logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগ সম্মেলন
সেক্রেটারি পদে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ডা. মিল্লাত, সভাপতি কে?
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০৪ নভেম্বর, ২০১৪ ১৫:২৪:১৫
image


ঢাকা: ‘শুধু কমিটি নয়, অভিভাবক চাই। দীর্ঘদিন সংগঠন চলছে অভিভাবকহীন। আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা যেন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেন, সুখে দুঃখে পাশে থাকেন এটাই চাওয়া। দলের মধ্যে আলাদা বলয় তৈরি করে রাজনীতির নজির আর দেখতে চাই না।’ অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদরের আওয়ামী লীগ কর্মী শাহজাহান আলী। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরেই সরব হয়ে উঠেছেন জেলার অনেক নিরব নেতা। প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না নামলেও কমিটির শীর্ষ পদ পেতে ভেতরে ভেতরে চলছে জোর তদবির। সমর্থন আদায়ে দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের দরবারেও। তৃণমূলের সঙ্গেও যোগাযোগ-সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা।

জেলার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে যারা সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন নেতৃত্ব তাদের হাতেই তুলে দিতে চান নেতাকর্মীরা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পাশাপাশি দলের প্রতি আন্তরিক ও কর্মীবান্ধব নেতাদের সামনে নিয়ে আসতে চান তারা। সেই বিবেচনায় পদ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন নবীনরা। একই সঙ্গে, বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থেকে যারা দুর্নাম কুড়িয়েছেন, তাদেরকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। ক্ষমতায় থাকতে নিজের বলয়ের বাইরে কাউকে মূল্যায়ন করেননি, এমন নেতাদের দেখে নেয়ার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য অনেকের।

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে সভাপতি পদ পেতে একাধিক নেতা কেন্দ্রে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। অতীতকে পেছনে ফেলে নিজেকে তুলে ধরছেন সাদা মনের মানুষ হিসেবে। নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউনও দিচ্ছেন পাড়ায় পাড়ায়। কিন্তু রাজনীতির সমীকরণে প্রবীণদের চেয়ে নবীণরা আছেন এগিয়ে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব খোলনলচে বদলে দিতে চান নেতাকর্মীরা।

সভাপতি পদ নিয়ে দড়ি টানাটানি থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদের নেতৃত্ব প্রায় নিশ্চিত বলেই জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা হিসেবে এ পদের জন্য প্রায় সবার পছন্দ সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নাকে। সাধারণ সম্পাদক পদে জেলায় দক্ষ ও কর্মী অন্তপ্রাণ এই নেতার বিকল্প নেই বলে মনে করে দলের শুভাকাক্সিক্ষরা। তাছাড়া ২০০৯ সালের পর থেকে দীর্ঘসময় সিরাজগঞ্জবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থেকে মনজয় করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা এই সময়কে বলেন, ‘ডা. হাবিবে মিল্লাত নিজের সদর এলাকার বাইরেও জেলার অন্যান্য উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের মানুষের পাশে থেকেছেন। প্রায় প্রতিটি গ্রামে গেছেন। সাংগঠনিক সভা-সমাবেশেও নিয়মিত পাওয়া গেছে তাকে। নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা সিরাজগঞ্জের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করছেন। গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য ক্যাম্প করে দুস্থ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এসব কারণে কম সময়ে মানুষে মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন ডা. মিল্লাত।’ তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে জেলার ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগ আবার গাঁ ঝারা দিয়ে উঠে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল এই নেতা।           

জানতে চাইলে হাবিব মিল্লাত এই সময়কে ডটকমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। দেশে ফিরেছি মানুষের সেবার জন্য। শুরু থেকেই সিরাজগঞ্জের মানুষের পাশে ছিলাম। এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।’ শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উত্তরবঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চান তিনি। ডা. মিল্লাত বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাকেই সমর্থন দেবেন। তাদের সমর্থনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।’

সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আছেন যারা

সাধারণ সম্পাদক পদে যেমন একক প্রার্থী, সভাপতি পদে তার চিত্র পুরোপুরি বিপরীত। একাধিক নেতা আগ্রহী এই পদের জন্য। এদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের অকুণ্ঠ সমর্থন আছে তার পেছনে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা সিরাজগঞ্জের নতুন কমিটিতে গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চান। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সুনজর আছে গোলাম কিবরিয়ার প্রতি। যদিও সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগে সাবেক আমলা এইচ টি ইমাম খুব বেশি দাপুটে কেউ নন বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকতে সততা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন গোলাম কিবরিয়া। কিন্তু দলীয় কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করেননি তিনি। যে কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে তাকে ঘিরে আছে চরম অসন্তোষ।

সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আছেন সাবেক মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসও। তবে নিজের নির্বাচনী এলাকা বেলকুচি ও চৌহালীর বাইরে সিরাজগঞ্জে তার রাজনৈতিক অবস্থা অনেকটা নড়বড়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, মন্ত্রী থাকতে নিজ এলাকার বাইরে কাউকেই পাত্তা দিতেন না তিনি। মন্ত্রী থাকতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির নানা অভিযোগের কারণে তার ওপর খুশি নন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাছাড়া বয়সও হয়েছে বেশ।

গত জুলাইয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লতিফ বিশ্বাস। তার অনুগামী, অনুসারীদের দাবি, কেন্দ্রের সুনজর আছে লতিফ বিশ্বাসের প্রতি। যে কারণে জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।

বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কে এম হোসেন আলী হাসানও চান সভাপতি হতে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন তিনি। তবে দুর্নীতি, অনিয়মের ঢের অভিযোগ আছে এই নেতার বিরুদ্ধে। যে কারণে ভাবমূর্তি সংকটে আছেন তিনি। তবে হোসেন আলী হাসানের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ আছে বলে দাবি করেন তার ঘনিষ্ঠরা। তিনি সভাপতি হলে দল আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন তারা। যদিও মোহাম্মদ নাসিম ও এইচটি ইমাম দুজনের কেউই চান না নতুন কমিটিতে থাকুক হোসেন আলী হাসান।  

জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খানও ভেতরে ভেতরে সমর্থন জোগাচ্ছেন। সভাপতি হতে চান তিনিও। যদিও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ-সম্পর্ক নেই তার। গত পাঁচ বছরে সব মিলিয়ে ১৫ দিনও তিনি সিরাজগঞ্জে থাকেননি। খোঁজ নেননি নেতাকর্মীদের। সব সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মনযোগানোর চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন এসব তথ্য।

দলীয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম খানের পরিবারের সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধুর সম্পর্ক আছে। বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন ইসলাম খান সম্পর্কে তার চাচাতো ভাই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, কাউন্সিলররা যাকে ভোট দেবেন তারাই জেলার নেতা হবেন। এখানে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে এক সময় বিএনপির প্রভাব ছিল বেশি। কিন্তু গত ছয় বছরে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে আগের চেয়ে আওয়ামী লীগ আরও শক্ত অবস্থানে আছে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিতর্কিতরা নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাবে না বলে আশা করছি।’

দৌড়ঝাঁপে অন্যরাও

জেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেও জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন তরুণ নেতারা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলে আস্থা পেতে চালাচ্ছেন জোর তদবির। এদের মধ্যে আছেন কাজিপুরের সাবেক সংসদ সদস্য তানভির শাকিল জয়, শাহজাদপুরের সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু, উল্লাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মারুফসহ সাবেক ছাত্রনেতারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, অতীতে যারাই দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তাদের বেশির ভাগই প্রবীণ। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সংগঠনের নেতৃত্ব ধরে রাখতে অনেকে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকের স্বজনপ্রীতির মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছি। তাই ভবিষ্যতে তরুণদের নেতৃত্বের সামনের সারিতে নিয়ে আসা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/ ৪ নভেম্বর/ এইচএফ/ঘ.)