logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
অনিশ্চয়তায় উপজেলা সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন

বিলকিছ ইরানী
০৬ নভেম্বর, ২০১৪ ১৪:৩৪:২২
image


চতুর্থ উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন এখনো অনিশ্চতায় রয়ে গেছে। বারবার  তারিখ নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়। কয়েকটি ধাপে নেওয়ার পর ১৯ মে শেষ ধাপের মধ্যদিয়ে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়। এরপর নানা সহিংসতায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু উপজেলার নির্বাচন নেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার ৫ মাস চলে গেলেও এখনো সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন নিতে পারেনি ইসি। কবে নাগাদ এ নির্বাচন নেওয়া হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ইসি। তারিখ নিয়ে বারবার সিদ্ধান্তহীনতায় অনেকের মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। নির্বাচন আদৌ হবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অনেকে। এমনকি খোদ ইসি কর্মকর্তারাও সন্দেহ প্রকাশ করছে।

ইসির এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ডিসেম্বরের শেষ কিংবা জানুয়ারির শুরুতে চতুর্থ উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কবে নাগাদ এ নির্বাচন হবে তা নিয়ে খোদ কমিশনারদের মধ্যেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। যার ফলে তফসিল ঘোষণা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। যখনই নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা হয় তখনি একটা না একটা সমস্যা চলে আসে। আর সে সব সমস্যা সমাধানে নির্বাচন কমিশনকে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। এ কারণে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে পারছে না ইসি। এদিকে নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে দেওয়া তিনদিনের হরতালও এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ইসি সূত্র সংরক্ষিত নারী আসনে ঈদুল আজহার পরপরই নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানায়। কিন্তু সীমানা বিরোধ নিরসন সংক্রান্ত সব গেজেটের কপি ইসির হাতে না আসায় এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। এরপর চার শতাধিক উপজেলার মধ্যে ৩৫১টির  সীমানা ও এলাকা নির্ধারণের গেজেটের কপি নির্বাচন কমিশনের হাতে পৌঁছায়। বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে চলে আসবে বলে ইসি আশা করছে।

পরবর্তী সময়ে দেখা দেয় সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত সমস্যা। ইতোমধ্যে ৩৫১ উপজেলার ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হলেও বাকিগুলোর তথ্য এখনো কমিশনে না আসায় সে সব উপজেলায়ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, আসলে অনিশ্চয়তার তেমন কিছু নেই। নির্বাচন হবে। তবে ৩৫১  উপজেলায় ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে এসব উপজেলায় নির্বাচন করা হবে। আর বাকি উপজেলাগুলো থেকে তথ্য আসার অপেক্ষায় আছে কমিশন।

এদিকে ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফরহাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, আগামী জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারিতে এ নির্বাচন হতে পারে। তবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে এখনো নিশ্চিত নই। সামনে জেএসসি, পিএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষার রুটিন দেখে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে যেভাবে ধাপে ধাপে নেওয়া হয়েছিল সেভাবেই নেওয়া হবে।

জামায়াতের দেওয়া চলমান হরতালের কারণে পরীক্ষা পেছালে নির্বাচনও পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানান কর্মকর্তারা। তবে অনেকে ধারণা করছেন, তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি নানা জটিলতার কারণে। এবার সেসব জটিলতা ইসি নিরসন করলেও কিছু কিছু জটিলতার কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ এ নির্বাচন হবে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

উল্লেখ্য, এই প্রথম উপজেলা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইসি। এতে এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রায় দেড় হাজার নারী জনপ্রতিনিধি প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে।

এর আগে তৃতীয় উপজেলা পরিষদের ৫ বছর মেয়াদে সংরক্ষিত নারী পদে নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয়েছিল। আইনি জটিলতার কারণেই তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তা সম্ভব হয়নি বলে ইসি জানায়।

নির্বাচনী আইনে সংরক্ষিত নারীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা তখন মানা হয়নি। সারা দেশে ‘পরোক্ষ ভোটে’ ৪৮৭ উপজেলায় সংরক্ষিত নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রয়েছে। নির্বাচন না হওয়ায় এতে প্রায় ১ হাজার ৫শ নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

উপজেলা পরিষদের আইন অনুযায়ী, প্রতিটি উপজেলার এলাকাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার (যদি থাকে) মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের সমসংখ্যক আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যারা উক্ত উপজেলার এলাকাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার (যদি থাকে) সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য বা কাউন্সিলরগণ কর্তৃক তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।

বিধান অনুযায়ী, উপজেলাতে ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থাকলে নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত আসন হবে ৪টি। ইউপি/পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরাই সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটার এবং প্রার্থী হতে পারবেন।

(ঢাকাটাইমস/৬নভেম্বর/ইরা/টিএ)