ঢাকা: মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রে দেশের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির লোকজনকে টার্গেট করে বলে জানিয়েছেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
আজ সোমবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের আট সদস্যকে আটক করে র্যাব।
আটককৃতরা হলেন, মতিন মিয়া (৪৭), জাহাঙ্গীর আলম বাবু (৪৫), আবুল হোসেন (৮১), নূর ইসলাম (৩০), রেজাউল করিম সোহেল (৩১), তৈয়ব আলী (৪৮), বেল্লাল হোসেন (৩৬) ও আবুল হোসেন (৩৬)।
আটকের পর সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান জানান, চক্রটি তাদের দালাল, এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির লোকজনকে কৌশলে প্রভাবিত করে। প্রবাসে উন্নত জীবনযাপনের কথা বলে জাল ভিসা সরবরাহ করে। এরপর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের অবৈধপথে বিদেশে প্রেরণ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও লিবিয়াতে লোক পাঠিয়ে থাকে। চক্রের কিছু সদস্য আকাশপথে বিমানবন্দরে কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিদেশে মানবপাচার করে থাকে। কেউ কেউ আবার স্থলপথে ভারত ও নেপাল হয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এই অবৈধপথে গমনকারী অভিবাসীরা কেউ সমুদ্রযাত্রায় বা সীমান্ত অতিক্রমের সময় মৃত্যুবরণ করে। অন্যদিকে দেশের বিমানবন্দর পার হলেও বিদেশে পৌঁছার পর বিমানবন্দরে পাসপোর্টে জাল ভিসা সংযুক্তির কারণে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাস ভোগ করে।
তিনি জানান, র্যাব-৩ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মতিঝিল থানার উত্তর কমলাপুর ও পল্টন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের ওই আটজন সদস্যকে আটক করে। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৬৩৫টি বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট, ২২৬৫টি বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা, ৯২৯টি জাল ভিসার স্টিকার, হলোগ্রাম, ৫১টি লিবিয়া ভিসা হলোগ্রাম, ৪১১টি বাংলাদেশি পাসপোর্টের ভিসার পাতা, ১২টি ভিসা এনডোর্সমেন্ট, ৮৭টি এনডোর্সমেন্ট ব্লাংক, চারটি নেপালের টুরিষ্ট জাল ভিসা, ৫২টি বিভিন্ন দেশে ভিসার ট্রেস্ট পেপার, ২৫ বান্ডেল ভিসার তৈরির পেপার, দুই পাতা মোজাম্বিকের ভিসার হলোগ্রাম, পাঁচ সেট ভিসা আবেদন ফরম, ১২টি ভারতের ভিসা আবেদন ফরম, ২৫টি ভারতে ই-টোকেন পেপার, ১৪২টি নেপালের এ্যারাইভাল স্টিকার, ১৩টি ধারাবাহিক ডিস্চর্জ সনদ (কভার), ৩২৫টি মেডিক্যাল ফিডকার্ড, ১০৬টি মেডিকেল সার্টিফিকেট, তিনটি ডিসচার্জ সনদ ব্লাংক, ১৯টি ধারাবাহিক ডিসচার্জ সনদ, দুইটি বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড, ৪১০টি ভিসা পিন পোপা, চারটি হলোগ্রাম ডাইস, ৬৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেকের পাতা, ৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা কার্ড, ৭৯টি বিভিন্ন ব্যাংকের সিল, ১০৮টি বিভিন্ন দেমের ভিসা ইমিগ্রেশন এবং এয়ারপোর্ট সিল, একটি বিভিন্ন দেশের ভিসা চেকিং লাইট, একটি বিভিন্ন দেশের ভিসার স্ট্যাম্প, দুইটি ডায়েরিতে বিভিন্ন দেশের ভিসার নমুনা, এক প্যাকেট লিবিয়া রাস্ট্রের স্টিকার ফয়েল, একটি ডলার এনডোর্স মেশিন, দুটি সিলের আউটপুট পেপার, পাঁচটি ভিসার আউটপুট পেপার, ১৭টি বিমানের টিকিট কভার, দুটি স্কিন বোর্ড, একটি লোহার তৈরি কাটার মেশিন, সাতটি বড় ছোট ভিসার ডাইস, ১৬টি ভিসা লেখার ছোট বড় স্কিন, এক বান্ডেল ফয়েল স্টিকার পেপার, ৩০টি ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্ট কোম্পানির কার্ড, ২১টি স্ট্যাম্প প্যাড, ১২টি অটো সিল, ২টি ট্রেড লাইসেন্স বই, একটি ম্যাগনিফাইড গ্লাস, দুটি এ্যাম্বুস মেশিন, একটি কার্ড পাঞ্চ করার মেশিন, একটি পেপার কাটার যন্ত্রাংশ, ১২টি পোস্টার কালার, বিভিন্ন কালার কালি, একটি রোলার, পাঁচ প্যাকেট গ্লাবস, দুই প্যাকেট লেমেনেটিং পেপার বক্স, একটি লেমেনেটিং মেশিন, একটি ল্যাপটপ, চারটি স্ক্যানার, চারটি সিপিইউ, ছয়টি মনিটর, একটি কী বোর্ড, ১০টি প্রিন্টার, এক প্যাকেট প্রিন্টারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, আট প্রকার ক্যাবল, দুটি কী বোর্ড, একটি ইউপিএস, নগদ এক লাখ ২৮ হাজার টাকা, একটি লাল কালারের প্রাইভেটকার (যার মডেল নম্বর নিশান জুকি, রেজি নম্বর-চট্রঃ মেট্রো-ঘ-১১-১৮৮০) এবং চারটি গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/এএ/জেবি)