ঢাকা: লাল মুক্তিবার্তায় তার নাম আছে। নিজ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমান্ডের যাবতীয় রেকর্ডপত্রও বলছে তিনি মুক্তিযোদ্ধা। নিয়ম মেনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদ পেয়েছেন শেখ হিমায়েত হোসেন। একাধিক তথ্য প্রমাণের পরও পুলিশের এই অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে অসত্য প্রচারণা চলানোর অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা তালিকা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত সনদ ছাড়া অন্য সকল গেজেটভুক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সঠিকতা নির্ণয়ের বিষয়টি পুনরায় উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ২৪ তম সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল সম্পাদিত লাল মুক্তিবার্তায় দেখা যায়, অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেনের নাম সেখানে রয়েছে। তার নামের পাশে বাবা শেখ মো. আফিজ উদ্দিনের নামও আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই তালিকায় তার নম্বর-০১০৮০৩০৩১২। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) প্রধান শেখ হিমায়েত হোসেন ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার বড়ভাগ গ্রামের ৪ নং টগরবন্দ ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। মুক্তিবার্তার তথ্যও বলছে সেই কথা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হিমায়েত হোসেনের বাবাও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা সনদও আছে তার। সনদ নম্বর ২৬৪০১। শেখ হিমায়েত নিজেও একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলা কমান্ডের মুক্তিযোদ্ধা চূড়ান্ত ভোটার তালিকাতেও তার নাম আছে। এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যাচাই প্রতিবেদনেও তার সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের একাধিক নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি গোষ্ঠী শেখ হিমায়েত হোসেনের ব্যাপারে অসত্য তথ্য প্রচার করছে। সামাজিকভাবে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় নথি বলছে তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
সম্প্রতি দু-একটি দৈনিকে শেখ হিমায়েত হোসেনকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। যেখানে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক অতিরিক্ত আইজিপি হিমায়েত হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক যাবতীয় নথি চেয়েছে। অথচ শেখ হিমায়েত হোসেন জানান, দুদক থেকে (গত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত) তিনি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি। তাকে ডাকাও হয়নি। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমার ব্যাপারে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। আমার পদমর্যাদাসহ বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছে।’ আলফাডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আবু হোসেন তালুকদার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। একই অভিমত দেন মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন।
পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা শেখ হিমায়েত হোসেন বলেন, ‘কারো ভাল কেউ সহ্য করতে পারে না। সমাজে প্রত্যেক মানুষের কম বেশি শত্রু পক্ষ রয়েছে। তারা সব সময়ই প্রতিপক্ষের অমঙ্গল চায়। আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সরকারের যাবতীয় দলিলপত্র ও নথিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম রয়েছে। তাছাড়া আমার গ্রামের মানুষও সাক্ষী দেবে আমার বাবা ও আমি দুজনেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। এনিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই।’
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সম্প্রতি যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার যে রেওয়াজ চালু হয়েছে তাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ঢাকা জেলা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার মো. আবু সাঈদ মিয়া বলেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কখনও সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে যুদ্ধ করেনি। রাষ্ট্র অনেকদিন পরে হলেও তাদের যথাযথ সম্মান জানাচ্ছে। তাদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে নানা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এখন হিংসাবশত কেউ কেউ যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ নিয়ে বা অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তা দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে যারাই অভিযোগ তুলবেন তাদের সহজেই ছেড়ে দিলে চলবে না। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হয় তবে অবশ্যই অভিযোগকারীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানহানীর চেষ্টার কারণে তার বিচার হওয়া উচিত।’
(ঢাকাটাইমস/ ১৪ নভেম্বর/ এইচএফ/ঘ.)