ঢাকা: পরীক্ষার হল। পরীক্ষা চলছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। এরই মধ্যে বেজে উঠল কোনো এক পরীক্ষার্থীর মুঠোফোন। এসএমএস। চলে এসেছে প্রশ্নের উত্তর। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কারীরা। শুক্রবার সকাল নয়টায় শুরু হওয়া পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেলা ১২টায়। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ ও ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে চেহারায় ক্ষোভের ছাপ আলতাফ মাসুদের। লক্ষ্মীবাজারে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে কথা হয় তার সঙ্গে। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘এভাবে কী মেধার মূল্যায়ন হয় বলেন? এতদিন সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিলাম কিন্তু হলে এসে যখন দেখলাম পাশের সিটের পরীক্ষার্থী মুঠোফোনেই এমসিকিউয়ের সব উত্তর পেয়ে গেছেন, তখন মনটাই ভেঙে গেল।’ তার হলে একাধিক পরীক্ষার্থীর মুঠোফোনে উত্তর পৌঁছেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পরীক্ষার আগ রাত বৃহস্পতিবারই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি শক্তিশালী চক্র এর সঙ্গে জড়িত বলে সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর চক্রের সদস্য দুয়েকজন শিক্ষার্থী কৌশলে প্রশ্নপত্র নিয়ে হল থেকে বের হয়ে যান। পরে তারা এমসিকিউ প্রশ্নগুলো দ্রুত সমাধান করে চুক্তি হওয়া পরীক্ষার্থীদের মুঠোফোনে পাঠিয়ে দেয়। পরীক্ষার হলে মুঠোফোন নেয়া কিংবা খোলা রাখা নিষিদ্ধ হলেও ওই চক্রের সদস্যরা প্রভাব খাঁটিয়ে হলে দায়িত্বরত পরিদর্শককেও ‘ম্যানেজ’ করেন।
আবুল কালাম আজাদ নামে এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার পরীক্ষার শুরুতেই প্রশ্ন ও উত্তরপত্র নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো টিতে ১০০টি এমসিকিউয়ের কম ছিল। আবার লিখিত খাতার পাতাও কম ছিল। পরে তাড়াহুড়ো করে এসব খাতাপত্র পরিবর্তন করে আনা হয়। তবে এরই মধ্যে বেশ সময় চলে যায়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, টাকা বিনিময়ে পরীক্ষার আগে রাতে প্রশ্ন কিনতে পাওয়া গেলে তো আর মেধার মূল্যায়ন হল না। অসাধুরা এভাবে পার পেয়ে গেলে মেধাবী সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের কী হবে? ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়ে ফোন করেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এসব অভিযোগ করেছেন।
নাজমুল আশারাফ নামে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, সরকারি-বেসরকারি অনেক পরীক্ষার আগেই এভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তিনি তার বন্ধুদের মাধ্যমে শুনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চক্র লাখ টাকার বিনিময়ে এ প্রশ্নপত্র বিক্রি করছে। শর্ত হচ্ছে, এ প্রশ্ন নিয়ে বাইরে আসা যাবে না। যারা এ প্রশ্ন সরবরাহ করবেন তাদের গোপন আস্তানায় গিয়ে পরীক্ষার্থীকে প্রস্তুতি নিতে হবে। গোপনীয়তা রক্ষায় চাকরিপ্রার্থীর মোবাইল ফোনটিও পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সঙ্গবদ্ধ ওই চক্রের কাছে জমা রাখতে হয়।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে এসব অনৈতিক কাজ করে আসছে। এর বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে বেশির ভাগ সময়ই পরীক্ষার্থীদের কাছে যেসব প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয় তা পুরোপুরি মেলে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে এনিয়ে দ্বিতীয়বার ওই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও পান না চাকরি প্রার্থীরা।
এর আগেও সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বেসরকরি ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঘটনা পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পুরেপুরো বন্ধ হয়নি অসাধু চক্রের কার্যক্রম।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘গতরাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর আমরা ঘটনা তদন্ত করে দেখেছি। আমাদের নিজস্ব টিম বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু কোথাও এর সত্যতা মেলেনি।
(ঢাকাটাইমস/ ২৬ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ ১৯.১৯ঘ.)