চাকরির মেয়াদ বাড়াতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তিনিসহ চার সচিব, এক যুগ্মসচিব ও এক সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে। অভিযো্গ ওঠার পর এ নিয়ে সচল হয়ে ওঠে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ গ্রহণের বিষয়টির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, চাকরিতে যোগদানের সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মাসুদ সিদ্দিকী কোনো কিছু উল্লেখ না করলেও অবসরের আগে আর্থিকভাবে লাভবান এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে বেশকিছু নথিপত্র সংগ্রহ করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা দুদক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী ছাড়াও আরো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব একেএম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ও বর্তমান বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজউদ্দিন মিঞা, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার।
দুদকের উপ-পরিচালক জুলফিকার আলী দীর্ঘ ছয় মাস ধরে অনুসন্ধান করেন।অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় তিনি ৬ আমলার ডোসিয়ার, পিডিএস (পার্সোনাল ডাটাশিট), মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাখিলকৃত সনদ, চাকরিতে যোগদানকালে পূরণকৃত ফরমের সত্যায়িত অনুলিপিসহ সহস্রাধিক পৃষ্ঠার নথি যাচাই করেন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। লিখিত বক্তব্যও দেন কেউ কেউ। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নির্ধারিত চারটি মানদণ্ড বিবেচনায় নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তিন সচিব ও এক যুগ্ম-সচিব কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি বলে প্রতীয়মান হয় অনুসন্ধানে।
এ ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিসরুপ বিদেশিদের দেয়া সম্মাননা পদক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে ইচ্ছেমতো মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।কোনো রকম আবেদন ছাড়াই অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অর্থ অনুদান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে মাসুদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ সিদ্দিকীর বাবা মোহম্মদ আলী সিদ্দিকীর নামে নেত্রকোনার কেন্দুয়াতে প্রতিষ্ঠিত কলেজকে অনুদানের ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তাঁকে এক লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়।গত বছরের ১৭ নভেম্বরেই বিভিন্ন নামে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যে ৩২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ অর্থ দেয়া হয় সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।