ঢাকা : সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন ,পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা মামলা, বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাগুলোর কোন কূলকিনারা করতে পারছে না পুলিশ।
দীর্ঘদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত অন্ধকারেই রয়ে গেছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দেড় বছরের বেশি সময় অতিক্রম করলেও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সত্য উৎঘাটনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার পরিচয় দিলেও তারা ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিতে নারাজ।
সাগর রুনি হত্যাকাণ্ড : গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে সাগর ও রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই হত্যাকাণ্ডের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খুনিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টা সময় সময় চান দেশবাসীর কাছে। ঘটনার পর পুলিশের আইজি এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার প্রনিধানযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে জানান।
কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এর পর এই মামলা নিয়ে শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া আর তেমন কিছুই হয়নি। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় গত বছরের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ আদালতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে। পরে উচ্চ আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, র্যাবের পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল এ মামলার তদন্ত তদারক করছে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর দলটি গত ২৬ এপ্রিল ভিসেরা আলামতের জন্য সাংবাদিক দম্পতির লাশ আবার কবর থেকে তোলে। কিন্তু ভিসেরা পরীক্ষায় তাঁদের শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁরা হলেন: রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী পলাশ রুদ্র পাল ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান।
এঁদের প্রথম পাঁচজনই গত আগস্টে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে তাদেরকে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম দিকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে এই পাঁচ জনের জড়িত থাকার কথা বললেও এ নিয়েও খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি পুলিশ। এঁদের সঙ্গে বাসার দারোয়ান হুমায়ুন ওরফে এনামুলকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। পলাতক এনামুলকে ধরতে এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
আমিনুল হত্যা: গত বছরের ৪ এপ্রিল আশুলিয়া থেকে পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরদিন তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে। বেওয়ারিশ হিসেবে আমিনুলের লাশ উদ্ধারের পর ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক শাহীন মিয়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে আমিনুলের ভাই রফিকুল ইসলাম এ ঘটনায় সন্দেহভাজন মোস্তাফিজুর রহমান ও বোরকা পরিহিত অজ্ঞাতনামা এক নারীকে আসামি করে ঘাটাইল থানায় আরেকটি এজাহার দেন। এজাহারটি পুলিশের করা হত্যা মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। বলা হয়েছে, বোরকা পরিহিত ওই নারীকে নিয়ে আমিনুলকে ডাকতে গিয়েছিল মোস্তাফিজুর।
আমিনুল ইসলাম হত্যা মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে সিআইডি জানিয়েছিল, ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার কথিত ‘সোর্স’ মোস্তাফিজুর রহমান ও বোরকা পরিহিত অজ্ঞাতনামা নারীকে খুঁজতে বিশ্বস্ত চর নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়াও অন্য কেউ এই হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ইলিয়াস আলী গুম : গত বছরের ১৭ই এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। তার সঙ্গে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালক আনসার আলীও। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা । এ ঘটনার পর পরই সিলেটে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ১৮ই এপ্রিল গোটা সিলেট বিভাগকে অচল করে দেয় বিএনপি কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি’র আহ্বানে টানা ৫ দিন হরতাল আহ্বান করা হয়। এ ঘটনার জেরে সিলেটের বিশ্বনাথে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের তিন নেতা নিহত হন। এ ঘটনায় আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি’র শ’ শ’ নেতাকর্মী কারাবরণ করেছেন।
এখনও ইলিয়াসের অপেক্ষায় বিশ্বনাথে তার মা। অবুঝ শিশু নাওয়াল পথ চেয়ে আছে পিতার। অপেক্ষায় স্বজনরা। বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী ইলিয়াসের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা রেখে তারা এখনো ইলিয়াসের জন্য পথ চেয়ে আছেন। তারা বলছেন, স্বজন হারানোর ব্যথা প্রধানমন্ত্রী বোঝেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (অপরাধ পশ্চিম) রেবেকা সুলতানার সঙ্গে চাঞ্চল্যকর এই মামলাগুলো নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না।
তিনি এই প্রতিবেদককে এআইজি মিডিয়া সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (মিডিয়া) জালাল উদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এএ/এআর/০৯.৩১ঘ.)