অমৃত মলঙ্গী: সম্প্রতি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তারপর বেশ কয়েকটি পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব সংবাদে ফুটে উঠে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের করুণ চিত্র। এরমধ্যে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সাবধান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদের একটি অংশে বলা হয়, ‘জানা গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৬ জুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবৈধ কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়েছে। এছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একাধিক পত্রও দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলাসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দারুল ইহসান, প্রাইম, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন, নর্দার্ন, পিপলস, বিজিসি ট্রাস্ট, ইবাইস, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম নয়টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্য কেউ কেউ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ’
উপরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির নাম আসায় বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদ ‘অবাক’ হন। তাদের দাবি, ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে কোনো ধরনের অনিয়ম হয় না। এখানের শিক্ষাকার্যক্রমে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা নেই।’
এ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভেতরও উদ্বেগ দেখা দেয়।
ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উদ্বেগের কথা জানতে পেরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুল হক আরিফিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো অনিয়মের খবর নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তিতে কোনো রকম বাধানিষেধ নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম দস্তগীর বলেন, ‘যুগান্তর পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কথা বলা হয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা পরদিন প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির লেখা-পড়ার মান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার সঠিক মূল্যায়ন করতে আমরা প্রতিটি ক্লাসে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছি। এখানে পরীক্ষার সময় গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নকল হয় না। প্রতিদিনের ক্লাসের চিত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষার সময় এতটুকু নড়াচড়া করলেও আমাদের খাতা নিয়ে নেয়া হয়। তাছাড়া সিসি ক্যামেরা তো রয়েছেই। তাই পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ভালো ফলাফল করা এখানে সম্ভব নয়। এতে আমরা খুশি। এমন কড়াকড়ির ফলে শিক্ষার সঠিক মান নিশ্চিত হয় বলে আমরা মনে করি।’
আরেক শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, ‘এখানে শুধু লেখাপড়াই হয় না। খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও চলে সমানতালে। তার প্রমাণ সর্বশেষ ক্লেমন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এখানে সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরা রানার্সআপ হয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়ের কোনো অর্থ নেন না। সব অর্থ ব্যয় করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকর্মকাণ্ডে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে যে অর্থ আয় হয়, তার সবটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খরচ করা হয়। লাভের টাকা কারো পকেটে যায় না। এটি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু তাই নয়। আমাদের এখানে টিউশন ফি যত কম, এত কম টাকায় দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায় না। আমরা ইচ্ছা করলে টিউশন ফি বাড়াতে পারি। কিন্তু বাড়াই না। প্রতিবছর চাহিদার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হতে আসে। আমরা বেছে বেছে শিক্ষার্থী ভর্তি করি।’
দেশের অন্য কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো শাখা ক্যাম্পাস নেই। তবে অভিযোগ আছে, এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ বিষয়ে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মোহাম্মদপুরের আদাবরে বিশাল যায়গা নিয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসের কাজ পুরোদমে চলছে। অল্পকিছুদিনের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’