logo ০৪ মে ২০২৫
ঢেলে সাজবে বিএনপি!
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
২৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০৫:৪৯
image


ঢাকা: নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে বিএনপির কৌশলগত ব্যর্থতা নিয়ে কথা হচ্ছে দলের ভেতরে বাইরে। কৌশলগত ভুল  আর জনসম্পৃক্ত আন্দোলনের বদলে সহিংসতার মাধ্যমে সরকারকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করানোর চিন্তা যে বুমেরাং হয়েছে, সেটা এখন মানছেন সব পর্যায়ের নেতারাই। খালেদা জিয়ার ডাকা কর্মসূচি সফল করতে সমর্থকদের নামাতে ব্যর্থ হওয়া নেতারা নিজেরাও ছিলেন নিস্ক্রিয়। এই অবস্থায় ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর চিন্তা জোরালো হচ্ছে বিএনপিতে।

এর অংশ হিসেবেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় দলের আসলে কতোটা লাভ হয়েছে সে বিতর্কও তৈরি হয়েছে দলে।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচির দিলেও বিএনপির আন্দোলনের পালে সেই অর্থে হাওয়া লাগেনি। গত ২৯ ডিসেম্বর দলের চেয়ারপার্সনের আহ্বানে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকেই মাঠে নামতে দেখা যায়নি।

নির্বাচনকালীন ‘দুর্বল’ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যেখানে কিছু করা যায়নি, সেখানে নির্বাচিত সরকারকে সহজে হটিয়ে দেয়া যাবে, সে চিন্তা করছেন না বিএনপির নেতারা। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আগে তাই দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং নিষ্ক্রিয় জেলা কমিটিগুলোকে পুনর্গঠনের কথা ভাবছে দল। পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটিতেও পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া তদারকি করবেন খালেদা জিয়া নিজে। এ ব্যাপারে তৃণমূলের মতামতও নেবেন তিনি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা দলের জাতীয় সম্মেলনও ঝুলিয়ে রাখতে চাইছেন না খালেদা জিয়া। মার্চের মধ্যেই তা শেষ করে নতুন কমিটি করার কথা ভাবছেন তিনি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল।

জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা। এই দুর্বলতা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সে চেষ্টাই চলছে। দলের চেয়ারপার্সন এ নিয়ে নেতাদেও সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম বলেন, ‘ঢাকাকেন্দ্রিক কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে আমাদের। সেই দুর্বলতা শিগগির আমরা কাটিয়ে উঠব।’

২০০৯ সালের ৯ জুন কেন্দ্র থেকে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৭২টিতে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের ভেতরে বিরোধসহ নানা কারণে এখনো ৮-১০টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বেশ কয়েকটি জেলায় কেন্দ্রের অনুমোদিত কমিটি বাদ দিয়ে স্বঘোষিত কমিটিতে সংগঠন চলছে। তাছাড়া স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অনেক অযোগ্যরা দলের নেতৃত্ব পেয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। বাদ পড়েছেন যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা।  যে কারণে, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি চরমে পৌঁছেছে। তাই কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের ডাক দেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে ওই অর্থে সক্রিয় ছিল না বিএনপি নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, কর্মসূচিতে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামার পরও দল তার যথার্থ মূল্যায়ন করেনি। তাই এবার নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন।

ঢাকা জেলায় বিএনপির কমিটি পরিবর্তন হচ্ছে না এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। নাজমুল হুদাকে সভাপতি ও আমান উল্লাহ আমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ভাঙায় নাজমুল হুদাকে বাদ দিয়ে সহ-সভাপতি আবদুল মান্নানকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। অথচ বিগত সময়ে বিএনপি আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা চোখে পড়লেও ঢাকা জেলা বিএনপি পুরোপুরোই ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুল সালামকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি।

ঢাকার অদূরে গাজীপুর বিএনপির অবস্থা নড়বড়ে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে সভাপতি ও ছায়েদুল ইসলাম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলায় কমিটি আছে। কিন্তু বিগত সময়ে হাতেগোনা কয়েকটি আলোচনা সভা ও সমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই কমিটি কাজ। ঢাকার আশপাশের মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলা পুরোপুরি ব্যর্থ। মানিকগঞ্জে দীর্ঘদিন পর নতুন কমিটি হলেও আন্দোলন সংগ্রামে তাদের তেমনটা দেখা যায়নি। নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা কমিটির নেতারা অবরোধ-হরতালে কখনো সক্রিয় কখনো নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন।

কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, বৃহত্তর ফরিদপুর, মাগুরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ অনেক সাংগঠনিক জেলার নেতারা সক্রিয়তার প্রমাণ দিতে পারেননি।

আন্দোলনে বিএনপির ভরসা ছাত্রদলের কর্মতৎপরতাও হতাশাজনক। যে ধারণা থেকে সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবের নেতৃত্বে যুবদলের কমিটি করা হয়েছিল তা পুরোপুরিই ভুল বলে মনে করেন দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ।

(ঢাকাটাইমস/ ২৯ জানুয়ারি/ এআর/ ঘ.)