logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
থেমে আছে অভিজিৎ-দীপন হত্যা মামলার তদন্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২১:০৯:৪৮
image



ঢাকা: বছর ঘুরে আবার বসেছে অমর একুশে বইমেলা। গত বছরের এই বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়।  কিন্তু এক বছরেও শেষ হয়নি এই মামলার তদন্ত। বরং পুলিশ বলছে, ডিএনএ (ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টেস্ট রিপোর্ট না পাওয়ায় মামলার তদন্ত থেমে আছে।






এদিকে জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার তদন্তেও অগ্রগতি নেই। সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেছে এখনো এই হত্যার কোনো সূত্র (ক্লু) বের করতে পারেনি গোয়েন্দারা।  






আলোচিত দুই হত্যা মামলার তদন্তের এই বেহাল দেখে হতাশ দুই পরিবারের সদস্যরা।






অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের করা মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।  তদন্তে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ ঘুরে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।  






নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছে। এফবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা আলামতের ডিএনএ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্যান্য প্রতিবেদন এখনো পুলিশের কাছে আসেনি। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আটজনের ডিএনএর সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ায় তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি হচ্ছে না।






জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মামলায় ইতিমধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।






মামলার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অভিজিৎ রায়ের বাবা ড. অজয় রায় ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ায় দুঃখ এবং হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কী আছে। মাঝেমধ্যে ডিবি অফিসে খোঁজ নিতে যাই। কিন্তু তারা তেমন একটা এন্টারটেইন করতে চান না। তারা শুধু বলেন, তদন্ত চলছে, দেখছি। আমাকে কোনো তথ্য দেয়ার বিষয়েও তারা খুব একটা আগ্রহ দেখান না।”






গত বছরের ২৬ ফেব্রয়ারি রাতে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসংলগ্ন এলাকায় অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী রাফিদা আহমেদ বন্যা। এ ঘটনার তদন্তে নেমে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি দাবি করেছিল, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।






১৮ আগস্ট এ হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনের দাবি করে র‌্যাব। তখন র‌্যাব জানায়, অভিজিৎ রায়কে হত্যার নির্দেশ আসে কারাগার থেকে। এবিটির প্রতিষ্ঠাতা মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী কারাগার থেকে তার ভাই আবুল বাশারের মাধ্যমে ওই নির্দেশ পাঠান। কিন্তু ছয় মাসেও জানা গেল না আবুল বাশারের অবস্থান কিংবা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এবিটির সম্পৃক্তার আর কোনো খবর। 






এদিকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেতে পারেনি পুলিশ।  এমনকি সাড়ে তিন মাস বেশি  পেরিয়ে গেছে,  মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।






ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, “দীপন হত্যার বিষয়ে কথা বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। যেমন ছিল, তেমনই আছে দীপন হত্যা মামলার তদন্তকাজ। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। আর কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।”






নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত দীপন হত্যা মামলার তদন্তে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েও তেমন কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সন্দেহভাজন গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ওপর ভরসা করা হচ্ছে। কোনো আসামি ধরা পড়লে, তাদের এনে প্রথমে এসব হত্যাকাণ্ডের কথা জিজ্ঞেস করা হয়। কিন্তু জেএমবি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের যে-ই হোক না কেন, কেউ ওই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেনি।






গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিকালে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে খুন হন ফয়সল আরেফিন দীপন। এর দুই দিন পর শাহবাগ থানায় মামলা করেন তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া সুলতানা। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য শাহবাগ থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। সেটি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।






এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীপন হত্যা মামলায়  কেউ গ্রেপ্তার নেই। তবে তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে।






দীপন হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তার বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক  বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে না। কারণ বিচার করতে গেলে তথ্য-প্রমাণ থাকতে হয়। কিন্তু দীপন হত্যার কোনো তথ্য-প্রমাণ পুলিশের কাছে নেই। তারা তদন্তকাজ সঠিকভাবে করছেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।”






দীপন হত্যা মামলার বাদী রাজিয়া রহমান বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। পুলিশ এ বিষয়ে কথা  বলবে।” মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে তা কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি।






 অভিজিৎ রায় ও দীপন হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, “দুটি মামলাতেই তদন্তের ক্ষেত্রে প্রথম থেকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল, এখনো সেভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হত্যা রহস্য উন্মোচনের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।”






(ঢাকাটাইমস/১১ ফেব্রুয়ারি/এএ/মোআ)