ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একজন সাজাপ্রাপ্ত। অন্যজন রায়ের অপেক্ষায়। চিকিৎসকরা বলছেন তারা দুজনই শারীরিকভাবে অসুস্থ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কিন্তু একজন আছেন হাসপাতালে। অন্যজন কারাগারে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম এবং বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমকে নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শারীরিকভাবে অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডের পবিরর্তে ৯০ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পরও গোলাম আযমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন এনেক্সে রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি সেখানে থাকছেন। নিয়মিত ভাল খাওয়া দাওয়াও করছেন।
কিন্তু আব্দুল আলীমকে রাখা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিভিশন সেলে। অথচ তিনিও গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। বয়সের ভারে একেবারে যবুথবু হয়ে পড়েছেন। অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে তিনি জামিনে ছিলেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছ, তাই গোলাম আযম হাসপাতালে থাকলে, আব্দুল আলীম কারাগারে কেন?
রবিবার আব্দুল আলীমের মামলাটির কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন যেকোনো দিন মামলার রায় দেয়া হবে। তাই তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠাতে বলা হয়েছে।
তবে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আব্দুল আলীমকে কারাগারে রেখে তার শারীরিক পরীক্ষা চলছে। চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঘেটে দেখছেন। যদি তারা মনে করেন আব্দুল আলীমকে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন তাহলে গোলাম আযমের মতো তাকেও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের প্রিজন এনেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে।
২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সময় তিনি অসুস্থ থাকায় আদালত তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে তিনি হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ১৫ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯১ বছর বয়সী গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। কিন্তু অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রিজন এনেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তাকে কয়েদির পোশাক পরিয়ে রাখা হয়েছে।
গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদ- দেয়ার পরও হাসপাতালে রাখায় ওই সময় বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়ার দাবি তোলা হয়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে কারা কৃর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালের প্রিজন এনেক্সেই রাখে।
২০১১ সালের ১১ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আব্দুল আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ৮৩ বছর বয়সী আলীমের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল তাকে জামিন দেয়। তবে বিচার চলাকালে তাকে আদালতে হাজির করা হত।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘একাত্তরে গোলাম আযমরা গণহত্যা-গণধর্ষণের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে তা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালের প্রিজনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় কি না আমার জানা নেই।’
(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এইচএফ/এআর/ ২০.১২ঘ.)