পৃথিবীতে কত কত রঙ! একেক বস্তু একেক রঙের। এসব তার উৎস কী? উৎস বস্তুটা কিন্তু আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। সেটা হলো সূর্য বা সূর্যের আলো। অমাবস্যার অন্ধকার খোলা মাঠে বা ছাদে শুয়ে আকাশের দিকে তাকান, আকাশের নীল রঙ একেবারে উধাও! পুরো আকাশটা গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা। চাদনী রাতে আলো না জ্বেলে অবশ্য গাছের পাতা ও ফুল কিছুটা দেখা যায়। তবে সেগুলো কিন্তু কালোই দেখায়।
সাদা আলো সাত রঙের মিশ্রণ। সেই সাতটা রং হলো বেগুনি, নীল, আসমানী, হলুদ, কমলা ও লাল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে আলো ব্যবহার করি যেমন- সূর্যের আলো, বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো কিংবা টর্চ বা সার্চ লাইটের আলো- সবই সাদা রঙের। আলো মূলত একধরনের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ। তাই প্রতিটা আলোর একটা করে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। আলোক রশ্মি একটা পূর্ণ কম্পন শেষ করতে যতটুকু পথ সরলরেখা আকারে সামনে এগোয় সেই পথটাকেই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে। আমাদের দৃশ্যমান আলোর মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেযে কম।
আগেই বলেছি সাদা আলো শুধুই সাদা নয়, সাত রঙের মিশ্রণ। আমাদের চারপাশের সব বস্তুতে কোনো না কোনো রঞ্জক পদার্থ থাকে। সেই রঞ্জক পদার্থগুলো সাদা আলো ভাঙতে পারে। ধরা যাক, গাছের পাতার কথা। গাছের পাতায় ক্লোরোফিল নামের এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে। সূর্যের সাদা আলো গাছের পাতায় পড়লে ক্লোরোফিল সাদা আলোকে প্রথমে সাতটা রঙে বিশ্লেষণ করে। তারপর বিশ্লেষিত আলো থেকে সবুজ বাদে বাকি ছয়টা রঙের আলো শোষণ করে খাদ্য ও শক্তি তৈরি করে। অশোষিত সবুজ আলো তখন প্রতিফলিত হয়ে পড়ে আমাদের চোখে। তাই আমরা গাছের পাতা সবুজ দেখি। অন্যান্য বস্তুতেও এমন রঞ্জক পদার্থ থাকে। যে পদার্থেরর রঞ্জক পদার্থ যে রঙটা শোষণ করতে পারে না সেই পদার্থকে সেই রঙের দেখা যায়। যেমন লাল গোলাপের পাপড়ি লাল রঙ শোষণ করতে পারে না, তাই সে দেখতে লাল।
কালো রঙের বস্তুর ক্ষেত্রে বিষয়টা একটা অন্যরকম। যে বস্তুর রঙ কালো তাতে এমন একটা রাসায়নিক পদার্থ থাকে যে সূর্যের সাদা রঙের প্রায় সবটুকু শোষণ করে ফেলে। খুব কম আলোই সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়। তাই সেই বস্তুর কোনো রঙ থাকার কথা নয়। আর রঙ না থাকা মানে কালো রঙের হওয়া।
পৃথিবীতে যত রঙ আছে, আসলে সবকিছুরই উৎস সাদা আালো। আর সাদা আলোর সবচেয়ে বড় উৎস সুর্য। সাদা আলোর আর যেসব উৎস আছে সেগুলো সুর্যের কাছে কিছুই নয়। তাই রাতে কৃত্রিম আলো পৃথিবীকে সেভাবে রাঙাতে পারে না। সুতারাং সুর্যই হলো পৃথবীর প্রায় সব রঙের উৎস।