logo ০৪ মে ২০২৫
জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া নিয়ে দ্বিধায় বিএনপি
মহিউদ্দিন মাহী ও কিরণ সেখ, ঢাকাটাইমস
২৫ জানুয়ারি, ২০১৪ ২০:০৩:২৪
image

ঢাকা: গত কয়েক মাসে দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহিৃত হওয়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি। গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ কারার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।


তার ঐ বক্তব্যের পর গত কয়েকদিনে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে  তৃণমূল বিএনপিতে ভুল সিগনাল যাচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ মহলে দুই রকম বক্তব্য প্রচার থাকলেও সর্বশেষ শুক্রবার বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে বিভ্রান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি শুক্রবার বলেছেন, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আছে এবং থাকবে।


অথচ গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের পর একাধিক বিদেশি গণমাধ্যমে জামায়াত প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট ক্ষণস্থায়ী এবং নির্বাচনী। এটা কোনো আদর্শিক জোট নয়। সময় হলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তার এই বক্তব্যকেই বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করছিলেন দলের নেতারা। ফখরুলের শুক্রবারের বক্তব্যকে অনেকেই বিএনপি’র চেয়ারপারসনের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন।


জামায়াতকে নিয়ে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কে ভাটা পড়তে শুরু করে। তাদের এই সম্পর্কের অবনতি লক্ষ করা গেছে সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির সর্বশেষ সমাবেশে। সেটি ১৮ দলের সমাবেশ হলেও জামায়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এরআগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে কয়টি সমাবেশ করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট, তার সব কটিতেই জামায়াতের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।


তবে ঐ সমাবেশে জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি খালেদা জিয়া। ঐ সমাবেশের পর গতকাল ১৪ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলা্ম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জামায়াত বিএনপি সঙ্গেই থাকবে। 


দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন করলেও জামায়াত সক্রিয় থাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে। এসব আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সারা দেশে সহিংসতার অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন-পরবর্তী হিন্দুদের ওপর হামলা ও সহিংসতার পর সেই অভিযোগ আরো বড় হয়ে দেখা দেয়। জোটের শরিক ও রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে জামায়াতের সহিংসতার দায় বিএনপির ওপরও পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।এর পরেই মূলত জামায়াত ছাড়তে বিএনপির ওপর চাপ পড়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্যকে ‘কৌশল’ হিসাবে উল্লেখ করে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘জামায়াত নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যই সবকিছু তবে বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশল।’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক। তারপর বিএনপিকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিলে মানুষ মেনে নিবে। 


বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াত নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাই চূড়ান্ত। জোটে কোন দল থাকবে আর কোন দল থাকবে না। তা নির্ভর করছে জোটের উপর। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াই সেটি ভালো জানেন।


জামায়াত শিবিরের সঙ্গে জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোটের বিষয়টি সাময়িক এবং কৌশলগত। তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় দল হিসেবে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। এ বিষয়ে আমাদের দলীয় অবস্থান বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবহিত করেছি।   


এ বিষয়ে বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিমা রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াত শিবির নিয়ে দেশি-বিদেশী অনেকে অনেক কথা বলছে কিন্তু জামায়াত আমাদের নির্বাচনী জোট। এটা কোন আদর্শিক জোট নয়। আমরা তাদের সঙ্গে থাকবো কি থাকবো না তা সময় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


আর বিএনপি তার নিজ আদর্শ, নীতিগত অবস্থান নিয়ে পরিচালিত হয়। আমরা কাদের সঙ্গে জোট করবো কি করবো না সেটা বাইরের কেউ চাপ দিতে পারেনা। বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের আমলেই দেশে জঙ্গিবাদের অপতৎপরতার প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে।


(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/কেএস/এমএম/এআর)