logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদে নারীরা
বিলকিছ ইরানী, ঢাকাটাইমস
২৭ আগস্ট, ২০১৪ ২০:৪৪:২৮
image

ঢাকা: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভিএইচসি হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামের একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রেজিস্ট্রেশন ও ট্রেনিংয়ের কথা বলে সহজ সরল মানুষেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের সি ব্লকে নামকাওয়াস্তে অফিস খুলে সারা দেশেই এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।বিভিন্ন অজুহাতে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার আগে মিষ্টি ব্যবহার করলেও টাকা হাতে পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের লোকেরা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করে বলে অভিযোগ রয়েছে।টাকা নেয়ার পর বার বার ট্রেনিং দেয়ার তারিখ দিলেও আসলে কোনো ট্রেনিং করাচ্ছে না তারা।চাকরি পাওয়ার পর কি কাজ করতে হবে কোথায়ইবা তাদের পোস্টিং হবে সে ব্যাপারে কিছুই তাদের জানানো হচ্ছে না।বলা হচ্ছে প্রশিক্ষণের পর সব জানা যাবে।গ্রামের কম শিক্ষিত সহজ সরল নারীদেরকে লক্ষ্য করে প্রতারণার জাল বিস্তার করা হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে।


চাঁদপুরের মতলবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, স্বামীর স্বল্প পুঁজির আয়ে সংসার চলেনা। একমাত্র ১০ বছরের ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় রাতে ঘুম আসেনা চিন্তায়। একে তো স্বল্প আয়, তার উপর ছেলের চিকিৎসা খরচ। পরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেই।


গত ২০ জুন চাকরির বাজার পত্রিকায় ভিএইচসি হেলথ কেয়ার লিমিটেডের নামে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই। ওই কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা অফিস সহকারি, অফিস পরিচালনা, মাঠকর্মী ও ইউনিয়ন সুপারভাইজার পদ দেখে ২৪ জুন ইউনিয়ন সুপারভাইজার পদে আবেদন করেন তিনি। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় নিজ এলাকায় কাজ করা যাবে।


একই এলাকায় স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজে যোগদান করাটাকে নিজের জন্য ইতিবাচক মনে করেন তিনি। তাই ২৮ জুন স্বয়ং চাকরিদাতার ফোন পেয়ে ১ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে ওই প্রতিষ্ঠানের অফিসে যান তিনি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জামানতের বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও তার কাছ থেকে  রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ১৭৫০ টাকা রেখে দেয়। ট্রেনিংয়ের তারিখ পরে জানিয়ে দেয়া হবে বলে প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়।


এ সময় ওই মহিলার বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য চাকরি না পেলে টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করে একটি মানি রিসিপ্ট দেয়া হয়। কম্পিউটারে কালার প্রিন্ট করা আইডি কার্ডও পান তিনি।


এরপর কোনো ফোন না আসলে তিনি একসময় ওই প্রতিষ্ঠানে ফোন করেন। তাকে দুইজন মাঠ কর্মী যোগাড় করে দেয়ার জন্য শর্ত দিয়ে গত ২২ জুলাই চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ট্রেনিং করানো হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু চাঁদপুর সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।


এদিকে সহজ সরল মহিলা দুজন মাঠ কর্মী যোগাড় করে দিলে সেই দুইজনকেও বিকাশে ১৭৫০ টাকা পাঠিয়ে দিতে বলে। তারা অফিসে গিয়ে টাকা দিয়ে আসে। এবং তাদের ২৪ জুলাই কোনো এক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ট্রেনিং করানোর সময় দেয়া হয়।


তাদের কাছ থেকে কোনো ফোন না আসার কারণে তিনি ২২ জুলাই আবার ফোন দেন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন।


চাকরি প্রার্থী ঐ মহিলা ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাদের সময় অনুযায়ী গত ২২ জুলাই ফোন দিলে আজিজুর রহমান নামের একজন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।  আগামী ৬ মাসের মধ্যে যেন তাকে ফোন না দেয়া হয় বলে শাসায়।


একই প্রতারণার শিকার হয়েছেন মতলব এলাকার ফেরদৌসি। সংসারের বড় মেয়ে হওয়ায় তিনি এইচএসসি পাশ করে চাকরি খুঁজছিলেন। ফেরদৌসির বান্ধবী সামসুন্নাহার। তারা দুজন মিলে ওই মহিলার মতো ভিএইচসি হেলথ কেয়ার লিমিটেডে টাকা জমা দেন চাকরির আশায়।  তাদেরকে ২৪ জুলাই ট্রেনিং করানো হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ফোন না আসার কারণে সামসুন্নাহার ও ফেরদৌসি ফোন দিলে তাদের ১৮ আগস্ট ট্রেনিং হবে বলে জানায় হেলথ কেয়ারের লোকজন। এর আগে কয়েক দফা তারা ট্রেনিংয়ের সময় ঘুরাতে থাকে। তাদেরকেও দুজন করে মাঠ কর্মী যোগাড় করে দিতে বলা হয়।


ফেরদৌসি ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি আবেদন করছি অফিস সহকারী হিসেবে। রেজিস্ট্রেশন ও ট্রেনিং এর কথা বলে ১৭৫০ টাকা নেয়। কিন্তু ট্রেনিংয়ের তারিখ এরই মধ্যে বহুবার বদল করা হয়েছে। টাকা নেয়ার আগে আমাকে মাঠকর্মী যোগাড় করতে হবে বলেনি। কিন্তু পরে বলা হয়, মাঠকর্মী যোগাড় করতে না পারলে চাকরি হবে না।


জানা যায়, সামসুন্নাহার, ফেরদৌসি এবং ওই ভুক্তভোগী মহিলার মত শত শত সহজ-সরল মানুষ তাদের এ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।


বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে ভিএইচসি হেলথ কেয়ার লিমিটেডে ফোন করা হলে এই প্রতিবেদকের কাছে অফিস সহকারি মেহেদী হাসান সবকিছু অস্বীকার করেন। ট্রেনিং কবে নেয়া হবে জানতে চাইলে নানা রকম কথা বলে একেকবার একক সময়ের কথা উল্লেখ করেন। প্রথমবার আগামী ১ সেপ্টেম্বর এবং পরে ১ অক্টোবর ট্রেনিং নেয়া হবে বলে জানান।


ভিএইচসি হেলথ কেয়ার লিমিটেডের মূল লোক পরিচয়দানকারী ফয়েজ আহমেদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন পত্রিকার রেফারেন্স দিয়ে হুমকি দেন। আগামী কোরবানি ঈদের আগে ট্রেনিং নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। কারা কারা অভিযোগ করেছেন তাদের নাম ঠিকানা জানতে চান। এছাড়া তিনি নিজেকে একটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দাবি করেন।


এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. আজিজুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ ধরণের অভিযোগ এখনও লিখিতভাবে আমার থানায় আসেনি। তবে অভিযোগ আসলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/ইরা/এএসএ)