ঢাকা: গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মাহমুদ হাসান রিপন। নিজ নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়ার অবস্থা এলাকায় ভাল না। বিগত প্রায় পাঁচ বছরে সেচ্ছাচারিতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে নিজের লোকজনদের বসানো, টিআর-কাবিখার অর্থ ও ত্রাণ লুটপাটের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাই ওই আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগামীতে তাকে আর চান না বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মাহমুদ হাসান রিপনের নাম উঠে এসেছে। আগামীতে গাইবান্ধা- ৫ আসন আওয়ামী লীগের ঘরে রাখতে তাকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের বৈঠকেও ছাত্রলীগের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা ওই আসনের বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও বৈঠকে তুলে ধরেছেন। তারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর ক্ষেত্রে পরিবর্তন চেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ফজলে রাব্বী মিয়া এলাকায় নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে গা ভাসিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ-সম্পর্ক ভাল না। এলাকায় নিজের অনুসারী গোছের কয়েকজনকে নিয়েই ওঠাবসা সাংসদ ফজলে রাব্বীর। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, সাংসদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় দলের নেতাকর্মীরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এতে দলীয় কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা জানিয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবরও লিখিত অভিযোগ করেছেন দলের সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ফজলে রাব্বীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এসব নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একাধিকবার প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছে। সাংগঠনিকভাবে তার অযাচিত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল করেছে তারা। একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে দলের নেতাকর্মীরা তাকে প্রকাশ্যে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। এসব নিয়ে দলীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি ওয়ারেছ আলী প্রধান বলেন, আগামী নির্বাচনে সাংসদ ফজলে রাব্বীকে মনোনয়ন দেয়া হলে আওয়ামী লীগকে গাইবান্ধা-৫ আসনে চরম ভরাডুবির মুখে পড়তে হবে। তিনি বলেন, ‘ফজলে রাব্বী জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এলেও এখনও জাপা নেতাদের সঙ্গেই তার বেশ সখ্যতা। এখনও জাপা নেতার চরিত্র বদলাতে পারেননি তিনি।’
ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি. এম সেলিম পারভেজ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সাংসদ ফজলে রাব্বী নির্বাচিত হওয়ার পর চেহারা পাল্টে ফেলেছেন। নির্বাচনের আগে রাত বিরাতে চরাঞ্চলে তাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীরা তার কাছে কোনো পাত্তা পায়নি। একারণে ২০১০ সালের ৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে দলের স্থানীয় রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে মাহমুদ হাসান রিপন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গাইবান্ধাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। দল আমাকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচনে জয়ী হবো বলে বিশ্বাস করি।
(ঢাকাটাইমস/ ২২ নভেম্বর/ এইচএফ/ ১৫.০৪ঘ.)