ঢাকা: প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত। বৃহস্পতিবার না হলে আগামী সপ্তাহে যেকোনো দিন প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। জনপ্রশাসনে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রশাসনে প্রায় ৭০০ কর্মকর্তাকে এবার পদোন্নতি দেয়া হতে পারে। বরাবরের মতো এবারও পদোন্নতি-বঞ্চিতদের সংখ্যাটাই বেশি। পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য প্রায় এক হাজার ৭০০ কর্মকর্তার মধ্যে ১০০০ জনই বাদ পড়ছেন। অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। সে বিষয়টি নিয়ে সরকারও ভাবনায় আছে। একারণে গত দুই বছর থেকে পদোন্নতি চূড়ান্ত করতে পারেনি প্রশাসন।
অবশেষে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার সভাপতিত্বে তিন স্তরের পদোন্নতির জন্য এসএসবির (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) বৈঠকের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হয়। একাধিক বৈঠকের পর গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভা শেষে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন স্তরের পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করতে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রশাসনে তিন স্তরের পদোন্নতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভুইঞা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিঢোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে পদোন্নতির বিষয়ে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একটু কাজ বাকি রয়েছে, সেটি হয়ে গেলেই পদোন্নতির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একাধিকবার বঞ্চিত হওয়া কিছু কর্মকর্তা এবার পদোন্নতি পাচ্ছেন। এসব কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ দিকে হওয়ায় সম্মানের জন্য তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এবার উপ-সচিব পদে প্রায় সাড়ে ৩০০, যুগ্ম সচিব পদে প্রায় ২০০ এবং অতিরিক্ত সচিব পদে প্রায় ১৫০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তারা বলেন, পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় প্রতিবার পদোন্নতির পর অনেক বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা বঞ্চিত হন। ফলে এসব কর্মকর্তার মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এবার এক সঙ্গে তিন স্তরের পদোন্নতি হওয়ায় বঞ্চিতদের তালিকাটা বড়। বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি হচ্ছে না। আর যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদেরও পদোন্নতি প্রয়োজন।
সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ১০, উপ-সচিব পদে ৩ এবং যুগ্ম সচিব পদে ২ বছর চাকরি করার পর পদোন্নতি পাওয়ার কথা, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে তা হয় না। বঞ্চিত হওয়ার কারণে কাউকে কাউকে চাকরি জীবনে একটি বা দুটি পদোন্নতি নিয়েই অবসরে যেতে হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এস এম আলী কবির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৭-৮ বছর ধরে পদোন্নতি-বঞ্চিতদের তালিকা বাড়ছে। এর কারণ হলো পদের চেয়ে পদোন্নতি প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে এখন প্রশাসনে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্যের মূল্যায়ন বেশি হয়, যে কারণে মেধাবী কর্মকর্তারা কাজ করতে উৎসাহ পান না। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রশাসন।
সর্বশেষ গত বছরের ১৩ জানুয়ারি যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে ৮০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পান। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর উপ-সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে ৮০ এবং একই বছরের ১৪ মার্চ সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপ-সচিব পদে ১৮২ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে উপ-সচিবের নিয়মিত (ডিউটি) পদ রয়েছে ৮৩০টি। কিন্তু বর্তমানে উপ-সচিব আছেন এক হাজার ২৮৬ জন। যুগ্ম সচিবের পদ রয়েছে ৪৩০টি, তার বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৯১৫ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১০৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৫৫ জন। আর ২৭০০ সিনিয়র সহকারী সচিব পদের বিপরীতে রয়েছেন ১৭০০ জন। প্রশাসনে নিচের স্তরের কর্মকর্তার স্বল্পতা রয়েছে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে কয়েক দফায় প্রায় দুই হাজার ৭০০ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের মোট কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এইচআর/জেবি)