logo ০৪ মে ২০২৫
পদ্মায় নতুন মেরুকরণের আভাস
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
২১ জানুয়ারি, ২০১৪ ১১:০৩:২১
image


ঢাকা: পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন না করতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেই হেঁটেছিল জাপানের উন্নয়ন সহযোগী জাইকা। কাজ শুরুর আগ মুহূর্তে দাতাদের অবস্থানের কারণে বেকায়দায় পড়তে হয় সরকারকে। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার নিজ অর্থায়নে সেতু করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

শুরু হয়েছে নদী শাসন এবং সংযোগ সড়কের কাজ। মূল সেতু নির্মাণের দরপত্রও ডাকা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই সেতু নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী। সরকার জানিয়েছে আগামী জুন নাগাদ মূল সেতুর কাজ শুরু করতে চায় তারা।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতি মাসে স্ফীত হচ্ছে। এই অবস্থায় নিজ অর্থায়নে সেতু করা কোনো ব্যাপার না বলেও মনে করছে সরকার। সব যখন প্রায় চূড়ান্ত, তখন আবার তৈরি হলো নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা। জাইকা জানিয়েছে পদ্মা সেতুতে ফিরতে চায় তারা। তবে সরকার চাইলেই এটা হবে।

পদ্মা সেতুতে সরকার জাইকার অর্থায়ন চায় কি-না, তা নিশ্চিত না এখনও। এর আগে সরকার জানিয়েছে, নিজের টাকায় সেতু করলেও বিদেশি অর্থায়ন করবে না তারা।

বাংলাদেশে জাইকার নতুন প্রধান প্রতিনিধি মিকিও হাতায়েদা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে তারা এ প্রকল্পের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সরকার এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি আলোচনায় বসতে তৈরি আছেন।

২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু করার প্রকল্প এগিয়ে নেয়। সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) এবং আইডিবির (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) সঙ্গে চুক্তিও করে সরকার। ২৯০ কোটি ডলারের এই সেতু করতে বিশ্বব্যাংকের দেয়ার কথা ছিল সর্বোচ্চ ১২০ কোটি ডলার। এ ছাড়া জাইকার ৪০ কোটি, এডিবির ৬১ কোটি এবং আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি ছিল ১৪ কোটি ডলার। বাকি অর্থায়ন করার কথা ছিল বাংলাদেশ সরকারের। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে তৈরি হয় জটিলতা। একটি সংস্থা সরে গেলে অন্যরাও এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে নাÑ এমন চুক্তি থাকায় বাকিরাও সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে বিশ্বব্যাংক পরে ফিরে আসলে ফেরে অন্যরাও।

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মামলায় আসামি না করার ঘটনায় বিশ্বব্যাংকের টানাপড়েনের এক পর্যায়ে সরকার এই প্রকল্পে সংস্থাটির সহায়তা না নেয়ার ঘোষণা দেয়। আর পদ্মা সেতুতে সঙ্গে সঙ্গে অন্য সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ত থাকার অধ্যায়ও শেষ হয়ে যায়।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে ফিরে আসতে জাইকার আগ্রহকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘জাইকা যদি পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় তবে সেটা দেশের জন্য সুখবর। কারণ, এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কিছুটা কমবে। তাছাড়া জাইকা আসলে অন্য দাতারাও আসার আগ্রহ দেখাতে পারে।

জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এই সময়কে বলেন, জাইকা যদি এ প্রকল্পে ফিরতে চায় তাহলে সেটা বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি। তারা প্রস্তাব দিলে অবশ্যই সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এতে ওই অঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি আসবে বলেও এক গবেষণায় ওঠে এসেছে। এই সেতু হলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ১.২ শতাংশ বাড়বে বলেও ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই হিসাবে পদ্মা সেতু হলে বছরে বাংলাদেশের আর্থিক লাভ হবে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

(ঢাকাটাইমস/ ২১ জানুয়ারি/এইচএফ/এআর/ ঘ.)