logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
বেতন-বোনাসের অপেক্ষায় ফুটপাতের ঈদ বাজার
এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
১৭ জুন, ২০১৬ ১৯:৫২:৪৪
image



ঢাকা: এখনো তেমন জমে ওঠেনি ফুটপাতের ঈদের বাজার। পবিত্র মাহে রমজানের ১১তম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা যায় বেশির ভাগ দোকানে অপেক্ষায় ক্রেতার জন্য। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো ঈদের বেশ কিছু দিন বাকি। তার ওপর ঈদ সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস এখনো হয়নি। এ জন্য ক্রেতাদের ভিড় কম।






আরও কয়েক দিন পর পোশাকশিল্পসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতন-বোনাস পেলে ভিড় বাড়বে ফুটপাতের বাজারে।






তবে এরই মধ্যে কম হলেও শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। বিগত ঈদগুলোতে দেখা গেছে, ঈদ যতই এগিয়ে আসে, রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা ততই বাড়তে থাকে। শেষ দিকে দম ফেলার ফুরসত থাকে না তাদের।






রাজধানীর ঈদের বাজারের অন্যতম বড় উৎস ফুটপাত। বিত্তবানদের জন্য না হলেও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদের বাজার অনেকটা ফুটপাতেই সারা হয়। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সাধ্যের মধ্যে সেরাটা খুঁজে নেন এই ফুটপাতের দোকান থেকেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেও প্রয়োজনীয় ও পছন্দের অনেক পণ্য ফুটপাত থেকে কিনে নেন। আর তাতে পরিবারের চাহিদাও পূরণ করা যায় অনায়াসে।






এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহ তেমন জমজমাট ছিল না ফুটপাতের ব্যবসা। এ সময়ে পাইকারি বাজার থেকে ঈদের জন্য পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।






রাজধানীতে ফুটপাতে ঈদের কেনাবেচা হয় প্রায় ৫০টি স্পটে। এই প্রতিনিধি গুলিস্তান, মতিঝিল, ফকিরাপুল, বায়তুল মোকাররম- এই এলাকার ফুটপাত ঘুরে ঈদের কেনাকাটা প্রত্যক্ষ করেছেন। এর মধ্যে কেনাকাটা কিছুটা জমে উঠেছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাত, গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন ফুটপাত, বঙ্গবাজার ফুটপাত, মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিকের ফুটপাত, ফকিরাপুল এলাকা, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর-পশ্চিম গেটের সামনের ফুটপাতে।






শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার-কামিজ, রং-বেরংয়ের থ্রি-পিস, গেঞ্জি, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস্, টুপি, আতরসহ নানা পণ্য স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় এসব ফুটপাতের দোকানে।






ঈদ কেনাকাটায় ফুটপাতের খোঁজ নিতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যেতেই কানে ভেসে আসে ‘দেইখ্যা লন দুই শ, বাইছ্যা লন দুই শ, একদাম দুই শ, যেটাই নেবেন দুই শ’ এ রকম সমস্বরের আহ্বান। শুধু এখানেই নয়, পুরো রাজধানীর ফুটপাত জুড়েই পাওয়া যাবে এই আওয়াজ।






এই প্রতিবেদকের কথা হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তার জিন্স ও গ্যাবাডিন প্যান্টের দোকান। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এখনো ঈদের বেচাকেনা বাড়েনি। আগের মতো স্বাভাবিক বিক্রিই হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই ঈদের জন্য দোকানে পণ্য ওঠানো হয়েছে।






বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতে আতরের ব্যবসা করেন আব্দুল আউয়াল। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এবারের ঈদ সামনে রেখে সৌদি আরবের তৈরি বিভিন্ন আতর বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশীয় শাহী দরবার ও রজনীগন্ধা আতরও বেশ বিক্রি হচ্ছে।






বিরক্তি আর নাখোশভাব নিয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আহমেদ শিশির। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমার অফিস মতিঝিলে। অফিস শেষে ধানমন্ডির বাসায় যাওয়ার জন্য সিটি বাসে উঠেছিলাম। কিন্তু গুলিস্তানে আসার পর গাড়ি আর সামনে যাচ্ছে না। ইফতারির সময় হয়ে আসছে দেখে পল্টনে যাওয়ার জন্য হেঁটেই রওনা দিয়েছি। কিন্তু ফুটপাতে দোকান থাকার কারণে হেটেও এগোতে পারছি না।”






এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ফুটপাতের শার্ট বিক্রেতা শমসের ঢাকাটাইমসকে বলেন, “ঈদ সামনে রেখে ক্রমান্বয়ে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তাই সাধারণ পথচারীর কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এ কথা সত্য। কিন্তু সব সময় তো আর এমন অবস্থা থাকে না। ঈদের আগ পর্যন্ত আমাদের এই কদিনের ব্যবসায় পথচারীর কিছুটা সমস্যা হবে। এ জন্য আমরাও দুঃখিত।”






একাধিক ফুটপাতের ব্যবসায়ী ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, ঈদের সময় যত কাছে আসবে ফুটপাতের বিকিকিনি মধ্যরাত পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাবে। ফুটপাতে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায়, টি-শার্ট ১৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। এ ছাড়া মেয়েদের থ্রি পিছ পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে, শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।






মতিঝিলের ফুটপাত থেকে ছেলের জন্য শার্ট কিনেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিক উদ্দিন। ফুটপাতের কেনাকাটা নিয়ে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে যদি ঈদের কেনাকাটা করি তবে পরের মাসে না খেয়ে থাকতে হবে। তার পরও ঈদের আনন্দও কিছুটা রাখতে হবে। তাই আয় বুঝে ব্যয় করছি।”






(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/জিএম/মোআ)