logo ১০ মে ২০২৫
যেভাবে রাজনীতিতে এসেছিলেন তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:৩৪:৪৬
image


ঢাকা: বিএনপির যতো রকমের পোস্টার চোখে পড়ছে তাতে যে তিনজনের ছবি থাকে তাঁর একটি তারেক রহমানের। বেশ কয়েক বছর বিরতির পর সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গণে আবারও সাড়া ফেলেছেন তারেক রহমান।

 



বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে যোগদান করে তারেক রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগেই তারেক রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।





১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তারেক রহমান তাঁর মায়ের সহচর হিসেবে সারা দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১সালের নির্বাচনেও তারেক মা বেগম খালেদা জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের পাশাপাশি পৃথক পরিকল্পনায় দেশব্যাপি নির্বাচনী প্রচার চালান। মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁর অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির প্রথম সারিতে তারেক রহমানে সক্রিয় আগমন ঘটে।





২০০২ সালে তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। দলের উর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠনসহ সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মতবিনিয়ম সভায় অংশ নিয়ে তারেক রহমান কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং মাঠপর্যায়ের নেতারা বক্তব্য ও মতামত গ্রহণ করেন।





এ সভাগুলোতে তারেক মূলত দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করেন। বিস্তারিত মতবিনিময়ের বিষয়বস্তুর মাঝে আরও ছিলো প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে দলের করণীয় ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে সরকারি দল হিসেবে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে  আলোচনা। পরবর্তীতে দেখা যায় যে এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তারেক রহমানের শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

 



২০০২ সালে ৩৫ বছর বয়সী তারেক রহমানকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন নেতা হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার ফলে কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বজনপ্রীতি বলে চিহ্নিত করে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেন।

 



চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতারা এবং কিছু সংবাদপত্র নানা সময়ে তারেকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতির অভিযোগ আনে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমানের কার্যালয় রাজধানীর বনানীস্থ হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয় তারেকের বিরুদ্ধে।

 



সাড়াজাগানো ওয়েব সাইট উইকিলিক্স বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্টদূতের গোপন তারবার্তা ফাঁস করে। এতে তারেক রহমানের গৃহীত বিভিন্ন নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়।

 



রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে ২০০৭ সালে দেশের রাজনীতিতে দুর্যোগে হাতছানি দেখা যায়। পরিবর্তি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ফখরুদ্দীন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। ওই সময় সেনা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন মঈন উ আহমেদ (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)। ১২ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হওয়ার পর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে প্রচুর মামলা দায়ের করা হয়।

 



৭ মার্চ একটি দুর্নীতি মামলার আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে তার ক্যান্টমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ১৩টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় ও তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।

 



গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তারেককে আদালতে হাজির করা হলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনিতর জন্য আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন যে, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তারেক রহমানের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে চিকিৎসকদের একটি দল-পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আদালতকে জানান যে, তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত। এই পর্যায়ে আদালতে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ শিথিল করে তা কমিয়ে ১দিন ধার্য্য করেন ও জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের আদেশ দেন। এরপর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২৫ আগস্ট খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তারেক রহমান হাসপাতাল কক্ষে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়।

 



২০০৮ সালের আগস্টে তারেক রহমানের মামলাগুলো আদালতে গতি লাভ করে। প্রায় ১৮মাস কারান্তরীন থাকার পর ৩ সেপ্টেম্বর  পিজি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান। বর্তমানে লন্ডনের সাউথ ওয়েলিংটন হসপিটাল ও লন্ডন হসপিটালে তার চিকিৎসা চলছে এবং চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে সপরিবারের বসবাস করছেন।

 



২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উক্ত কাউন্সিলে তারেক রহমানের একটি ধারণকৃত বক্তব্য উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়। বক্তব্যটিতে তারেক রহমান জানুয়ারি ২০০৭-এ ক্ষমতায় আসা অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে তাঁর অন্যায় গ্রেপ্তার ও বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এই বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার সময় উপস্থিতদের কেউ কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।  

 



তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে। কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দেহ পোষণ করেছেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেকাংশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।



 



(ঢাকাটাইমস/ ২০সেপ্টেম্বর/ এমএস/ এআর/ ১০.৩০ঘ.)