logo ০৪ মে ২০২৫
শিশাবারে ইয়াবা-গাঁজা-হেরোইন!
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
২২ জানুয়ারি, ২০১৪ ১২:৩০:৪৪
image


ঢাকা: শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। প্রাইভেটকার থামলো বনানীর ১১ নম্বর সড়কের ই-ব্লকের ১৫৩ নম্বর বাড়ির সামনে। দ্রুত গাড়ি থেকে নামলো দু’জন তরুণ-তরুণী। লিফটে চড়ে সোজা চার তলায় ঢুকলো। আধো আলো, আধো অন্ধকার। ভেতরে থেকে আসা ঝাঁপসা আলোয় কাচের দরজায় চোখে পড়ল সাদা কাগজে লেখা ‘২১+ অনলি’। বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ আপনার পরিচয়পত্রও দেখতে চাইতে পারেন। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই অন্যরকম এক দৃশ্য নজরে এলো। হালকা নীলচে আলো। লাল, হলুদ ড্রিম লাইটও আছে দু’একটি। কিন্তু ধোঁয়ায় সবার চেহারাই অস্পষ্ট।

তামাক পোড়ানো গন্ধের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভারও পাওয়া যাচ্ছে। কানে আসছে লো-ভলিউমে বাজানো ইংরেজি গান। ততক্ষণে ‘মিন্ট আল্ট্রালাউঞ্জের’ কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম এই প্রতিবেদকের সামনে দাঁড়িয়ে। ‘মিন্ট আল্ট্রালাউঞ্জ’ বনানীর অভিজাত একটি শিশাবার। যেখানে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রতিদিনই শত শত তরুণ-তরুণীর আনাগোনা নিয়মিত ব্যাপার। যাদের অনেকের বয়স ২১ বছরের কম। কেউবা একা। কেউবা বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে আসে এখানে।

ক্রেতা পরিচয় দেয়ার পর আরিফ জানান, এক স্ট্যান্ড শিশার সর্বনিম্ন দাম একহাজার পঞ্চাশ টাকা। সঙ্গে ভ্যাট জুড়ে দিলে দাম দাঁড়ায় এক হাজার ২০০ টাকা। কথার ফাঁকে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখা গেল, দেয়ালে বড় মাপের দুটি টিভি লাগানো। বসার সোফাগুলো সচরাচর সোফার মতো নয়। এগুলো বেশ বড় বড়। নরম গদির কোনোটিতে দু’জন আবার কোনটিতে একজন হেলান দিয়ে কোলে তাকিয়া নিয়ে বসে কিংবা শুয়ে আছেন। তাদের সামনে রাখা গ্রামবাংলার হুঁকার মতো স্ট্যান্ড। সঙ্গে লম্বা পাইপ। সেবনকারীরা পাইপ মুখে নিয়ে শিশা পান করছেন। তাদের ছাড়া ধোঁয়ায় পুরো ঘরটাই অন্ধকার প্রায়। তবে শিশা সেবনকারীর বেশিরভাগের বয়স ত্রিশ পার হবে বলে মনে হচ্ছে না। এর মধ্যে চারজন তরুণীকেও চোখে পড়ল।

‘তামাক পোড়ানো গন্ধ পাচ্ছি’ জানতে চাইলে আরিফ দাবি করেন, শিশায় বিন্দুমাত্র এলকোহল জাতীয় কিছু মেশান না তারা। হয়ত সিগারেটের গন্ধ নাকে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশা সেবনের একটি আসরে যে পরিমাণ ধোঁয়া এক-একজন সেবনকারী গলার ভেতরে বা ফুসফুসে নেন তা ২০০টি সিগারেটের সমান।

শিশা পানে অনুভূতি কী। লাউঞ্জের উত্তর পাশে বসা তারিকুল ইসলাম জানান, ‘কিছুই না, জাস্ট সিগারেটের মতোই।’ তবে কেন পান করছেন? চোখ মেলে তাকাতে কষ্ট হলেও একবার একটু দেখে নিলেন প্রশ্নকর্তাকে। ‘নেশা ব্রাদার; বুঝলেন...।’ কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছিল মুখে।

তারিকুলের সঙ্গে কথা বলে সন্দেহ যেন একটু বাড়ল। কৌশলে আরিফের হাতে চাপ দিতেই সবই যেন বুঝে গেলেন তিনি। একপাশে নিয়ে এলেন এই প্রতিবেদককে। বললেন, ‘কী চাই। সবই পাবেন। চাইলে শিশার সঙ্গে এলকোহলও মিশিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে পরিমাণ বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে।’ বিষয়টি পরিষ্কার। বললাম, এখানে নয় বাড়িতে বসে খেতে চাই। আরিফ জানালেন সে ব্যবস্থাও আছে। বাইরে বিভিন্ন পার্টিতেও শিশা সরবরাহ করেন তারা। এর জন্য সার্ভিস চার্জ একটু বেশি গুনতে হবে।

এই সময়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘মিন্ট আল্ট্রালাউঞ্জের’ মতো বনানীর ‘আরজিলা রেস্টুরেন্ট’ গুলশান-২ এলাকায় ‘স্ট্রিট কাবাব’ রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে শিশা। এসব এলাকায় এমন শিশা লাউঞ্জ আছে দশটিরও বেশি। এছাড়া বারিধারা, ধানমন্ডি, বাড্ডা, উত্তরা, মহাখালী, রমনার বেইলি রোড, বাংলামোটর এলাকাতেও নামে-বেনামে গজিয়ে উঠেছে শত শত শিশাবার। কোনোটি চাইনিজ কিংবা অভিজাত রেস্টুরেন্টের নামে। নামে রেস্টুরেন্ট হলেও এখানে শিশার ব্যবসা বেশ জমজমাট। যেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শিশার নামে মাদকের নেশায় বুঁদ হচ্ছে। যাদের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ রয়েছে। অসামাজিক কাজের অভিযোগও আছে বেশ কয়েকটি বারের বিরুদ্ধে। পুলিশি অভিযানের ভয়ে অনেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে খুলে বসেছেন শিশালাউঞ্জ। স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বছর বেশ কয়েকটি শিশাবার থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করে তাতে গাঁজা পেয়েছে মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ এর তফসিলভুক্ত কোনো মাদকদ্রব্য না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ ছিল না। শুধু গাঁজা নয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে- ইয়াবা, হেরোইনের মতো ভয়াবহ মাদকও মেশানো হয় শিশায়।  

কী আছে শিশাতে

শিশায় ব্যবহার করা হয় ‘টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল’। এটি হাসিসের (গাঁজা) নির্যাস থেকে রাসায়নিক মিশ্রণে তৈরি হয়। ১২০ কেজি হাসিস থেকে পাওয়া যায় এক কেজি ‘টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল’। জাফরান, আঙ্গুরের রস, কস্তুরি, চেরিফলসহ সুগন্ধির ফ্লেভারে মিশে এই উপাদান আর বোঝার উপায় থাকে না। অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ‘টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল’ উপাদানকে ‘ক’ ক্যাটাগরির মাদক বলা হয়। এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মস্তিষ্কের কোষ এবং দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে।

হাতের নাগালেই শিশা লাউঞ্জ

সরেজমিনে ও এই সময়ের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানের এক্সিট লাউঞ্জ, জোন জিরো লাউঞ্জ, মাউন্ট আল্ট্রা লাউঞ্জ, জাবেদ কাড লাউঞ্জ, ক্লাব অ্যারাবিয়ান, মোহাম্মদপুরের অ্যারাবিয়ান নাইটস, ফুড কিং, ধানমন্ডির সেভেন টুয়েলভ লাউঞ্জ, ডমিনেন্স পিজা, কিউ কিউ টি অ্যান্ড লাউঞ্জ, এইচ টুও লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, ঝাল লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট শিশাসেবীদের খুব পরিচিত জায়গা। এছাড়া বনানীর মিন্ট আল্ট্রালাউঞ্জ, আরগিলা, কফি হাউস, বেইজিং লাউঞ্জ, মিট লাউঞ্জ, খিলক্ষেতের হোটেল রিজেন্সি ও বেইলি রোডের দু’-একটি রেস্টুরেন্ট শিশার জন্য অন্যতম। এসব লাউঞ্জে শিশাসেবনের পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপেরও অভিযোগ শোনা গেছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই এসব লাউঞ্জে প্রতিনিয়তই আসা-যাওয়া করে। ১৬ থেকে ২০ বয়সী কিশোর-কিশোরীরাও এসব নেশায় বুঁদ হচ্ছে না বুঝে।

বনানীর ১০ নম্বর রোডে ব্লক-ডির ৬৬ নম্বর বাড়িতে ‘আরগিলা রেস্টুরেন্টে’ কথা হয় সায়েম আদনানের সঙ্গে। বয়স ১৮ থেকে ১৯ এর মধ্যে। বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্ধুকে নিয়ে চলে এসেছে শিশা লাউঞ্জে। কেন এমনটি করেছ? জানতে চাইলে আদনান বলে, ‘কী করব। শিশা খেতে ভালো লাগে। ফিলিংসটাই আলাদা।’ শিশায় যে মাদক আছে তুমি জানো? জবাবে সে জানায়, ‘মাদক নেই। এগুলো তো শুধুই ফলের ফ্লেভার। তবে মাথা একটু ঝিম ঝিম করে।’ আদনানের মতো অনেক ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে-মেয়েদের সময় কাটানোর প্রিয় জায়গা এসব শিশা লাউঞ্জ।

গুলশান-২ নম্বরের ৪৩ নম্বর রোডের মাথায় ‘স্ট্রিট কাবাবের’ কর্মকর্তা রুবেল জানান, পান সালসা, লিমোরা ডিলাইট, অরেঞ্জ কাউন্টি, ওয়াইল্ড মিন্ট, কিউই,ট্রিপল আপেল, চকোলাভা, ক্রেজিকেয়ারি, ব্লুবেরিসহ বিভিন্ন ফ্লেভারের শিশা পাওয়া যায়। চাইলে ইয়াবা, গাঁজা, বিয়ার, হেরোইন, কিংবা দামি হুইস্কিও শিশার সঙ্গে বেশ ভালো করেই মেশাতে পারেন তিনি।

নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের

শিশা নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হওয়ার পর গত বছর হাইকোর্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকারকে সভাপতি করে একটি আন্তঃসংস্থা তদন্ত বোর্ড গঠন করে। বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু তালেব।

এই বোর্ড গত বছরের ১৪ মার্চ সরেজমিনে গুলশানের বেশ কিছু শিশাবার অভিযান চালায়। তারা আটটি লাউঞ্জ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। যেগুলো পরীক্ষা করে পাঁচটিতেই গাঁজার অস্তিত্ব পায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০-এর তফসিলভুক্ত কোনো মাদকদ্রব্য নয়। তাই এর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০-এর বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু শিশার সঙ্গে গাঁজা পরিবেশিত হলে সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করা যায় বলে বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অবিলম্বে শিশাকে মাদক হিসেবে ঘোষণা করা, লাইসেন্স প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিশাবারের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা, ২৫ বছরের নিচে শিশাবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ও ঘন ঘন মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে শিশাবারে মাদকের অপব্যবহার বন্ধ ও ব্যবহারকারীদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

শিশা আলোচনায় আসে ২০০৮ সালে

দেশে শিশা বিষয়টি আলোচনায় আসে ২০০৮ সালে। ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ডেকাগন ও লেজার লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অভিযান চালায়। অভিযানে ছয়টি আধুনিক হুঁকাসহ (শিশা স্ট্যান্ড) খোকন, হাবিবুর ও বায়েজিদ নামে তিন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অভিযানে প্রমাণ হয়, ভয়াবহ মাদকের উপাদান ব্যবহার হচ্ছে শিশায়। অভিযানে পাঁচ কেজি ‘টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল’ উদ্ধার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এর পর আর রেস্টুরেন্টগুলোতে শিশার ব্যাপারে নিয়মিত নজরদারি ছিল নানা প্রশাসনের। এই সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে শিশাবারগুলো। বছর দুয়েক আগে শিশা নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হলে নামকাওয়াস্তে শিশার একটি পরীক্ষা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ওই পরীক্ষায় নিকোটিন ছাড়া শিশায় তারা কোনো মাদকেরই অস্তিত্ব পাননি।

কোথা থেকে এলো এই শিশা

এই উপমহাদেশে প্রথম মুঘল সম্রাট আকবরের পারস্য কবিরাজ আবুল ফতেহ জিলানী হুঁকার ডিজাইন উদ্ভাবন করেন। তামাক পোড়ানো ধোঁয়া, পানিতে পিউরিফাই এবং ঠা-া করে সেবন করার পদ্ধতি শুরু হয় তখন। আরবীয়রা এটাকে ঘধৎমরষবয বলে। কাছাকাছি আরো কিছু শব্দ আছে ঘধৎমববষধ, অৎমববষধ, অৎমরষবয, অৎমরষববÑ ঘধৎমরষবয শব্দটি পারসিয়ান শব্দ হāৎমযরষব হতে উৎপত্তি। ধারণা করা হয় এটা সংস্কৃতি শব্দ ‘নারিকিলা’ এর পরিবর্তিত রূপ। দেখা যাচ্ছে, ঘুরে ফিরে আমাদের নারিকেলের হুঁকা থেকেই এই জিনিসের উৎপত্তি, নামকরণ। বর্তমান যুগে সারা বিশ্বে ঝযরংযধ/ংযববংযধ নামটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ আমেরিকা-ইউরোপে এই নামটির প্রচলন বেশি। যদিও ঝযরংযধ শব্দের অর্থ হুঁকা বা হুঁকার মাধ্যমে সেবনযোগ্য তামাক। মতান্তরে শিশার মানে কাচ। হুঁকার নিচে পানির জারটা কাচের তৈরি হয়, সে কারণেও এই নামকরণ হতে পারে।

অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিব যা বললেন’

অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার এই সময়কে বলেন, শিশাবার খোলার জন্য এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন দেয়া হয়নি। অনুমোদন দেয়ার কোনো কারণও নেই। শিশাবার খোলার সুযোগ দিয়ে সুযোগের অপব্যবহার তো করতে দেয়া যাবে না। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদনে শিশাবারগুলো বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে এখনও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।

কী বলছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ অঞ্চলের উপ-পরিচালক গোলাম কিবরিয়া এই সময়কে বলেন, তাই শিশাকে মাদকদ্রব্যের তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। যাতে শিশাবারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু এখনও এই প্রস্তাবের কোনো অগ্রগতি নেই।

চিকিৎসকরা যা বলছেনÑ

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন এই সময়কে বলেন, শিশায় মাদক থাকুক কিংবা না থাকুক এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিশা থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার পরিমাণ ২০০টি সিগারেটের সমান। এর মধ্যে উচ্চমাত্রার টক্সিন, কার্বন মনো-অক্সাইড, হেভি মেটালসহ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। এতে নিকোটিনের পরিমাণও সিগারেটের কয়েকগুণ। তাই ধূমপানে মানবদেহে যেভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় শিশার ক্ষতিকারক প্রভাব এরচেয়ে কম নয়।

সমাজবিজ্ঞানীরা যা বলছেনÑ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম বলেন, ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শিশাবারে গিয়ে তরুণ প্রজন্ম যে শুধু মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে তা নয়; নৈতিকভাবেও তারা বিপর্যয়ের দিকেই ঢলে পড়ছে। শিশাবারে যেসব ছেলে-মেয়েদের আসা-যাওয়া তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। বারগুলোও অভিজাত এলাকায়। তাই এসব কর্মকা- বন্ধ করতে সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষগুলোকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এএসএ)