logo ১৯ মে ২০২৫
ত্বকী হত্যা: আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
০৩ মে, ২০১৫ ২০:৪৭:০৬
image

নারায়ণগঞ্জ: সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা ও প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে ‘জজ মিয়া’ নাটক তৈরির অপচেষ্টাকারীদেরও একদিন বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।


রবিবার বিকালে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।


প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরির জন্য সম্প্রতি এ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ওসমান পরিবার তাদের অনুগত সংবাদকর্মীদের নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের পুরোনো কিছু কথা দুই বছর পরে আজ নতুন করে উপস্থাপন করে তারা এ হত্যায় “জজ মিয়া নাটক” তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ থেকে অভিযুক্ত পরিবারটিকে রক্ষায় যে এ মিশন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


ওসমান পরিবারের কিছু বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ত্বকী মঞ্চ তাদের অবস্থান বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কতিপয় সংস্থার তদন্তে ত্বকী হত্যা নিয়ে কতকগুলো অসংগতি উঠে এসেছে বলে দাবি করেছে ওসমান পরিবার। এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোন সংস্থা নতুন করে এখন ত্বকী হত্যা নিয়ে তদন্ত শুরু করল?


সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট থেকে র‌্যাবকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়ার পর এর বাইরে কোনো সংস্থাই তদন্ত করছে না এবং করার সুযোগও নেই। সুতরাং এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর র‌্যাবের পক্ষ থেকে ‘আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন ত্বকীকে হত্যা করেছে’ বলে জানানোর পর আর নতুন কোনো তথ্য হাজির করা হয়নি।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার প্রশ্ন তুলেছে র‌্যাবের অভিযানে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে পাওয়া প্যান্টটি ত্বকীর হলে, লাশ উদ্ধারের সময় ত্বকীর পরনে প্যান্ট এল কী করে?’


এ ব্যাপারে মঞ্চের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে পাওয়া প্যান্টটিকে কখন কে বলেছে ওটা ত্বকীর প্যান্ট। এটি যেমন ত্বকীর পরিবারের পক্ষ থেকে কখনো বলা হয় নাই, তেমনি অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের পক্ষ থেকে কখনো তা বলা হয় নাই। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে “রক্তমাখা প্যান্ট”। আর এ মামলার বাদী ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বরাবরই বলেছেন, ত্বকীর পরনে ত্বকীর প্যান্টই ছিল। আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে পাওয়া রক্তমাখা প্যান্টটি ত্বকীর নয়। শুধু শামীম ওসমানই শুরু থেকে ওই প্যান্টটিকে ত্বকীর প্যান্ট বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’


ত্বকী হত্যা মামলায় ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমরের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি ভিন্নতর বলে ওসমান পরিবার বলছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।


বিজ্ঞপ্তিতে ত্বকী মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘উভয়ের জবানবন্দিতেই হত্যার ধরন ও হত্যাকারী হিসেবে যাদের নাম এসেছে তা অভিন্ন। উভয়ের জবানবন্দিতে লিটন, ভ্রমর, কালাম শিকদার, রাজিব, কাজল, শিপন, জ্যাকি, মামুন, অপু, ড্রাইভার জমশেদের নাম এসেছে। এরা সবাই ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত।


ভ্রমর তার জবানবন্দিতে বলেছে, টর্চার সেলে আজমেরীর নির্দেশে ও নেতৃত্বে তারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। লিটন তার জবানবন্দিতে আজমেরীর নাম উল্লেখ করে নাই। কেন করে নাই তা বের করার দায়িত্ব তদন্তকারী সংস্থার। আর জবানবন্দি কখনোই একজনের সঙ্গে অপর জনেরটা হুবহু মিল হয় না। ঘটনার সত্য বের করবে তদন্তকারী সংস্থা—কখনোই অভিযুক্ত ব্যক্তি বা পরিবার নয়।’


প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নতুন করে ত্বকী হত্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে কোনো লাভ হবে না। এ সব করে ত্বকী হত্যার বিচার বিলম্বিত করা গেলেও কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যাবে না। আমরা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জানতে চাই, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ত্বকী হত্যায় নেতৃত্বদানকারী হিসেবে আজমেরী ওসমানের নাম এলেও প্রকাশ্যে ও আপনাদের সামনে ঘুরে বেড়াতে পারেন কীভাবে? দ্রুত তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার এবং ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি। ত্বকী হত্যা নিয়ে কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। এ হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া অথবা “জজ মিয়া নাটক” তৈরির অপচেষ্টাকারীদেরও একদিন বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।’


(ঢাকাটাইমস/৩মে/এমআর)