logo ১৫ মে ২০২৫
‘ভাগ্য বদলের সুবর্ণ সময় পার করছে দক্ষিণ এশিয়া’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০৫ জুন, ২০১৬ ১৯:৪৬:৫৫
image



ঢাকা: দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও এসব দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষার উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে সবাইকে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন দক্ষিণ  এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধিরা।






একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষ্যে ঢাকা সফররত এই প্রতিনিধিরা শুক্রবার ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়-এর অফিস পরিদর্শন করেন। এ সময় “বিমসটেক, বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও অঞ্চলগত সহযোগিতা”-র নানা দিক উঠে আসে আলোচনায়।ঢাকাটাইমস-এর সহকারী সম্পাদক আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অলোচনায় অংশ নেন ভারতের অধ্যাপক ও সাবেক নৌ কর্মকর্তা ভূষণ দেওয়ান এবং ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহবুব আলী, ভারতের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রঞ্জনা দেওয়ান,বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মেরি অ্যামি তোরেস,ভুটানের প্রতিনিধি নাওয়াং ইয়াংদেন, শ্রীলঙ্কার অধ্যাপক দিলীপা এন্দাগামাগে, ভারতের সহকারী অধ্যাপক ড. আর. রামচন্দ্র, ভারতের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াসোদা দুবি, কলকাতার হেরিটেজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক সপ্তপর্ণ রায়।






অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ভারতের অধ্যাপক ও  সাবেক নৌ কর্মকর্তা ভূষণ দেওয়ান।তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌ বাহিনীর জাহাজ কৃষ্ণায় কর্মরত ছিলেন।






এই অঞ্চলের অর্থনীতির সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরে এই অধ্যাপক বলেন,বাংলাদেশসহ ভারত, চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার উল্লেখযোগ্য দেশসমূহ একটি বিশেষ সময়ের মধ্য দিয়ে পার করছে। বর্তমান এই অঞ্চলের প্রায় ৬৫ শতাংশ লোক ৩৫ বছরের নিচে অবস্থান করছে। সুতরাং এই অঞ্চলের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ এই সময়কে কাজে লাগিয়ে উন্নতির চরম শিখরে চলে গেছে। আমাদেরকে অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলাকে এক হয়ে এই সময়ের মধ্যেই নিজেদের বৃহত্তর স্বার্থে উন্নয়নের পথে নিজেদেরকে এগিয়ে নিতে আরও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।






তিনি আরও বলেন,দারিদ্র্য, জলবায়ুর পরিবর্তন এই অঞ্চলের এখন অন্যতম প্রধান সমস্যা। আগামী ৫০ বছর পর এই অঞ্চলের অধিকাংশই পানির নিচে চলে যাবে। ভারতে বর্তমানে প্রচণ্ড খরার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক অঞ্চলে আমি দেখেছি লোকজন খাবার পানি পাচ্ছে না। সেখানে ট্রেনে করে পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।






অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মুহাম্মদ মাহবুব আলী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঞ্চলগত সহযোগিতা ও ‘লুকিং অ্যাট দ্য ইস্ট’ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পার হয়ে গেলেও এই অঞ্চলে শিক্ষা এখনও অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে। এখন সময় এসেছে তার নেতৃত্বে বিমসটেকে শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্তিকরণ, যোগ্য লোক তৈরি করা, বিমসটেক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা এবং গবেষণা ও শিল্প ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।






তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রধানত মডারেট সুন্নি মুসলমান বাস করে। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় অসাম্প্রদায়িক মুসলিম প্রধান দেশ, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না।






ভারত থেকে আসা চক্ষু বিশেষজ্ঞ রঞ্জনা দেওয়ান বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে জনসংখ্য বৃদ্ধি হলো প্রধান সমস্যা। আপনি চাইলেই চার-পাঁচটি সন্তান নিতে পারেন না। আপনার সম্পদ সীমিত। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। ছেলে হোক, মেয়ে হোক একটি সন্তানই আপনার জন্য যথেষ্ট।






মালয়েশিয়া থেকে আসা প্রতিনিধি মেরি অ্যামি তোরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলাকে চোখ বন্ধ করে অনুকরণ না করে এই অঞ্চলের মানুষদেরকে নিজেদের মতো করে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।






তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর নিজস্ব সমস্যা রয়েছে, ঠিক যেমন রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। এ অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা মোকাবেলায় এক জোট হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।






ভুটানের প্রতিনিধি নাওয়াং ইয়াংদেন বলেন, ভুটান এ বছর ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে বিশ্বের শীর্ষ সুখী দেশগুলোর একটি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এখানে ভুটানের অবস্থান পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশগুলো থেকে অনেক উপরে। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভুটান সরকার ও ভুটানের মানুষের  এক থাকার কারণে।






তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে একটি বড় সমস্যা। নারীদের উন্নয়নের জন্য সবার আগে এটি বন্ধ করতে হবে।






শ্রীলঙ্কা থেকে আসা প্রতিনিধি দিলীপা এন্দাগামাগে বলেন,  আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা। দেখা যায় ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও ভালোভাবে ইংরেজি পারে না। ইংরেজি শিখতে গিয়ে তারা আবার অর্থনীতি, গণিত, বিজ্ঞান কোনোকিছুই ভালোভাবে শিখতে পারে না। শেষমেশ দেখা য়ায়, কোনোরকম ডিগ্রি নিয়ে বের হয়ে তারা চাকুরীর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।






ভারতীয় প্রতিনিধি ড. আর. রামচন্দ্র  বলেন,ইংরেজি ভাষা শিক্ষার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নিজ নিজ সংস্কৃতিও লালন করতে হবে। আমাদের অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না। অতীতকে মনে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হলেই আমরা আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।






তিনি আরও বলেন,পাশ্চাত্যের ভাষা আমাদের জানতে হবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশগুলোও যাতে আমাদের ভাষা হিন্দি বা বাংলা  শেখার প্রয়োজন অনুভব করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।






ভারতীয় প্রতিনিধি ড. ইয়াসোদা দুবি বলেন,আমাদের উচিৎ আমরা কোন ভাষা শিখব কোন ভাষা শিখব না এগুলো আমাদের সন্তান তথা আমাদের নতুন প্রজন্মের ওপর ছেড়ে দেয়া। তারা নিজেরাই ঠিক করুক তারা কোন ভাষা শিখবে।






কলকাতা থেকে আসা ভারতের প্রতিনিধি সপ্তপর্ণ রায় শিক্ষার প্রসার ও শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন ট্র্যান্সফার নিয়ে আলোকপাত করেন।  তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পড়াশোনার সময় তাদেরকে অন্তত চার মাস বা ছয় মাসের জন্য পার্শ্ববর্তী অন্য দেশটিতে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের অনেক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়াতে বা বাংলাদেশ থেকে আরও অনেক শিক্ষার্থী ভারতে গিয়ে শিক্ষানবিশ হলে ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে শুরু করে শিক্ষার গুণগত মান অনেক বৃদ্ধি পাবে। তিনি এই অঞ্চলের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ব্যক্ত করেন।






অনুষ্ঠানে সবাই একমত হন যে,তারা তাদের নিজ নিজ দেশের মানুষকে যেভাবে পারবেন এসব বিষয়ে অবহিত করবেন।বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে  নিজ দেশের মানুষকে আরও সোচ্চার হতে বলবেন।






শেষে ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়-এর সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক আরিফুর রহমানের সংগ্রহ ও সম্পাদিত ‘একাত্তরের গোপন দলিল’ বইটি উপহার হিসাবে ভূষণ দেওয়ানের হাতে তুলে দেন এই সময়-এর প্রধান প্রতিবেদক হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।






(ঢাকাটাইমস/৫ জুন/এম/এসইউএল/এআর /ঘ.)