logo ০১ মে ২০২৫
রক্তাক্ত তিন জনপদ
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২৪ মে, ২০১৪ ১৬:০২:১১
image


ঢাকা: খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির কারণে লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও নোয়াখালীর তিন জেলায় তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। একদিকে সন্ত্রাসী বাহিনী, অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকায় জলদস্যুর উৎপাত। এতে আক্রান্ত হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এমনকি সাধারণ মানুষও। জলদস্যুর ভয়ে মানুষজনকে এলাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।

পুলিশের খাতায় এই তিন জেলায় আছে ২০টিরও বেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এর বাইরে উপকূলীয় এলাকা দাপিয়ে বেড়ায় একাধিক জলদস্যু বাহিনী। যখন তখন একে ওকে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়, খুন, জখম, বাড়িঘরে হামলা এই তিন জেলায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর কোনোটিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিরুদ্ধে, কোনোটিকে মদদ দিচ্ছে বিএনপির নেতারা। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই হচ্ছে সংঘর্ষ, গোলাগুলি। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে বিদেশি রাইফেল এবং ১৯৮টি গুলিসহ এক ছাত্রলীগ নেতার আত্মসমর্পণই বলে দিচ্ছে এই এলাকায় সন্ত্রাসীরা কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে।

এই তিন জেলায় জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশের হিসাবেই খুন হয়েছে ৯০ জন। এর বাইরে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা। নিখোঁজের ঘটনাও আছে বহু।

লক্ষ্মীপুরের জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হত্যা, খুন, গুম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক কোন্দল, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কারণে এসব কর্মকা- ঘটছে। তবে এগুলো বার বার ঘটার কারণ হলো মামলার তদন্ত শেষ করতে না পারা। তবে বেশ কিছু মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। আশা করি অপরাধ কমিয়ে আনতে পারব আমরা।’

এলাকায় বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

নোয়াখালী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম সেলিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় মূলত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বেশি। তারা একটা সময় এই সব অঞ্চলে এতবেশি প্রভাবশালী ছিল যে, প্রশাসনও ডুকতে পারত না। এরা এখনো আছে। তারা ঘাপটি মেরে আছে। তারাই মূলত এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফেনীর সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমরা ধারণা করেছিলাম নতুন নেতারা ভালো রাজনীতি শুরু করবে। কিন্তু তারা পারেনি। লক্ষ্মীপুরে একই ঘটনা ঘটছে। নোয়াখালীতেও হচ্ছে। এসব কিছুর কারণ হচ্ছে রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি না থাকা। এছাড়া বিরোধী মতকে ধ্বংস করার কারণে এসব কিছু হচ্ছে। এটা কোনো দলের নয়। এটা রাজনীতির সংস্কৃতির এমন অবক্ষয় যে, সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’

আতঙ্কের নগরী ফেনী  

২০ মে গুলি করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে হত্যা করা হয়েছে। দিনদুপুরে ফেনী শহরের একাডেমি সড়কে বিলাসী সিনেমা হলের কাছে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ সময় একরামের সঙ্গে গাড়িতে থাকা তাঁর তিন সঙ্গী ও গাড়িচালক আহত হন। নিহত একরাম ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া  দৌলতপুরে। তবে তিনি ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার বাসায় থাকতেন।

এই ঘটনায় নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুলের ভাই স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন বলেন, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের ভেতরে দলীয় প্রতিপক্ষকে খুন ও গুমের পরিকল্পনা হচ্ছে মর্মে ১৯ মে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ জয়নাল হাজারী সম্পাদিত হাজারিকা প্রতিদিন পত্রিকায় খবর বের হয়েছে । এতে একরামের নামও ছিল। এ হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এখন বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে।

এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তুলেছেন ফেনী সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। জয়নাল হাজারী পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে।

নোয়াখালীতে খুন গুম অপহরণ নিত্যদিনের ঘটনা

নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্যে সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও কোম্পানীগঞ্জ যেন হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নানা ঘটনা। খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের কামরুল হাসান মজনু বাহরাইন থেকে দেশে ফেরার পর ২২ মার্চ চাঁদার দাবিতে তাকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। একবার চাঁদা দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনলেও আবার সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করায় বসতঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

২০ মার্চ রাতে একই এলাকায় গুলি ও বোমা ফাটিয়ে সন্ত্রাসীরা নিজ বাড়ি থেকে তুলে নেয় একজনকে। একই উপজেলার কাউছার হামিদ পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার বৃদ্ধ মা ও পরিবার নিয়ে। ১ এপ্রিল অপহরণ হন বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। ৭ এপ্রিল অপহরণ হন ওমান থেকে আসা একই গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির ফয়েজ আহম্মদ বাবলু, রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের রুহিতখালী গ্রামের সাজু ও লিখন, হাটপুকুরিয়া ইউনিয়নের ফল ব্যবসায়ী শহীদুল্যাহ। মার্চ মাসে চাটখিলের রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম থেকে অপহরণ করা হয় ৭ জনকে।

জেলার সদর উপজেলায়ও ঘটছে অপহরণের ঘটনা। ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার দাসেরহাট গ্রাম থেকে ৩ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তুলে নিয়ে যায় মিজান ও তার বন্ধু মামুনকে। পরে মামুনকে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর বিনিময় ছেড়ে দেয়। কিন্তু মিজান গরিব, পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। টাকা দিতে না পারায় তার ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। পরে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল রেখে ছেড়ে দেয়।

এসব অপহরণ থেকে রেহাই মেলেনি খোদ জনপ্রতিনিধিরাও। গত ২৮ মার্চ অপহৃত হন নবনির্বাচিত চাটখিল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন  হাসান। ১০ মার্চ অপহৃত হন একই উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আবু হানিফ রিপন। সারা রাত চলে নির্যাতন। পরে ১১ মার্চ সকালে জনসাধারণ অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে। আবু হানিফ রিপন বলেন, যেখানে জনপ্রতিনিধিরা অপহরণের শিকার হচ্ছেন সেখানে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপত্তা পাবে।

রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সন্ত্রাসীরা আসে অন্য এলাকা থেকে। যারা অপহরণ বা হত্যার শিকার হয় তাদের স্বজনরা ভয়ে মুখ খুলে না।’

সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ সন্ত্রাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বশিকপুর, দত্তপাড়া, উত্তর জয়পুর, চন্দ্রগঞ্জ, দাসেরহাট এলাকায় বিভিন্ন বাহিনী অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। কিন্তু এসব এলাকায় একাধিক পুলিশ ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে এক আতঙ্ক।

১৫ এপ্রিল রাতে একই উপজেলার শেরপুর গ্রামে দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে হয় গোলাগুলি। এ সময় শেরপুর গ্রামের শহীদ উল্যার স্ত্রী কুসুম বেগম ও আবদুল হান্নানের মেয়ে ইয়াসমিনসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

১১ এপ্রিল রাতে বশিকপুর ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে এক বিএনপি কর্মীকে মারধরের পর দুই পক্ষের মধ্যে আবার হয় গোলাগুলি। এতে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ৫ এপ্রিল রাতে সন্ত্রাসীরা সদর উপজেলা যুবদলের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামকে রাধাপুর গ্রামে গুলি করে হত্যা করে।

সম্প্রতি হানিফ মিয়াজিরহাটে মোসলেহ উদ্দিন মুন্না বাহিনীর সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রুবেল হোসেন নামে এক প্রবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। ২৭ মার্চ রাতে একই উপজেলার বশিকপুর গ্রামে যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলমকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

২৮ ফেব্রুয়ারি সোলাইমান উদ্দিন জিসান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে হামলা চালিয়ে ১০টি  দোকান ভাংচুর ও ৭ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। এর আগে চন্দ্রগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের সঙ্গে এ বাহিনীর একাধিকবার বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ১৬ মার্চ রহিমপুর এলাকায় জিসান বাহিনীর সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়।

নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে একাধিক ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ জানান, সন্ধ্যা হওয়ার আগে এসব এলাকার মানুষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতঙ্কে থাকে। চাঁদাবাজি হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে বলেও অভিযোগ করে তারা।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চলের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।’ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এম আলাউদ্দিন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। এই জেলায় নানা বাহিনী আছে। এদের কারণে মানুষ শান্তিতে নেই।’

সক্রিয় অন্তত ২০ সন্ত্রাসী বাহিনী

পুলিশের হিসাবে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী এবং ফেনীতে আছে অন্তত ২০টি সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রায়ই এসব বাহিনীর মধ্যে হয় সংঘর্ষ। তাদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে একাধিক এলাকায় প্রাণ হারিয়েছে সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়নগুলোর দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় পার্শ¦বর্তী লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বাহিনীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে নোয়াখালীর চাটখিলের জনপদ। আর প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে কাটে এ অঞ্চলের মানুষের। আর তাই সূর্য ডোবার আগেই ছোট বাজারগুলোতে নেমে আসে অন্ধকার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে স্থানীয় রাজনৈতিক কয়েকটি গোষ্ঠী ছাড়াও সক্রিয় রয়েছে পার্শ্ববর্তী তিন জেলার জিসান বাহিনী, কাশেম জাহিদি বাহিনী, জসিম বাহিনীসহ ৫টির বেশি বাহিনী। যা স্থানীয় বাহিনীদের সঙ্গে আঁতাত করে গোটা জনপদকে গড়ে তুলছে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে।

হাতিয়ায় জলদস্যু বাহিনীর তৎপরতা

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলসহ মেঘনায় একের পর এক বন ও জলদস্যু বাহিনীর উৎপাত বেড়েই চলছে। জলদস্যুদের উৎপাতে হাতিয়ার চরাঞ্চলে বসবাসরতরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। জলদস্যুদের উপদ্রবে জেলে পরিবারসহ সাধারণ মানুষ দিশেহারা।

মেঘনার জলদস্যুর স¤্রাট বাশার মাঝি, মুন্সিয়া চোরা, কালা বাদশা, ইব্রাহীম ডাকাত ও গেস্যা ডাকাত অধ্যায় শেষ হওয়ার পরপরই নতুন করে শুরু হয়েছে নিজাম অধ্যায়। গত কয়েক দিনে জলদস্যু নিজাম ডাকাত মেঘনা ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে তা-ব চালায়। নিজাম বাহিনী হামলা, লুটপাট, হত্যা, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, ডাকাতি, জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, নারী ধর্ষণ, চর দখলসহ নানা কর্মকা-ে লিপ্ত। এ কারণে উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায় ও সাধারণ ভূমিহীনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপকীলের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ও জলদস্যুদলের উৎপাতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি ও আতঙ্ক নেমে এসেছে। জলদস্যুদের এমন কর্মকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ভূমিহীনদের অনেককেই প্রাণ দিতে হয়েছে তাদের হাতে।

স্থানীয় চেয়ারম্যানদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলদস্যুদের অত্যাচারে ৭ শতাধিক জেলে পরিবার ভিটেমাটি বিক্রি করে হাতিয়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। চাঁদা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ না করে নদীতে জাল ফেলার অপরাধে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে শত শত ভূমিহীন থেকে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৯০ দশকের প্রথম দিকে নদী ভাঙনের কারণে বয়ারচর, নলেরচর, ঢালচর, ক্যারিংচর ও নঙ্গলীয়ারচরসহ বহু নতুন নতুন চর জেগে উঠে। বন বিভাগ সেখানে ম্যানগ্রোভ বনায়ন চাষাবাদ করে। সে সময়ে ওই বনাঞ্চল দখল করে নেয় জল ও বনদস্যুরা। ম্যানগ্রোভ বনায়নের গাছ নিধন করে ভূমিহীনদের থেকে জমি বিক্রি করতে শুরু করে দস্যুরা। ফলে সৃষ্টি হয় উপকূলে দস্যু রাজত্ব। জানা যায়, হাতিয়ায় জেগে ওঠা এসব চরে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার ও ১০ হাজার জেলে পরিবার বসবাস করছে। জলদস্যুরা প্রতিবছর এই ভূমিহীনদের কাছ থেকে ভূমিপ্রতি ৫ হাজার ও জেলেদের নৌকাপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে।

(ঢাকাটাইমস/ ২৪ মে/ এমএম/ জেডএ.)