logo ০১ মে ২০২৫
ছাত্রদলে তীব্র অসন্তোষ, চলছে স্বাক্ষর অভিযান
কিরণ সেখ, ঢাকাটাইমস
০২ জুন, ২০১৪ ১২:২৭:৪২
image


ঢাকা: ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। আস্থার সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সংগঠনটির ভেতরে পাল্টা-পাল্টি দুই পক্ষ শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ছাত্রদলের ২৬ জন কেন্দ্রীয় নেতা। আর এদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করছেন সংগঠনের আরো প্রায় ২ শতাধিক নেতা-কর্মী। এই অংশটি চাচ্ছেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে পুনর্গঠন অথবা নতুন কমিটি গঠন করা হউক।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানও শুরু করেছে বিদ্রোহী অংশটি। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ২৬ জন নেতা এতে স্বাক্ষর দিয়েছেন এবং ছাত্রদলের অন্য নেতা-কর্মীরাও এতে স্বাক্ষর দিচ্ছেন। জানা গেছে, এই স্বাক্ষর অভিযান শেষে দাবি দাওয়া সম্বলিত চিঠি বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পেশ করা হবে।অনুলিপি যাবে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির কাছেও। তবে বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল বিষয়টিকে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ হিসাবে আখ্যা দিয়ে শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

ছাত্র দলের এই ২৬ নেতার অভিযোগ, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জেলা কমিটিগুলোর সাথে তাদের কোন সমন্বয় নেই। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কাউকে কোন বিষয়েই অবগত করা হয় না, যে সিদ্ধান্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় তা কেবল সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকই জানেন, অন্যদের অন্ধকারে রাখা হয়। সংগঠনের কাজ, আন্দোলন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কোন বৈঠক ডাকা হয় না, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে সংগঠনটি চালাচ্ছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছাত্রদলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী চেয়ারপার্সনের সাথে বৈঠক করতে চাইলেও কমিটির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।    

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বিল্লাহ হোসেন তারেক এই বিষয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করতে সম্পূর্ণভ ব্যর্থ হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের একটি অংশ আমরা বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত বা পূণর্গঠনের জন্য স্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মেনে নিবো।

তারেক অভিযোগ করেন, বর্তমান ছাত্রদলে স্বেচ্ছাচারি নেতা বেশি। আর এই কারণে তারা কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে না এবং পরামর্শ নেন না।

তিনি জানান, বর্তমান কমিটির বিলুপ্তি ও পূণর্গঠনের কার্যক্রম নিয়ে প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন।

একই বিষয়ে ছাত্রদলের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মেদ মুন্না ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোরকে বলেন, হ্যাঁ বর্তমান কমিটি বাতিল ও পূণর্গঠনের জন্য আমরা স্বাক্ষর অভিযান চালাচ্ছি। কারণ কোন কর্মসূচি গ্রহণ করার আগে ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অন্যান্য নেতাদের সাথে সমন্বয় করেন না এবং তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম টিটু এই বিষয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যারা ছাত্রদলের ভালো চায় এবং সংগঠনকে গতিশীল রাখতে চায় তারা মূলত একটি প্লাটফর্মে একত্রিত হয়েছে। কারণ বর্তমান ছাত্রদল কমিটি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্রদলের নেতারা যাতে কাজে মনোযোগী হয় তারই প্রেক্ষিতে আমরা একত্রিত হয়েছি। তবে এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ছাত্রদলের মিটিং, কমিটি বাতিল ও পূণর্গঠনের বিষয়টিও জড়িত।

ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে কখনো ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা যায় না। ছাত্রদলের কমিটি হবে কি হবে না সেটার সিদ্ধান্ত নেবে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আর আমার জানামতে তারা এখন ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ভাবছেন না। তবে যারা স্বাক্ষর অভিযান চালাচ্ছেন তারা সংগঠনের শৃঙ্খল ভঙ্গ করেছেন এবং তারা সংগঠনের নিয়মের বাইরে চলে গেছেন। এই জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একই বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই বিষয়ে আমি নিজেও অবগত নই। ফলে যে বিষয়ে জানি না সেই বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

ইতোমধ্যেই যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হচ্ছেন-সহ-সভাপতি আবু সাঈদ, বিল্লাহ হোসেন তারেক, তরুণ দে, রাশেদুল ইসলাম তালুকদার রাজু, কামাল আনোয়ার আহমদ, শহিদুল্লাহ ইমরান।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- ফেরদৌস আহম্মেদ মুন্না, তরিকুল ইসলাম টিটু।

সহ-সাধারণ সম্পাদক- ইখতিয়ার রহমান কবির, রাকিবুল ইসলাম রয়েল, খলিলুর রহমান খলিল, গাজী রেজওয়ানুল হক রিয়াজ।

সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক- মাহবুবুর রহমান পলাশ, হুমায়ুন কবির।

সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদুল আলম মিলন, সহ-আপ্যায়ন বিষয় সম্পাদক মিজানুর রহমান সুমন, রেদোয়ানুল হক বাবু, সহ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, গাজী সুলতান জুয়েল, সহ স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আদনান আলম বাবু, সহ মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিয়া, সহ-যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাহামুদ মাসু।

সদস্য- সঞ্জয় দে রিপন, নাসির উদ্দিন শাওন ও স্বপন মন্ডল।

উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রদলের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন এবং সেই বৈঠকে তিনি ছাত্রদলকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করেন। ছাত্রদলও নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে বেগম জিয়া ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে পুনর্গঠনের কথা বলেন। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/ ০২ জুন/ কেএস/এআর/ .ঘ)