ঢাকা: গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে জোটের শরিক দলের অন্য নেতারা থাকলেও ছিলেন না জামায়াতের নেতারা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জামায়াতের সঙ্গে আপাত দূরত্বে এই কৌশল কেবল রাজধানীতে। এই নির্বাচনে যারা ভোট দেয়নি তাদের ধন্যবাদ জানাতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ঘোষিত এ কর্মসূচি ঢাকার বাইরে পালিত হয়েছে ১৮ দলের ব্যানারেই।
গত বৃহস্পতিবার বগুড়ায় বিএনপি ও জামায়াতের কর্মসূচি পালনও আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য। দুই দলই এদিন জেলায় হরতাল ডাকে, তবে তা আলাদা দাবিতে। বিএনপির হরতাল ছিল তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণে আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে। আর জামায়াতের হরতাল ছিল এক শিবিরকর্মী নিহতের প্রতিবাদে। একই দিন দুই দলের একই কর্মসূচি যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষণ কি না, সে বিষয়ে বগুড়ায় দল দুটির নেতারা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে নজিরবিহীন সহিংসতার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে বিএনপি নেতারা এসব সহিংসতার জন্য জামায়াতকে দায়ী করে নিজেদের দায় অস্বীকার করেছেন। আর সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ কারণে আপাতত জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির একধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে এটা যে সাময়িক কৌশল, তা স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতারা।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পরও একই কৌশল নিয়েছিল বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার পর তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে হাজারো মানুষের আন্দোলন শুরুর পর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি। এরপর বেশ কয়েক দিন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি দলটি। কিন্তু মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননার গুজব তুলে হেফাজতে ইসলাম মাঠে নামার পর আবার জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়েই কর্মসূচি পালন শুরু করে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতের সাম্প্রতিক এই দূরত্ব অবশ্যই কৌশলগত। ভোটরে অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে বিএনপি। এই আন্দোলনে সফলতা পেতে যা দরকার, তাই করবে বিএনপি।’
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক এখন পর্যায়ে, সেটা স্পষ্ট হবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে। বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের নেতারা এলাকায় প্রচারও শুরু করেছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও সিইসি জানিয়েছেন, যেহেতু এ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না তাই যে কেউ এতে অংশ নিতে পারবে। এ অবস্থায় জামায়াত ও বিএনপি সমঝোতা করে নাকি আলাদাভাবে নির্বাচন করবে, সে বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়েই সিদ্ধান্ত হবে।
তবে জামায়াত এ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করেই যেতে চায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করেই তারা নির্বাচন করতে চান। বিএনপি জানিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করবে তারাও। তবে এই উপজেলায় নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপি নেতা মজিদুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেই হবে এই সমঝোতা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়টি নিয়ে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। জামায়াতের ভোটব্যাংক বিবেচনায় না রাখার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তারা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিমা চাপের মুখে এখন জোট ভাঙলে সেটা রাজনৈতিক পরাজয় হবে বলেও মনে করছেন দলের নেতারা।
১৯৯০ সালে গণতন্ত্রে ফেরার পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট বাড়লেও কমেছে জামায়াত ও জাতীয় পার্টির। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১২ শতাংশের বেশি ভোট পেলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তা চার শতাংশ কমে যায়। পরের দুটি নির্বাচনে জামায়াত পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেলেও সেটা তাদের সার্বিক ভোটচিত্র কি না, তা বোঝা কঠিন। দুটি নির্বাচনেই জামায়াত অংশ নিয়েছে ৫০টির কম আসনে। এসব আসনে বিএনপির সব ভোট পেয়েছে দলটি। আর বাকি আসনগুলোয় বিএনপিকে ভোট দিয়েছে দলটি।
প্রায় ১০০ আসনে জামায়াতের ভোট আছে ১০ থেকে ১৫ হাজার। আর জয়-পরাজয় নির্ধারণে পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় এই ভোটই। এ অবস্থায় দল দুটি আলাদা নির্বাচন করলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে- এই হিসাব কষছেন বিএনপি নেতারা।
(ঢাকাটাইমস/২৮ জানুয়ারি/এএফ/জেডএ.)