ঢাকা: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন দলের নেতারা।
তবে দলের নানা কমিটির ও গঠনতন্ত্রে কিছু যোগ-বিয়োগ ছাড়া বিশেষ কোনো চমক থাকছে না কাউন্সিলে।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে উদ্বোধন হবে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির কাউন্সিল।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জেরবার দলটির কাউন্সিলে বিশেষ কোনো চমক না থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর বাড়ানো, বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনের মতো কিছু সংস্কার আসছে গঠনতন্ত্রে।
তারেক রহমানের নতুন পদবি, মহাসচিব নির্বাচন, স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ব্যাপক রদবদলের গুঞ্জন চলছিল, তার সম্ভাবনা আপাতত নেই।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মহাসচিব হওয়ার পথেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত নেতাদের মধ্যে দু-একজনকে ফেরানো হতে পারে। সংস্কারপন্থী কিংবা দল থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকা নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংখ্যায় ফেরানোর সম্ভাবনা কম।
কাউন্সিল সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত সবশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বড় করার কিছু প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। কমিটিতে বেশির ভাগ পদে সদস্যসংখ্যা বাড়বে।
আওয়ামী লীগের আদলে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের কমিটিতে রাখার যে বিধান আগে থেকেই গঠনতন্ত্রে ছিল, তা এবার কার্যকর হতে পারে। এ কারণে কমিটির আকার বাড়বে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলটির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটি ৩৫১ সদস্য নিয়ে গঠিত। চেয়ারপারসন চাইলে আরও ১০ শতাংশ বাড়াতে পারেন। তবে এবারের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করার ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া সায় দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
নতুন করে পদসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি কাল কাউন্সিলে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর গঠনতন্ত্রে যুক্ত হবে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পদসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে নেতারা বলছেন, ছয় বছর পর কাউন্সিল করতে যাওয়া বিএনপি এই সময়ে বেশ নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনে বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বের জট তৈরি হওয়া, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন, বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে পদ পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা, এসব বিবেচনায় পদসংখ্যা বেশ কিছু বাড়ানো হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
তবে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি এবার আলোর মুখ দেখতে পারে বলে জানা গেছে।
নতুন পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদকের পদ যুক্ত হতে পারে গঠনতন্ত্রে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে একটি প্যারা যোগ হতে পারে।
জানা গেছে, কাউন্সিল সামনে রেখে গঠনতন্ত্রে দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব করা হয়। সারা দেশের কাউন্সিলররা লিখিতভাবে এসব প্রস্তাব সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠান।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। আলোচনার পর কিছু বিষয় সিদ্ধান্ত হয়, যা কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির এমন এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে জানান, যেসব বিষয় সিদ্ধান্ত হয়েছে এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ জন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদ ২০টি করার প্রস্তাবও আছে বলে একজন নেতা জানান।
সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক আছেন ছয়জন করে। তা বাড়িয়ে ৮ থেকে ১১ জন করা হতে পারে।
স্থায়ী কমিটি ও যুগ্ম মহাসচিব পদে বর্তমান সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন আসছে না এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত বলেও জানান তিনি। তবে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নতুন মুখ আসবে এবং যুগ্ম মহাসচিব পদেও রদবদল হবে।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “কাউন্সিলের দিনে মহাসচিব পদের ঘোষণা আসতে পারে। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে।”
পদ বাড়ানোর বিষয়ে এই নেতার দাবি, “অনেক দিন পর কাউন্সিল হচ্ছে। অনেক নেতা এখন আর তরুণ নেই। তাদের মূল্যায়ন করার জন্য ভাইস চেয়ারম্যান পদের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় পদসংখ্যা বাড়বে। তবে স্থায়ী কমিটির পদের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।”
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/মোআ)