logo ০৫ মে ২০২৫
কপাল পুড়ছে, কপাল খুলছে
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
২৪ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:৩৮:৫৩
image


ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে এমন শতাধিক অজনপ্রিয় সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে ছিটকে পড়েছেন মনোনয়ন দৌড় থেকে। কপাল পুড়তে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। অন্যদিকে কপাল খুলছে ওইসব আসনের সাবেক সংসদ সদস্যসহ নতুন কিছু মুখের। আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মনরঞ্জণশীল গোপাল আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়কে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকায় মনরঞ্জণশীলের অবস্থা ভাল না। দুর্নীতি-অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে বর্তমান এই সাংসদের বিরুদ্ধে। তার পরিবর্তে গোয়েন্দাসংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে সতীশ চন্দ্র রায়ের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতার মনোনয়ন প্রায় অনেকটাই নিশ্চিত বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।  

নীলফামারী-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ মারুফ সাকলাইনের জনপ্রিয়তা গত প্রায় পাঁচ বছরে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সাংসদ হওয়ার আগে এলাকার নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে তার অবস্থান ভাল থাকলেও এখন তাকে কেউই চান না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তার পরিবর্তে ওই আসন থেকে নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে পারেন ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী। গাইবান্ধা-২ আসনের সাংসদ মাহবুব আরা গিনির পরিবর্তে এড. শামসুল আলম হিরু মনোনয়নের লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। মাহবুব আরা গিনি সাংসদ হওয়ার পর দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি করে নানাভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। এসব কারণে তার মনোনয়ন অনেকটা অনিশ্চিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি ত্রাণের টাকা, চাল, গম আত্মসাত ও স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া। যাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একাধিকবার অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়েও ছিটকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই নেতা। তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক মাহমুদ হাসান রিপন মনোনয়ন পেতে পারেন। তাছাড়া এলাকাতেও ছাত্রলীগের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতির ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

টিভি টকশোতে সবর উপস্থিতি নওগাঁ -৬ আসনের সাংসদ ইসরাফিল আলমকে সবার থেকে একটু আলাদা করেছে। কিন্তু এলাকায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকা- তাকে এতটাই অজনপ্রিয় করে তুলেছে যে আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তার পরিবর্তে ওই আসন থেকে শাহীন মনোয়ারা হক নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে পারেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী আসন রাজশাহী-১। সূত্র বলছে, তার পরিবর্তে আগামী নির্বাচনে ওই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন পুলিশের সাবেক ডিআইজি মতিউর রহমান। বিগত সময়ে স্থানীয়  জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ায় আওয়ামী লীগের লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ। রাজশাহী-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ সম্পর্ক ছিল খুবই কম। তাই আগামীতে ওই আসনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন তিনি। তার পরিবর্তে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুন্নেছা তালুকদারকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। রাজশাহী-৫ আসনে বর্তমান সাংসদ কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাও এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তার পরিবর্তে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ তাজুল ইসলাম ফারুকের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ ওয়াদুদ দারা নিজের ও পরিবারের সদস্যেও দুর্নীতির কারণে ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক বিতর্কিত। তার তুলনায় তাজুল ইসলাম জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন।

সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারও গত প্রায় পাঁচ বছরে নান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তাই এবার নাটোর-২ আসন থেকে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন তিনি। মেহেরপুর-১ আসনের বর্তমান সাংসদ জয়নাল আবেদিনের জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়াজান আলী। সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জয়নাল আবেদিন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।  যে কারণে এলাকার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তার ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। অসুস্থতার কারণে কুষ্টিয়া-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ রশিদুজ্জামান দুদু আগামী নির্বাচনে লড়বেন না বলে ঠিক করেছেন। তার পরিবর্তে ওই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। দলীয় সূত্রে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে।

যশোর-১ আসনে বর্তমান সাংসদ ও শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিনের অবস্থা ভাল না। তার পরিবর্তে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিনু ওই আসন থেকে নৌকামার্কার প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। সাংসদ ও মন্ত্রী হওয়ার পর এলাকা হাতে কয়েকবার গিয়েছেন যশোর-২ আসনের সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ। যে কারণে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও আর তার সঙ্গে নেই। তার পরিবর্তে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়া নির্বাচনকে  সামনে রেখে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও মনিরুল ইসলামের কথা ভাল বলা হয়েছে। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে নির্বাচনে নৌকা মার্কার জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যশোর-৩ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীতে পরিবর্তন আসতে পারে। ওই আসনের বর্তমান সাংসদ খালেদুর রহমান টিটোর পরিবর্তে মনোনয়ন পেতে পারেন আলী রেজা রাজু। যশোর-৫ আসনেও নৌকামার্কার প্রার্থীতে পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। ওই আসনের বর্তমান সাংসদ খান টিপু সুলতানের পরিবর্তে স্বপন কুমার ভট্টাচার্য মনোনয়ন পেতে পারেন বলে সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছে।

যশোর-৬ আসনের সাংসদ হুইপ শেখ আব্দুল ওহাবের পরিবর্তে সাবেম সাংসদ শাহাদুজ্জামান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে। বাগেরহাট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মীর সাখাওয়াত আলী বাদশার পরিবর্তে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান টুকু মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাখাওয়াত আলী বাদশা বিগত সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের মাধ্যমে এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। তাই আগামীতে তাকে ওই আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ হাবিবুন্নাহার খালেকের পরিবর্তে তার স্বামী তালুকদার আব্দুল খালেক এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। এছাড়া বাগেরহাট-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ ডা. মোজাম্মেল হকের পরিবর্তে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ মনোনয়ন পাবেন বলে সূত্রগুলো অনেকটাই নিশ্চিত করেছে।

খুলনার চারটি আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীতে পরিবর্তন আসতে পারে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-১ আসনের ননী গোপাল ম-ল বাদ পড়তে পারেন বলে জানা গেছে। তার জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস। খুলনা-৪ মোল্লা জালাল উদ্দিন বাদের তালিকায় রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তার জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজা। বিশস্ত সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাসের জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন ডুমোরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুল হাদী অথবা ড. মাহবুবুল ইসলাম। খুলনা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সোহরাআলী ছানা মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে আছেন। তার জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক সাংসদ নরুল হক।



সিরাজগঞ্জ-২  আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত (মুন্না)।  গত নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জান্নাত আরা হেনরী। কিন্তু বিগত সময়ে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলমার্কসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করায় হেনরীর অবস্থান এলাকায় নেতিবাচক। তাই হেনরির পরিবর্তে ডা. মুন্নাকে  মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি বলে দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।



দলের নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের সুখে-দুঃখে সব সময় দলের পাশে ছিলেন। ফেনীর নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ভাল ভূমিকা রেখেছেন। বিগত সময়গুলোতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আগের বারের প্রার্থীর চেয়ে ৫১ হাজার ৪২০ ভোটও বেশি পেয়েছিলেন।



দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান বাদ পড়তে যাচ্ছেন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম নজরুল ইসলাম। পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে সাংসদ গোলাম মাওলা রনি মনোনয়ন কেনেননি। ওখান থেকে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরিশাল-১ আসনের বর্তমান সাংসদ তালুকদার মোহাম্মদ ইউনূসের ভাল ভাবমূর্তি থাকলেও মনোনয়ন ফরমই কিনতে পারেননি তিনি। ওই আসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আবুল হাসান আব্দুল্লাহর মনোনয়ন নিশ্চিত বলে জানা গেছে। ঝালকাঠি-১ আসনে সাংসদ বি এইচ হারুণ মনোনয়ন দৌড়ে কার্যত ছিটকে গেছেন। ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির অনেকখানি এগিয়ে আছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে দলের সূত্রগুলো বলছে। তার বিপরীতে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন আশরাফুজ্জামান স্মৃতি ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ড. নুর নবী। টাঙ্গাইল-৬ আসনে খন্দকার আব্দুল বাতেনের পরিবর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটো মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। জামালপুর-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের পরিবর্তে প্রিন্সিপাল আব্দুর রশীদ মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রগুলো বলছে। এছাড়া শেরপুর-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হকের পরিবর্তে সাবেক সাংসদ খন্দকার মোহাম্মদ খুররাম মনোনয়ন পেতে পারেন। ময়মনসিংহ-২ আসনের বর্তমান সাংসদ হায়াতুর রহমান বেলালের পরিবর্তে আতাউল করিম রাসেল মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। ময়মনসিংহ-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকিরের পরিবর্তে আলী আহমেদ পাঠান অথবা ড. সামিউল হক নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রগুলো বলছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ-৪ আসনের  অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পরিবর্তে আমির আহমেদ চৌধুরী রতন অথবা ফয়জুর রহমান ফকির মনোনয়ন পেতে পারেন। ময়মনসিংহ-৬ আসনের বর্তমান সাংসদ মোসলেম উদ্দিনের পরিবর্তে আব্দুর রাজ্জাকের মনোনয়নের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। ময়মনসিংহ-৮ বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুছ ছাত্তারের পরিবর্তে মাহমুদুল হাসান সুমন অথবা সৌমিত্র চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। ময়মনসিংহ-১০ বিতর্কিত সাংসদ ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াসউদ্দিন আহমেদের পরিবর্তেন সাবেক সাংসদ আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের ছেলে পাভেল গোলন্দাজ মনোনয়ন পেতে পারেন বলে সূত্রগুলো বলছে।

নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা-২ আসনের বর্তমান সাংসদ আশরাফ আলী খান খসরুর পরিবর্তে আওয়ামী লীগ নেতা ও নব্য ধণাঢ্য শামসুর রহমান লিটন অথবা লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব.) নূর খান মনোনয়ন পেতে পারেন। নেত্রকোণা-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ মনজুর কাদের কোরাইশী বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তার জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন এডভোকেট আব্দুল মতিন। তাছাড়া সম্ভাব্যদের তালিকায় আছেন শামসুল কবির খান ও ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। নেত্রকোণা-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ রেবেকা মোমিনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্ক খুব একটা রাখেননি তিনি। যে কারণে আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নাও পেতে পারেন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো। তার জায়গায় নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে পারেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমেদ। নির্বাচনের জন্য এলাকাতে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন শফি আহমেদ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে আছেন বলে জানা গেছে।  

সূত্র আরও জানায়, কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন নাসিরউদ্দিন। এছাড়া ঢাকা-৬  আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তফা জামান মহিউদ্দিনের পরিবর্তে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে। এছাড়া ঢাকা-৭ আসনে মিজানুর রহমান খান দিপুর পরিবর্তে সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। ঢাকা-৮ আসনের বর্তমান সাংসদ সানজিদা খানম বাদ পড়তে পারেন। মনোনয়ন পেতে পারেন ড. আওলাদ হোসেন। গাজীপুরে দুটি আসনে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ রহমত আলীর পরিবর্তে ইকবাল হোসেন সবুজকে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা রয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকীর বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তার জায়গায় মনোনয়ন পেতে পারেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আকতারুজ্জামান। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন শামীম ওসমান। ওই আসনের বর্তমান সাংসদ সারাহ বেগম কবরী মনোনয়ন লড়াই থেকে ছিটকে গেছেন বলে জানা গেছে।

ফরিদপুরের অন্যান্য আসনের বিষয় নিশ্চিত না হলেও ফরিদপুর-১ আসনে আর প্রার্থী হতে পারবেন না বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান। বিগত প্রায় পাঁচ বছরে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সীমাহীন দুর্ব্যবহার, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশকাটিয়ে নিজের অনুসারী-অনুগামীদের মূল্যায়নসহ নানা অনিয়মের কারণে এলাকাবাসী তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করা হলে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হবে বলে দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েও দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। তাই আগামী নির্বাচনে ওই আসনে আমিন জুয়েলার্স খ্যাত কাজী সিরাজুল ইসলাম নৌকামার্কার প্রার্থী হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে,  আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঘনিষ্ঠদের কাছে ওই আসনে কাজী সিরাজকে দেয়ার ব্যাপারে তার চিন্তার কথা জানিয়েছেন।   

দলীয় সূত্র জানায়, ফরিদপুর-৪ আসনে এবার আর মনোনয়ন পাবেন না নীলুফার জাফরউল্লাহ। তার পরিবর্তে স্বামী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। এছাড়া সুনামগঞ্জ-৪ আসন থেকে মতিউর রহমানের পরিবর্তে নুরুল হুদা মুকুট মনোনয়ন পেতে পারেন। কুমিল্লা-৯ আসনের বর্তমান সাংসদ তাজুল ইসলামের পরিবর্তে নরুল ইসলাম হেলাল নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে পারেন। চাঁদপুর-২ আসনের বর্তমান সাংসদ এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) রফিকুল ইসলামের পরিবর্তে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/ ২৩ নভেম্বর/ এইচএফ/ ২৩.৩০ঘ.)