতুন ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুনের ঘটনার পর সবাই বাসা ছেড়ে দিয়েছে।’ নূর হোসেন বা তার পরিবারের কারো খোঁজ জানেন কি না? জবাবে জব্বার বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই। চিন্তাই আছি কী করব। ভাড়া তুলে কাকে দেব।’
শিমরাইল মৌজায় ৭২ এবং ৭৩ নম্বর দাগে ১০ শতাংশ জমির ওপর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি ছয় তলা বাড়ি বানিয়েছেন নূর। এই বাড়িতেও বসানো হয়েছে জার্মান, চীন, ভারত ও নেপাল থেকে আনা টাইলস, আসবাবপত্র এবং স্যানিটারি পণ্য। অভিযোগ আছে, জমিটির মূল মালিক আদম আলীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৭ লাখ টাকায় লিখে নিয়েছেন নূর।
একই মৌজার ৩১২ নম্বর দাগে ১০ তলা ভিত দিয়ে ছয় তলা ভবন করেছেন নূর হোসেন। কুমিল্লার এক বাসিন্দার কাছ থেকে জোর করে এই জমিটি কিনেছেন তিনি। এছাড়া রসুলবাগে সাড়ে আট কাঠা জমির ওপর সাত তলা ভবন তুলেছেন নূর হোসেন। এই জমির অর্ধেকই সরকারি। বাকিটুকু আদমজী জুট মিলের একজন কর্মকর্তার।
এর বাইরে সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজায় ১০ শতাংশ জায়গার ওপর সাততলা ভবন বানিয়েছেন নূর হোসেন। এখানেও সরকারি রাস্তা দখলের অভিযোগ আছে। এই বাড়িটি ‘রঙমহল’ বলে পরিচিত।
এলাকাবাসী জানায়, নূর হোসেনের কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ মাদক ও অস্ত্রের বাণিজ্য নিরাপদ রাখার জন্য আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল ‘রঙমহল’ গড়ে তোলেন। প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা, প্রভাবশালী নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের পাশে পেয়ে নূর হোসেন প্রতি মাসে বিনা বাধায় কোটি কোটি টাকা আয় করতেন। বিনিময়ে তাদের খুশি রাখতেন টাকা আর সুন্দরীদের দিয়ে। সন্ধ্যার পর ওই ‘রঙমহলে’র ভবনের সামনে আসত বিলাসবহুল গাড়ি। তারা চলে যেত ভোরে।
সাত খুনের পর নূর হোসেন আত্মগোপনে যাওয়ায় এলাকাবাসী জেগে ওঠে। রঙমহলের নিয়ন্ত্রণকারী নূর হোসেনের দুই ক্যাডারকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয় তারা। শিপন ও আতিক নামের নূর হোসেনের এই দুই ক্যাডার রঙমহলের অনেক অজানা তথ্য পুলিশের কাছে বলেছে।
ঢাকাতেও আছে ফ্ল্যাট
নারায়ণগঞ্জের বাইরে রাজধানীর গুলশান-২ এলাকায় নূর হোসেনের মালিকানাধীন দুটি ফ্ল্যাট আছে। গুলশান লেকের বিপরীতে ৩৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যে থাকতেন নূর হোসেন। এছাড়া বনানী ও ধানমন্ডিতেও আছে দুটি ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটগুলোর আনুমানিক মূল্য আট কোটি টাকা।
ভূসম্পদের বেশির ভাগই দখল
যেখানেই ইচ্ছা হয়েছে সেখানেই অন্যের জায়গা-জমি দখল করেছেন নূর হোসেন। অস্ত্রের মুখে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। বাদ যায়নি সরকারি জমিও। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিককে নামমাত্র টাকা দিয়ে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে জমি থেকে। প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি লিখে নিয়েছেন নিজের নামে। এমন হাজারো অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের একটি অংশ নূর হোসেনকে, ভূমিদস্যু হোসেন নামে ডাকে। সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা আনিসুল বলেন, ‘নূর হোসেন জমি দখলের পর লোকজন দিয়ে তা পাহারা দেওয়াতেন। যাদের হাতে প্রকাশ্যেই বড় বড় অস্ত্র থাকত। প্রতিবাদ করতে গেলে মেরে শীতলক্ষ্যা ফেলে দেওয়ার হুমকি দিত। বলত অনেক মানুষকে কেটে শীতলক্ষ্যায় ভাসায়া দিছি। বাড়াবাড়ি করলে তোমাগো একই ভাগ্য হইব।’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কেনা ও দখল মিলিয়ে নূর হোসেন কম করে হলেও ৫০ বিঘা জমির মালিক বনে গেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের আঁটি মৌজায় ৪২৮ দাগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ৩০ শতক জমি মাত্র ১০ লাখ টাকায় কিনেছেন নূর হোসেন। আমিজউদ্দিন চেয়ারম্যানের ছেলে হাবিবকে হত্যা করা হলে বিপর্যয় নেমে আসে পরিবারটিতে। একসময় তাদের জিম্মি করে ও প্রাণের ভয় দেখিয়ে নামমাত্র দামে তাদের জমি কিনে নেন নূর।
সিদ্ধিরগঞ্জ হাইজিংয়ের উল্টো পাশে চার বিঘা সরকারি জমি দখল করেছেন হোসেন। এছাড়া সানারপাড় এলাকায় চার বিঘা জমি কেনার জন্য পাঁচ কোটি টাকা বায়না দিয়ে গেছেন নূর হোসেন। জমিটি নিমাই কাসারি এলাকার মর্তুজা আলীর স্ত্রী জাহানারার। কথা ছিল এ মাসে পুরো টাকা দিয়ে জমি বুঝে নেওয়ার। কিন্তু নূরের অবর্তমানে বায়না বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জমির মালিক। কয়েক দিন আগে মুক্তিনগরে তিন কোটি টাকায় ১৫ কাঠা জমি কিনেছেন নূর।
সারি সারি সাজানো ২৩টি বাস
সাত খুনের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থেকেই পলাতক নূর হোসেনকে খুঁজতে পুলিশ তার বাড়িতে গিয়েছিল। সেখান থেকে একটি মাইক্রোবাসসহ বাসার মালামাল জব্দ করে নিয়ে গেছে পুলিশ। আটক করেছে ১২ জনকে। কিন্তু এখনো জব্দ হয়নি নূর হোসেনের শত কোটি টাকার সম্পদ ২৩টি বিলাসবহুল বাস। এগুলো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলত। নাম এবিএস পরিবহন। নারায়ণগঞ্জ রুটে বছরখানেক আগে চলাচল করত নসিব পরিবহন। অভিযোগ আছে, শামীম ওসমানের লোকজন জোর করে ওই পরিবহন ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য করে। মূলত নূর হোসেনের এবিএস পরিবহন নামাতেই এ কৌশল করা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিমরাইলে বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনজিসির জায়গায় সারি সারিভাবে রাখা হয়েছে এবিএস পরিবহনের ২৩টি বাস। গত ১ মে থেকে বাসগুলো এখানেই পড়ে আছে। মূলত এটাই ছিল পরিবহনটির গ্যারেজ। গাড়ি মেরামতসহ যাবতীয় কাজ করা হতো এখানেই। এনজিসির মালিক সঞ্জিব কুমার দত্ত। এটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক গৌতম বাবু এই সময়কে বলেন, ‘নূর হোসেন সাহেবের গাড়িগুলো আমাদের এখানে রাখতেন। তিনি নিজের লোকজন দিয়ে পাহারা দিতেন। তবে গাড়ি রাখার জন্য জায়গার কোনো ভাড়া বা টাকা আমাদের দিতেন না।’
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার এই সময়কে বলেন, ‘নূর হোসেনের বাসগুলো আমাদের নজরে আছে। কেউ যেন সরিয়ে নিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এগুলো সময় হলে জব্দ করা হবে।’
জমি দখল করে ভরাট, মুক্তিপণ দাবি
নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকাও রেহাই পায়নি নূর হোসেনে ভয়াল থাবা থেকে। সম্পদের নেশায় বিভোর নূর ছুটে গেছেন সেখানেও। বন্দরের মদনপুর এলাকায় কয়েক একর জমি জোর করে দখল করে নিয়েছেন নূর হোসেন। শুধু তাই নয়, নিচু জমিতে ভরাট করেছেন বালু দিয়ে। মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে হাতের বাঁ পাশ দিয়ে সড়কটি চলে গেছে নোয়াপাড়ার দিকে। এই সড়কের উত্তর পাশে চানপুর মৌজায় একের পর এক জমিতে বালু ভরাট করেছেন নূর হোসেন। অথচ এই জমির প্রকৃত মালিক শিল্পপতি সুরুজ মিয়া। দখল করার জমির একটি অংশে রয়েছে স্পিনিং মিল, পাটকলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুরুজ মিয়ার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা এই সময়কে বলেন, ‘নূর হোসেনের লোকজন জোর করে এই জমি দখল করে ভরাট করছে। জমির মালিকানার সাইনবোর্ড দিনেদুপুরে তুলে ফেলেছে। এ ব্যাপারে আমাদের মালিক তার সঙ্গে শুরুর দিকে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ১০ কোটি টাকা দিলে তিনি এই জমির দখল ছেড়ে দেবেন। তা না হলে জমি ও জীবন দুটিই নিয়ে নেবেন।’ এর পর থেকে সুরুজ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকাতে যাওয়া বন্ধ রাখেন। তবে নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি এলাকায় গেছেন। নিজেদের জমি দখলে নিতে কয়েক শ নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন জমির মালিক।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা আইজউদ্দিন এই সময়কে বলেন, ‘প্রায়ই এখানে নূর হোসেনে লোকজন অস্ত্রের মহড়া দিত। ফাঁকা ফায়ার করত। পুরো ফিল্মি স্টাইলে এখানে রাজত্ব করত হোসেন।’
পদে পদে চাঁদাবাজি
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় চাঁদাবাজির সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন নূর হোসেন। ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের খাজনা আদায়ের মতো নূর হোসেনকে দিতে হতো নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা। দিতে অস্বীকার করলে নেমে আসত অত্যাচারের খড়গ। নূর হোসেনের পেটুয়া সন্ত্রাসী বাহিনী এসব চাঁদা তুলত। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলে একটি কার্যালয় গড়ে তুলে ছিলেন নূর হোসেন। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হতো চাঁদা আদায়। চাঁদা না দিলে এখানে তুলে এনে অত্যাচার করা হতো। স্থানীয়রা জানায়, প্রতি মাসের এক থেকে পাঁচ তারিখে চাঁদা দেওয়ার নির্দেশ ছিল। কাঁচপুর ব্রিজের পাশ্ববর্তী প্রায় ৫০০ বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এক লাখ করে চাঁদা তুলত। এছাড়া ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা করে মাসিক মসোহারা তোলা হতো।
এছাড়া ফুটপাতের অন্তত দুই হাজার ব্যবসায়ীকে দিনে দুই থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো। সওজ থেকে পোল্ডার সড়ক (টার্নিং মোড়), কাসসাফ ও দবির উদ্দিন মার্কেটের সামনের ফুটপাতসহ রাস্তার পাশের দোকানদাররা নূরের ক্যাডার শিমরাইল ছিন্নমূল হকার্স সমিতির নেতা সেলিম রেজা, টোকাই শাহজাহান আলী মাহমুদ ও সানাউল্লাহ সানার নির্ধারিত লোকদের চাঁদা দিতেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চলাচলকারী দুই হাজার বাসের প্রতিটির বিপরীতে (৫৬টি কাউন্টার থেকে) দিনে ৫০০ টাকা এবং শিমরাইল স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যাওয়া অন্তত ৫০০ ট্রাকের প্রতিটি থেকে দিনে ৬০০ টাকা করে চাঁদা উঠাত হোসেনের সন্ত্রাসীরা। চুনের ফ্যাক্টরি থেকেও তোলা হতো চাঁদা। তবে নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পর চাঁদা তুলতে আসে না কেউ।
বালু ও পাথর ব্যবসা ছিল রমরমা
নূর হোসেন ও তার ভাইয়ের দখলে ছিল শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবৈধ বালু ও পাথর ব্যবসার গদি। এরই মধ্যে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। জানা গেছে, বেপরোয়া বালু উত্তোলন ও জমজমাট পাথর ব্যবসা থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন নূর হোসেন। ২০০ বালু ব্যবসায়ীর প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসে ২০ হাজার ও পাথর ভাঙানো মেশিন মালিকদের (৩৫ গদি) প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হতো। কাঁচপুর ব্রিজের নিচ দিয়ে বহমান শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু ও পাথর ভাঙার নেতৃত্বে ছিল হোসেনের আপন ছোট ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান ‘জজ এন্টারপ্রাইজ’। সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আট কোটি টাকায় চারটি বাল্কগেট (বালু কাটার মেশিন) বানাচ্ছেন নূর হোসেন। ডেমরা এলাকায় আফজালের ডগে তৈরি করা হচ্ছে এসব বাল্কগেট। একেকটির আয়তন ১৮০০ বর্গফুট।
মাছের খামারে রঙমহল
শিমরাইলের টেকপাড়ায় নিজ বাড়ির অদূরেই নূর হোসেনের মাছের খামার। এই খামারের মাঝখানে নীল রঙের টংঘর বানানো হয়েছে। চারদিকে পানি মাঝখানে বাঁশের খুঁটি দিয়ে উঁচু ঘর। এটা নূর হোসেনের জলবিলাস রঙমহল। তবে স্থানীয়রা জানায়, রঙমহলটি বানিয়েছেন কয়েক দিন আগে। এখনো এখানে গিয়ে আমোদ-ফুর্তির গোছগাছ সারতে পারেননি হোসেন। তার আগেই বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাকে।
মাছের আড়ত বসিয়ে কমিশন বাণিজ্য
নিজ বাড়ির সামনে মাছের আড়ত বানিয়েছেন নূর হোসেন। স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাছের আড়তের জায়গায় মসজিদ ছিল।’
মাছের আড়তের পাশেই ছোট জায়গায় টিন দিয়ে একটি মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিদিন ২৫ টাকা করে আড়ত থেকে কমিশন পেতেন নূর।
হোসেনের খুনি বাহিনী
নূর হোসেনের একটি নিজস্ব খুনি বাহিনীও ছিল বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এই বাহিনীর কাজ ছিল হোসেনের হুকুম তামিল করা। সিদ্ধিরগঞ্জের কুরিপাড়া গুলদেশারবাগ এলাকার সেলিম, সালাউদ্দিন, বিল্লাল, ফেন্সি কবির এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য। মূলত ফেন্সি কবির ছিল নূরের মাদকের জোগানদাতা। এসব লোকজন দিনে দুপুরে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াত।
সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের আঁতাত
অভিযোগ আছে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা সঙ্গে বেশ সখ্য ছিল নূরের। এসব লোকজনের নির্দেশে অনেক অপকর্ম ঘটাতেন হোসেন। এসব আস্থাভাজনদের মদদেই তিনি পালিয়ে গেছেন।
গুঁড়িয়ে গেছে জুয়ার আসর, মাদক বাণিজ্য
শিমরাইল আন্তজেলা ট্রাক টার্মিনাল মাদকের ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন নূর হোসেন। পূর্বাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী সব মাদক পরিবহনই এই টার্মিনালে নিরাপদে হাতবদল করেছে। বিনিময়ে নূর হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া ট্রাক টার্মিনাল, কাউন্সিলরের অফিসের পেছনে (সাবেক জিহাদ হোটেল), টেকপাড়া, ডেমরা-আদমজী রোডে ফজলুর রহমান ও আমিজ উদ্দিন পেট্রোল পাম্পের পেছনে প্রকাশ্যেই বিক্রি করেছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, মদ, বিয়ারসহ সব ধরনের মাদক, যা থেকে দিনে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা পকেটে ভরেছেন নূর হোসেন। এখন এসব স্থানে মাদক বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রার প্যান্ডেল পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে জুয়া খেলাও।
ট্রাক হেলপার থেকে ভয়ংকর নূর
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যাসহ ২৩টি মামলা আছে। এরশাদ সরকারের আমলে অপরাধ জগতে পা রাখলেও নূর হোসেনের উত্থান শুরু হয় ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের হাত ধরে। ওই বছর তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর শামীম ওসমাসের ছত্রচ্ছায়ায় আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মুন্সিগঞ্জের সরকারি দলের একজন সাংসদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল নূর হোসেনের।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, ১৯৮৫ সালে ট্রাকচালকের সহযোগী হিসেবে জীবন শুরু করেন নূর হোসেন। পরে নিজেই চালক হন। ১৯৮৮ সালে শিমরাইলে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নে যোগ দেন। এরপর জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নেন। ১৯৯১ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। এরপর তিনি স্থানীয় বিএনপির নেতা গিয়াসউদ্দিনের সমর্থনে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দুই বছর পর শামীম ওসমানের ছত্রচ্ছায়ায় সিদ্ধিরগঞ্জের রাজনীতি ও অপরাধ জগতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর শামীম ওসমান দেশ ছাড়লে নূর হোসেনও এলাকা ছাড়েন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১২ মার্চ তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশও জারি করা হয়।
নবম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নূর হোসেন এলাকায় ফেরেন। তখনো পুলিশের তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের ৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা ‘অতি জরুরি’ লিখে একটি চিঠি দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে। চিঠিতে বলা হয়, ‘নূর হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল স¤পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করে। তিনি যেন আইনের আশ্রয় নিতে না পারেন, সে জন্য তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়।
পুলিশ জানায়, এই চিঠির পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। শামীম ওসমানের সমর্থনপুষ্ট হয়ে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন। এমনকি কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম অপহরণের পর প্রথম দুই দিন তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন শামীম ওসমান।
ওই এলাকা ঘুরে সিদ্ধিরগঞ্জে শামীম ওসমানের সঙ্গে নূর হোসেনের ছবিসহ অসংখ্য পোস্টার ও বিলবোর্ড দেখা গেছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের রেলগেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশে একই মঞ্চে ছিলেন শামীম ওসমান ও নূর হোসেন।
জানতে চাইলে সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, ‘নূর হোসেন আমার কর্মী ছিল, এটি সত্যি। কিন্তু সে যে এত বড় অপরাধী, সে যে নজরুলকে খুন করে ফেলতে পারে, এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। এখন আমি সব বুঝতে পারছি। নূর হোসেন খুনি। তার ব্যাপারে আমার অবস্থান বদলেছে। আমি চাই সে দ্রুত গ্রেপ্তার হোক।’
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল একে একে সাতজনের মরদেহ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যায়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে মামলায় আসামি করা হয় মোট ছয়জনকে।