ঢাকা : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার রায় দেয়া হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এটিই প্রথম কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায়। এছাড়া আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো চারটি মামলা।
এ অবস্থায় কাদের মোল্লার রায়ের পর জাতির দৃষ্টি এখন এ চারটি মামলার দিকে। এ চারটি মামলায় অভিযুক্তদের ভাগ্যে কী ঘটে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায়।
সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলা।
এর মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারিত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে উভয়পক্ষ আপিলের সার-সংক্ষেপ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানি শুরুর কথা থাকলেও সাঈদীর প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন পুননির্ধারণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ মার্চ সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দুটি আপিল আবেদন দাখিল করেন।
এরপর ৩ এপ্রিল আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল আবেদনের সারসংক্ষেপ জমা দেয় সরকারপক্ষ। ১৬ এপ্রিল সারসংক্ষেপ জমা দেন আসামিপক্ষ।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ইতিমধ্যে প্রায় ছয় মাস অতিক্রম হতে চলেছে। কিন্তু এখনও শুনানি শুরু করতে পারেনি আপিল বিভাগ।
এর আগে আবেদনটি শুনানির জন্য কয়েকটি তারিখ ধার্য থাকলেও জামায়াতের অপর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানি চলমান থাকায় তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কাদের মোল্লার মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ায় সাঈদীর মামলার দ্রুত শুনানি হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
সাঈদীর পরই রয়েছে দলটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলা। এই মামলাটিও ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ইতিমধ্যে চার মাসের বেশী সময় অতিক্রম হলেও এখনও শুনানির তারিখ ধার্য হয়নি। মামলার সারসংক্ষেপও আদালতে জমা দেয়া হয়নি।
কামারুজ্জামানের মামলায় আসামিপক্ষ থেকে সারসংক্ষেপ জমা দিতে সময়ের আবেদন জানালে সর্বশেষ গত রবিবার আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার সারসংক্ষেপ এখনও কোনো পক্ষই আদালতে জমা দেয়নি।
সাঈদীর মামলায় প্রমাণিত অভিযোগগুলোতে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ, আর ফাঁসির দন্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন আসামিপক্ষ।
একইভাবে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে গোলাম আযমের ফাঁসির আরজি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ এবং ৯০ বছরের কারাদন্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন আসামিপক্ষ।
কামারুজ্জামান ও মুজাহিদ আপিল করেছেন ফাঁসির দন্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে। আর মামলা কার্যক্রমের শুরু থেকেই পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি জামায়াতের সাবেক রুকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ ওরুফে বাচ্চু রাজাকার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করা আইনে বাধ্যতামূলক। এছাড়া ট্রাইব্যুনালস আইনের (সংশোধন) ২১(৪) ধারা অনুসারে আপিল দায়েরের ৬০ দিনের মধ্যেই তা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। অথচ একটি মামলাও আইনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আইনের এ বিধানটি বাধ্যতামূলক নয়। এটি নির্দেশনামূলক। কারণ, ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে তা আইনে বলা নেই। তিনি বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে। বিষয়টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা শুনতে ও রায় দিতে পারবেন আদালত।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এরই মধ্যে ৬টি মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও গোলাম আযমের মামলার রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এছাড়া আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবুল কালাম আযাদ ওরুফে বাচ্চু রাজাকারের রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-২।
এর মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও বাচ্চু রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হলেও গোলাম আযমকে ৯০ বছর ও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এমআর/এআর/২৩.৩০ঘ.)