ঢাকা: ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ধরা হয়েছে ৩১৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে আসবে ৩১ কোটি টাকা। আর মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে আসবে ২৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সরকারি এই বরাদ্দের পরও ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা ঘাটতি থেকে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে এই বাড়তি টাকার সংস্থান কোথায় হবে তার কোনো জবাব নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছেই এই টাকার প্রস্তাব দেয়া হবে। নিশ্চয় তারা ব্যবস্থা করবেন।’
এটা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এক বছরের চিত্র নয়। প্রতি বছরই দেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়কেই একই সমস্যায় পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় কম থাকাই এর কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের মূল উৎস শিক্ষার্থীদের বেতন এবং আনুসাঙ্গিক নানা ফি। তবে এর পরিমাণ একেবারেই কম। দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ২০ টাকা, হলে সিট ভাড়া বছরে বড় জোর আড়াইশ টাকা। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবকটিই আর্থিক সংকটে আছে।
এই সংকট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিত্রাণ দিতে শিক্ষার্থীদের বেতন এবং হলের সিট ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ইউজিসি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দ্বিধা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইউজিসি বলছে, এই যুগে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসিক বেতন ২০ টাকা হতে পারে না। তারা এসব বেতন এবং ফি যৌক্তিক পরিমাণ নির্ধারণের পক্ষে। মানভেদে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন একেক রকম হতে পারে বলেও মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এ সংক্রান্ত একটি বার্ষিক প্রতবেদন তৈরি করেছে কমিশন। এটি আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এই প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছেও উপস্থাপন করা হবে।
ইউজিসির ৩৯তম বার্ষিক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের এক শতাংশ। এই বাজেটে বিশ্ববিদ্যালগুলোর ন্যূনতম চাহিদাও মেটানো যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করে কমিশন যে বাজেট সরকারকে দেয় তাও দেয় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ন্যূনতম চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না।
২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঘাটতি থাকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দিতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে কমিশন।
বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি বৃত্তি বাড়ানোর সুপারিশও করেছে ইউজিসি। কমিশন বলছে, দেশের সেরা মেধাবীরা প্রতিযোগিতা করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু সবার পক্ষে খরচ চালানো কঠিন। আবার মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকার যে পরিমাণ বৃত্তি দেয় তাও অপ্রতুল। ফলে খরচ মেটাতে অনেক শিক্ষার্থী ছাত্র পড়ায়। এতে তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে এবং তাদের মধ্যে পরীক্ষা পেছানোর দাবি উঠে। এই প্রবণতা বুয়েটসহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটের একটি অন্যতম কারণ বলে মনে হয়। এই অবস্থায় মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তির প্রবর্তনের পক্ষে ইউজিসি।
তবে ইউজিসির বেতন বাড়ানোর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বেতন বাড়িয়ে নয়, আরও বেশি বরাদ্দ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। তা না করে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ দিলে তার পরিণাম ভাল হবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান জানান, ইউজিসির প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণের শামিল। এটি বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ফুঁসে উঠবে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জানান, সরকারের অনেক খাত আছে যেখানে অর্থ অপচয় হয়। আর শিক্ষাখাতে টাকা দিতে সরকার কৃপণতা দেখায়। এটি না করে শিক্ষা উপকরণের দাম আরও কমিয়ে বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রস্তাব যৌক্তিক হলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ইউজিসির প্রস্তাব নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সবার মতামত নেওয়ার দরকার আছে।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরাসরি কিছু না বললেও বাজেট স্বল্পতার কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের ইচ্ছা অনেক, কিন্তু সম্পদ সীমিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিক্ষাখাতে অনেক বেশি বরাদ্দ দেয়, সে তুলনায় আমাদের বাজেট অনেক কম।
(ঢাকাটাইমস/ ২২জানুয়ারি/ এমএম/ এআর/ ঘ.)