logo ১০ মে ২০২৫
রাজনীতিতে যেভাবে এলেন জয়
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকা টাইমস
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:৪১:১০
image


ঢাকা: ‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন ভবিষ্যৎবাণীতে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গণে। এনিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সর্বত্র। ছেড়ে কথা বলেনি বিরোধীপক্ষও। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে হাজির হন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র।





যদিও ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ পান বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় ওই অর্থে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না জয়।    





প্রচার আছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে পর্দার আড়াল থেকে ভূমিকা রেখেছিলেন একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেয়া জয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভাবনাটা এসেছিল এই আইটি প্রফেশনালের কাছ থেকেই। এবারও নির্বাচনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাতি জয়। তবে পর্দার আড়ালে নয়, প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে নেমেছেন তিনি।





গত ২৩ জুলাই যুবলীগের ইফতার পার্টিতে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচিত সেই ভবিষ্যৎবাণী করার পর বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন জয়। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত পেজ খোলা হয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে। এর পর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন ফেসবুকেও। নির্বাচন, রাজনীতি ও আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা নিয়েও লেখামেলা বক্তব্য রাখেন তিনি।

 



গত ১ আগস্ট বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন জয়। ওই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাঁর দল ও সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে, বিগত চারদলীয় সরকারের কর্মকা-ের সমালোচনাও করেন জয়। ওই অনুষ্ঠানে তার সেই ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জয় জানান, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতেই তিনি বলেছিলেন আগামীতে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।

 



তবে সবকিছুর ওপর আওয়ামী লীগ ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে বেশি গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।

 



এর পর গত ৫ আগস্ট হঠাৎ যুক্তররাষ্ট্রে পাড়ি জমান সজীব ওয়াজেদ জয়। সুদূর আমেরিকায় অবস্থান করেও ফেসবুকে ঠিকই সক্রিয় থাকেন তিনি। দীর্ঘ একমাস বিদেশে থাকার পর ৫ সেপ্টেম্বর আবারও দেশে ফেরেন জয়। ফিরেই গত ১২ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি ‘চমকের’ কথা বলে নতুন করে চমকে দেন সবাইকে। এজন্য তিনদিন অপেক্ষাও করতে বলেন। ওই মতবিনিময়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যক্তি ফেসবুক একাউন্ট খোলাসহ  প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেন। নিজে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পর্যায়ে সফরের মধ্যদিয়ে চমক দেখাতে শুরু করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। টানা দুদিন গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল জেলা সফর করে ঢাকা ফেরেন ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তার এই তৃণমূল পর্যায়ে সফর অব্যাহত থাকবে।

 



দলকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরতে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক সফর থেকে ফিরেই পরদিন বসেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে। ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্রে জানা যায়। বৈঠক শেষে জয় জানান, ‘আওয়ামী লীগের বড় ধরনের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারানো অসম্ভব হবে।’

 



সবমিলিয়ে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে রাজনীতিতে জয়ের আগমনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য নূর উল আলম লেনিন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যক্তি জয়ের ভাবমূর্তি অনেক উপরে। যেখানে বিরোধীদলীয় নেতার ছেলেরা নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে কারাগারে গিয়েছিলেন সেখানে জয় এসব থেকে পুরোপুরি মুক্ত। তাছাড়া তাঁর মা শেখ হাসিনাও দুবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু কখনোই তিনি  ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এমন অভিযোগও  কেউ করতে পারবে না। তাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জয়ের আগমনকে নিঃসন্দেহে নতুন দ্বারের উন্মোচন করবে বলে মনে করি।’  

 



তবে বিরোধীদল জয়কে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয়। তাদের দাবি, গত প্রায় পাঁচ বছরে পদ্মাসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনিসহ বড় বড় দুর্নীতিসহ নানা কারণে জনগণের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেছে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। তাই জয়কে কাজে লাগিয়ে আগামীতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা সহজ হবে না বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

 



বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে অনেক তরুণ। সে তুলনায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেক এগিয়ে। তাই আওয়ামী লীগ যদি মনে করে জয়ের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে ক্ষমতায় আসবে তবে তা হবে তাদের অদূরদর্শী চিন্তাভাবনা। কারণ, মানুষ  বিগত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের কর্মকা- বিবেচনা করেই ভোট দেবে, জয়কে দেখে নয়।’

 



২০০৬-২০০৮ সালে সেনা  সমর্থিত সরকার যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে তখন সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় বসে তৎকালীন সেরকারের বিরুদ্ধে দৌঁড় ঝাপ দিয়ে আলোচনায় আসেন।

 



মূলত বিদেশের মাটিতেই শিক্ষাজীবন পার করেছেন সজীব ওয়াজেদ। স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে ভারতে। পরে ভারতের বেঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স, ফিজিক্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিকসে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অর্লিংটনে পড়াশোনা করেন। সবশেষে বিশ্বখ্যাত হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ক্রিস্টিনা ওভারমায়ার ওয়াজেদকে বিয়ে করেছেন জয়।



 



(ঢাকাটাইমস/ ২০ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ এআর/ ১২.০৫ঘ.)