ঢাকা: তীব্র গরমে হাঁস-ফাঁস করা রাজধানীবাসী খুশি হয় আকাশে মেঘ দেখলেই। বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করলেই একে ওকে জানায় নগরবাসী। কিন্তু এই বৃষ্টি যখন অঝোর ধারায় ঝরে তখন আবার শুরু হয় এক দুর্ভোগ। নগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো নয়, তাই আধা ঘণ্টার ঢলেই সড়কে জমে পানি।
বিভিন্ন অলিগলি আর মূল সড়কগুলোতে যখন চলছে কাটাকাটি, তখন পানি জমা এক বিপদের কারণ। কখন কোন গর্তে কে পড়ে যায় তার নেই ঠিক। আবার পানি জমে গাড়ি বিকল হয়ে সড়কে বাধায় যানজট।
এই সমস্যা এক দিনের নয়। বছরের পর বছর ধরে নগরবাসী ভুগলেও তার যেন কোনো সমাধানই নেই। ওয়াসার দাবি, ধীরে ধীরে সমস্যা কমবে। তবে এর পুরোপুরি সমাধান নেই কারো হাতে।
নগর বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানী ঢাকায় বছরে ৫৬ কোটি ঘনমিটার পানি নিষ্কাশিত হয়। এর মধ্যে ২৩ কোটি ঘনমিটার বৃষ্টির পানি। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই এই পানি জমে বলে তা যথাযথভাবে নিষ্কাশন করা যায় না।
এজন্য শুধু ওয়াসার পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী না করে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং সামগ্রিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন নগর বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম।
ওয়াসার হিসাবে রাজধানীতে পানি নিষ্কাশনের লাইন থাকা দরকার অন্তত ২৬০ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু আছে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার। কোনো কোনো এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা একেবারেই নেই।
ঢাকা ওয়াসার সহকারী পরিচালক কামরুল আলম চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, একদিনে সর্বোচ্চ ২০ মিলিলিটার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা আছে আমাদের। এর বেশি বৃষ্টি হলে মানুষের নানা অভিযোগ মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হলে ঢাকার সব স্টম স্যুয়ারেজ লাইনকে নতুন করে স্থাপন করতে হবে। এটা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদি।
আবার নালাগুলোতে আবর্জনা পড়ে পানি নিষ্কাশনের গতিও কমে যায়। এ জন্য নগরবাসীর অসচেতনতাও দায়ী বলছেন ওয়াসা এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
ঢাকা শহরকে ঘিরে থাকা শতাধিক খালের মাত্র কয়েকটি নামকাওয়াস্তে বেঁচে আছে। বেঁচে থাকা এসব খালেও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এমনভাবে জমা পড়েছে যে, সেগুলোতেও আর পানি প্রবাহিত হয় না। তাছাড়া অধিকাংশ খালও বিভিন্ন সংস্থা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে পানি প্রবাহের পথে স্থাপনা গড়ে তুলেছে।
মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল ওয়াসা পুনরুদ্ধার করেছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। কদিন পর পর খালটি থেকে আবর্জনাও তুলে সরিয়ে নেয় ওয়াসা। কিন্তু দুই দিনের মধ্যেই আবার ভরে যায় আবর্জনায়। এর বেশিরভাই গৃহস্থালী বর্জ্য।
ওয়াসার সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল আলম চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকায় একটি খাল পুনরুদ্ধার কোনো সহজ বিষয় নয়। আমরা তা উদ্ধার করার পর এলাকাবাসীর উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তারা সহযোগিতা না করে নিজেদের ক্ষতি করছে। আমাদের এত লোক নেই যে, সার্বক্ষণিক সেখানে তদারকি করব।’
নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ওয়াসার উচিত লাইনগুলোকে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সচল করা। তিনি বলেন, নতুন নালা ও খাল খনন করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন করতে হবে। ওয়াসার চেষ্টা আছে কিন্তু ঢাকায় যে হারে জনসংখ্যা এবং অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মিত হচ্ছে এ কারণেও সমস্যা হতে পারে।
এই নগরবিদ আরো বলেন, নগরবাসী ওয়াসাকে সহযোগিতা না করলে ওয়াসার একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। খালে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে নগরবাসী বিরত থাকতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/ ০১ জুন/ টিএ/এআর/ ঘ.)