ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নির্বাচনে এবার হবে মর্যাদার লড়াই। দু’দলেরই রয়েছে হাই ভোল্টেজ প্রার্থী। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগের পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এই আসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। সভাবতই বিএনপি চাইবে যেকোন ভাবে মির্জা ফখরুলকে বিজয়ী করতে। অন্যদিকে কেবিনেট মন্ত্রী ও একনেকের সদস্য হিসাবে এলাকায় রয়েছে রমেশ চন্দ্র সেনের একটা ব্যাপক প্রভাব । ইতোমধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বেশ কয়েকটি জনসভা করে গেছেন।
মির্জা ফখরুলের পক্ষে তাঁর ভগ্নিপতি বিএনপি নেতা সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমানও জনসভা করেছেন। পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এখন ঘনঘন ঠাকুরগাঁও আসছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করছেন ও ব্যাপক গণসংযোগে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে কিছুদিন আগে এলাকায় এসেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এবং বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। মোটকথা সামনের দিনগুলোতে বড় দু’দল আদাজল খেয়ে ভোটযুদ্ধে নামবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ঠাকুরগাঁওÑ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন ১ লাখ ৭০ হাজার ১০১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার ৪১১ ভোট। তার আগের নির্বাচনে অর্থাৎ ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১০ ভোট। আর রমেশ চন্দ্র সেন ভোট পেয়েছিলেন ৯৬ হাজার ৯৪৮।
রমেশ চন্দ্র সেন প্রথম ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য খাদেমুল ইসলামের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তিনি মির্জা ফখরুলকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায়, প্রতিবারই পালাবদল হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় রয়েছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসন। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় এই আসনের মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৭। এবার ৪১ হাজার ভোটার বেড়েছে। এবার এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭২৫। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার রয়েছে হিন্দু ভোটার। ৭০ শতাংশ ভোট পড়লে, আওয়ামী লীগ পাবে প্রায় ৮০ হাজার ভোট। বিএনপিকে জিততে হলে এই সংখ্যাটি হিসাবে রাখতে হবে।
তবে বিএনপি’র স্থানীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনে পালাবদল হচ্ছে। এবার বিএনপি’র পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
রমেশ চন্দ্র সেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ৫ বছরে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের। ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল ও ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ডাবল শিফ্ট চালুসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক নতুন ভবন নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে, গ্রামে গ্রামে নতুন নতুন রাস্তা হয়েছে। তিনি জনসভাগুলোতে উন্নয়নের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আরও উন্নয়নের জন্য তিনি ভোট চাচ্ছেন।
অপরদিকে মির্জা ফখরুল এবার পালাবদলের সুবিধায় রয়েছেন। বিএনপি’র একজন নেতা জানান, এক লাখ ২০ হাজার হিন্দু ভোট বাদ দিয়েই আমরা হিসাব করি। মির্জা ফখরুল জামায়াত ও সমমনা দলের ভোট পাবেন। এই সংখ্যাটি আনুমানিক ৩৫ হাজার। শহরের সুশীল সমাজের ভোটও বেশি আশা করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকলেও সাধারণ ভোটারদের অনেকেই মির্জা ফখরুলকে পছন্দ করেন। তাদের ভোটও পাবেন তিনি। জাতীয় পার্টি যদি এবার মহাজোটে না থাকে, তাহলে লাভ হবে বিএনপি’র। জাতীয় পার্টির ভোটও এখানে প্রায় ৩০ হাজার। সবদিক পর্যালোচনা করলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র হাই ভোল্টেজ এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে কঠিন। দু’দলই বলছে তাদের প্রার্থীর জয় হবে। তবে সময় যত যাচ্ছে, ভোটের হিসাবও পাল্টাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের আরও যারা প্রার্থী রয়েছেন, তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুল হোসেন বাবু, সাধারণ সম্পাদক সাদেক কুরাইশী, পৌর মেয়র এসএমএ মঈন, ইন্দ্র নাথ রায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটো।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কুরাইশী বলেন, সব দ্বন্দ্ব ও মান অভিমান ভুলে এক হয়ে কাজ করলে ঠাকুরগাঁও-১ আসন ধরে রাখা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হবে।
তবে মির্জা ফখরুলকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হলে বিএনপি’র আর কেউ মনোনয়ন চাইবেন না বলে জানিয়েছেন নেতারা। জাতীয় পার্টির আব্দুল করিম ও সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী এবং সিপিবি’র অধ্যক্ষ সৈয়দ মেরাজুল হোসেন ও আখতার হোসেন রাজা মনোনয়ন চাইতে পারেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক তৈয়মুর রহমান বলেন এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে পারে। বিএনপির জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আসনে প্রার্থী হওয়ায় তাকে বিজয়ী করতে ১৮ দল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
(ঢাকাটাইমস/ ১৮ নভেম্বর/ প্রতিনিধি/ ইইউ/এমআর/ঘ.)