ঢাকা: কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে বক্তব্য বা কথা না বলতে নির্দেশনা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে। এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের সব দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে চিঠি দেয়া হবে। যেখানে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার দরকার নেই। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো দলের হয়ে নয়।’ তিনি কর্মকর্তাদের দেশের হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের সব দপ্তর ও সংস্থায় এ ব্যাপারে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম বলেন, ‘সরকারের উচ্চ থেকে থেকে নিম্ন পর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী হচ্ছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। যে সব সরকারি কর্মকর্তা সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তারা প্রজতন্ত্রের কর্মচারীর আচরণ বিধি ভঙ্গ করছেন। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা সরকারের আদেশ নির্দেশ পালন করবেন, এটাই নিয়ম।’
একই সুরে কথা বললেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মচারীকে চাকরির ভেতরে ও বাইরে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এ নিয়মানুবর্তিতাই মেনে চলা উচিত। কোড অব কন্ডাক্টে এটা বলা আছে। সেই অনুযায়ী তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কখনই রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে চলতে সবাইকে বলা হয়েছে।’
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আচরণ বিধি অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিতে পারবেন না। তারা জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সংস্থা বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো নির্বাচনে নিজে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করতে, ভোটারদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা, নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে তিনি যে এলাকার ভোটার ওই এলাকায় ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা করে ওই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া কোনো কর্মচারী রাজনৈতিক দলের নীরব সমর্থক হতে পারেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই এ সমর্থনের বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারেন না এবং সরকারি কাজেও এর কোনো প্রতিফলন ঘটানো যাবে না।
সরকারের সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা এখন দলকানাদের মতো আচরণ করেন। প্রকাশ্যে দলীয় বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে বেড়ান। চাকরিতে পদোন্নতি ও বদলিতে সরকারের আনুকূল্য পেতে তাদের এই আচরণ মোটেও কাম্য নয়। তাদের মনে রাখতে হবে তারা কোনো দলের নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সেভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন ও কথা বলা উচিত।’
(ঢাকাটাইমস/ ৩০ জানুয়ারি/ এইচআর/ এইচএফ/ঘ.)