logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পাস
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
৩০ জুন, ২০১৬ ২১:১৮:৪৩
image



ঢাকা: জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার  কিছু সংশোধনীসহ প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে।






বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে দুপুর দেড়টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে আগামী অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়।






টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় বাজেট এটি। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা অষ্টম বাজেট।






অর্থবিলে কিছু পরিবর্তন হলেও খরচের লক্ষ্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকাই বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও অপরিবর্তিত রয়েছে। বহাল থাকছে রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য। আর বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে দেশে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে মনে করে সরকার। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। শুক্রবার থেকে এ বাজেট কার্যকর করা হবে।






গত ২ জুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় জাতীয় সংসদের সরকারি বিরোধীদলীয় মোট ২৪৩ জন সংসদ সদস্যও মন্ত্রী বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। মোট ৫৮ ঘণ্টা ১১ মিনিট জাতীয় সংসদের সদস্যরা বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।






এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। ওই দিন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব, সংযুক্ত তহবিল-প্রাপ্তি, মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন), বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন), নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চল্লিশটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম, শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, দক্ষতা উন্নয়ন-উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার, কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প: প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা: হালচিত্র ২০১৬ ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ হতে সরবরাহ করা হয়েছিল।






২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২কোটি টাকা। অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। উন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২১ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যয়সহ এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে ২ লাখ ০৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার কর রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এ বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ধার করতে হবে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীন উৎস্য থেকে পাওয়া যাবে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অভ্যন্তরীন উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে পাওয়া যাবে ২২ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ১ শতাংশের কিছু বেশি।






বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতির চ্যালেঞ্জের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পদ্মা সেতুসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৮ খাতে। যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।






গতকাল বুধবার বাজেট আলোচনার ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এ অর্থবছর আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।






কৃষিতে বরাদ্দের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি খাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদার আলোকে আমরা প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দ রেখেছি ১৩ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা চলমান অর্থবছরে ছিল ১১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। সার ও সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণে প্রণোদনা বাবদ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে আমরা ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি।






স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৩৮ শতাংশ।






এদিকে শিক্ষা, এর বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়ার বিষয়ে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাও বহাল থাকছে। কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণে যে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাও বহাল থাকছে।






স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতসহ অন্যান্য খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বহাল থাকছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সার্বিক শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯ কোটি টাকায়। জিডিপির অনুপাতেও এ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য বেড়েছে।






(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/জেডএ)