ঢাকা: জাতীয়তা সনদ বা পরিচয়পত্র না থাকায় শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক সেবা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। আইন ও নীতিমালার ফলে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তার নাগরিক অধিকার হারানোর বিষয়টি অনুসন্ধান করে মানুষের দুর্ভোগ ও বৈষম্য লাঘবে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখতে পারে।
আইন, আদালত, সংবিধান ও মানবাধিকার সংক্রান্ত সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এরআরএফ) এর সদস্যদের নিয়ে ‘রাষ্ট্রহীনতা দূরীকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব ছিল এটি। এতে এলআরএফ-এর ৩৫ জন সদস্য অংশ নেন। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল প্রথম দফায় এলআরএফ-এর আরও ৪০ জন সদস্য অংশ নেয়।
এলআরএফ-এর সভাপতি আশুতোষ সরকারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক কাজী আব্দুল হান্নান, ইউএনইচসিআরের এক্স্রটারনাল রিলেশনস্ কর্মকর্তা ফারহিন খান, বাংলাদেশের সহকারী প্রটেকশন অফিসার ফাহমিদা করিম, অ্যাডভোকেট সৌভিক দাস তমাল। সমাপনি বক্তব্য দেন ইউএনএইচসিআর-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টিনা লুংডেল।
স্টিনা লুংডেল বলেন, জাতীয়তা সনদ বা পরিচয়পত্র না থাকায় শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হন অনেকে। রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সমস্যাগুলো সচরাচর দেখা যায় না। যেসব আইন ও নীতিমালার ফলে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তার নাগরিক অধিকার হারায়, তা অনুসন্ধান করে মানুষের দুর্ভোগ ও বৈষম্য লাঘবে এবং রাষ্ট্র্রহীনতার ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে গনমাধ্যম।
তিনি বলেন, দশ বছরের মধ্যে রাষ্ট্র্রহীনতা নির্মূল করতে ২০১৪-এর নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করে ইউএনএইচসিআর। বিদ্যমান পরিস্থিতির সমাধানে এবং নতুন ঘটনার উত্থান প্রতিরোধে জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্র্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষায় সকলেরই সমর্থন দেয়া উচিত।
সিনিয়র সাংবাদিক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নাগরিকত্ব, রাষ্ট্রহীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যমান সমস্যাবলী চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে গনমাধ্যমকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। একটি রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালনায় গনমাধ্যমকর্মীরা বিশেষ অবদান রাখতে পারে। রিপোর্টিং-এ তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সচেতনতা ও বস্তুনিষ্টতা থাকতে হবে।
এছাড়া কর্মশালায় আলোচকগন নাগরিকত্ব, সার্বভৌমত্ব ও রাস্ট্রীয় অধিকার নিয়ে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রহীনতা, ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব, রিফিউজি, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গণমাধ্যম কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে তার গুরুত্ব আলোচনা করা হয়। রাষ্ট্র্রহীনতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর কর্মশালায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
কর্মশালায় ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১০ মিলিয়ন মানুষ এখন রাষ্ট্রহীন। তারা কোনো দেশেরই নাগরিক নন। কর্মশালা শেষে প্রত্যেক ডেলিগেটকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
কর্মশালার অয়োজনের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তৃতা করেন এলআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক বাসস-এর সিনিয়র রিপোর্টার (আইন) দিদারুল আলম দিদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) যুগ্ম সম্পাদক বাসস এর সিনিয়র রিপোর্টার সাজ্জাদ হেসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক শেখ জামাল, এলআরএফ-এর যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও এ কর্মাশালা সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মৃধা, দপ্তর সম্পাদক আরাফাত মুন্না, নির্বাহী পরিষদ সদস্য আলমগীর হোসেন, জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না ও তানভীর আহমেদ।
(ঢাকাটাইমস/২১মে/এমএবি/জেবি)