ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই পর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি সমর্থিতরা জিতেছেন বেশি উপজেলায়। এই ফলাফল যত না চমক তৈরি করছে, তার চেয়ে বেশি চমক তৈরি করছে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের জয়। প্রথম পর্বে ১২টি এবং দ্বিতীয় পর্বে ৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো করেছেন আরও বেশি। দুই পর্বে মোট ৫৫টি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন জামায়াত সমর্থিতরা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চারজনের সাজা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সাজা হয়েছে বাংলাদেশে জামায়াতের গুরু গোলাম আযমেরও। একজনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। আপিল বিভাগে আছে বাকি মামলাগুলো। আবার ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় হয়েছে বিচারিক আদালতে। তার বিরুদ্ধে চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাও। এই মামলায় এতদিন রায় হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অবসরে যাওয়ার পর নতুন চেয়ারম্যান মামলাটির যুক্তিতর্ক নতুন করে শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই প্রক্রিয়া বেশিদিন লাগবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ কারাগারে বন্দি, বাকিরা বলতে গেলে পলাতক। কালেভদ্রে জোটের মূল শরিক বিএনপির সমাবেশে দেখা মেলে তাদের। এই অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যালয় খোলাই মুশকিল হয়ে পড়েছে জামায়াতের জন্য। আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে নজিরবিহীন সহিংসতার কারণে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে জামায়াত। যাত্রী বোঝাই গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা, পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা, সরকার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, খুন, সড়ক কেটে অবরোধ, নির্বিচারে গাছ কাটা, ককটেল হামলার কারণে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল বিদেশি রাষ্ট্রগুলোও দলটিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল। সহিংসতা চালিয়ে ৫ জানুয়ারির ভোট ঠেকাতে না পারা বিএনপিও ভোটের পরপর জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক চিরস্থায়ী নয় বলে জানিয়েছিল। রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে জামায়াত নেতাদের আসতেও নিষেধ করেন বিএনপি নেতারা।
এই পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে আশাতীত ফলাফলের পর জামায়াতের নেতা-কর্মী আর সমর্থকরা উৎফুল্ল। জামায়াত কীভাবে এত ভালো করলো? উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায় বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনা আর শৃঙ্খলার জন্য এগিয়ে গেছে জামায়াত।
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কিছুদিন জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রাখে বিএনপি। ভোটের পর পর দেশি-বিদেশি চাপে বিএনপি নেতারা জামায়াতের সঙ্গে জোট ভাঙার বিষয়েও কথা বলেন প্রকাশ্যে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধ হলে আমরা বাঁচি’। ঢাকাটাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন, ‘জামায়াতকে এই মুহূর্তে জোট থেকে বের করে দেয়া উচিত।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও দুটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট চিরস্থায়ী নয়, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক কখন ত্যাগ করা হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে সময় আসলেই।
জোট গঠনের একযুগ পর বিএনপি নেতাদের এই বক্তব্যে দুই দলের আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে শুরু হয় আলোচনা। কিন্তু ভোটের হিসাব কষেছেন বিএনপি নেতারা। এরশাদ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোট হিসাব করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের একক ভোট বিএনপির চেয়ে বেশি। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে একা মোকাবেলার চেয়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা সহজ ভেবে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় গেছে বিএনপি। আর প্রথম দুই পর্বে ভোটের ফলাফলের পর দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমে তারা আবার কাছাকাছি এসেছে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন তদারকির দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যে এলাকায় জামায়াতের প্রার্থী গ্রহণযোগ্য সেখানে আমরা জামায়াতকে সমর্থন দিচ্ছি, বাকি এলাকায় আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে তারা। এর ফলে দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়েছে।’ উপজেলা নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলোতেও এই সমঝোতা থাকবে বলেও জানান এই বিএনপি নেতা।
আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে বিএনপির এই কৌশলের বিষয়টি অস্বীকার করেননি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে তিনি বলেন, জনগণ ভোটের সুযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগকে না বলার চেষ্টা করছে। যেখানে যাকে ভোট দিলে আওয়ামী লীগকে হারানো যাবে সেখানে তাকেই ভোট দিয়েছে তারা।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কথার প্রতিফলন দেখা গেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। এখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী থাকলেও জয় পেয়েছে জামায়াত। এখানে বিএনপির তিনজন নেতা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তিনজন নেতা থাকায় আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে বিএনপি সমর্থকরা। বিএনপির তিন নেতা এখানে ভোট পেয়েছেন খুবই কম।
সমঝোতার স্বার্থে জামায়াতকে বড় ধরনের ছাড়ই দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে পাঁচটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় তারা। এর ফল পেয়েছে দুই দলই। ২০০৯ সালে এই জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা যেখানে চারটি উপজেলায় জিতেছিল সেখানে বিএনপি-জামায়াতের সমঝোতার কারণে সরকার সমর্থকরা এবার জিততে পারেনি একটিতেও। আর বিএনপির সমর্থন পেয়ে জামায়াত জিতেছে চারটিতে।
বগুড়ায় এই সমঝোতার ফল বিএনপি উত্তরাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোতে পেয়েছে। রাজশাহীর মোহনপুরে জামায়াতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটব্যাংক আছে। এখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুস সালামকে পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান বিএনপি সমর্থিত আবদুস সামাদ। জামায়াত সমর্থকদের ভোট পাওয়ায় এই জয় সহজ হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
আবার যেসব এলাকায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপি নেতাকে সমর্থন দিয়েছে জামায়াত সেসব এলাকায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সমর্থন নিশ্চিত করেছে জামায়াত। এতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী যেমন সুবিধা পেয়েছে তেমনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুবিধা পেয়েছে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খোকসা ও মিরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ছিল না। এর বিনিময়ে বিএনপি এসব উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জামায়াতের আমির আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমরা সমঝোতা করেছি এবং তার সুফল আমরা ভোটে পেয়েছি।’
এই সমঝোতার সুফল পুরোপুরি মিলেছে মেহেরপুরে। জেলার তিনটি উপজেলাতেই চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। জামায়াত তাদেরকে সমর্থন দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান পদ। আর দুটি উপজেলাতে জিতেছেও তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা।
মেহেরপুর বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ এ বিষয়ে বলেন, ‘ভোটের আগে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার কারণে আমরা এত ভালো ফল করেছি।’
কুড়িগ্রামে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান না থাকলেও এবার নাগেশ্বরী ও রাজারজাটে জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। এই দুটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা।
অসাধারণ দলীয় শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যে সাফল্য : দলে কোনো কোন্দল না থাকার সুফল পেয়েছে জামায়াত। প্রথম দুই পর্বে বাজে ফলাফলের পেছনে অন্য অনেক কারণের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে একক প্রার্থী থাকলে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা হেরেছেন এমন ২৫টি উপজেলায় তারা জিততে পারতো সহজেই। আবার একক প্রার্থী থাকলেও কোন্দলের কারণে দলের একাংশের নিষ্ক্রিয়তায় আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা হেরেছেন অন্তত ১০ উপজেলায়। কোন্দলের কারণে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীও হেরেছে বেশ কয়েকটি উপজেলায়। কিন্তু জামায়াতের এই সমস্যা কখনোই ছিল না। দলের প্রার্থী যেই হোক, তাকে জেতাতে একাট্টা হয়ে খেটেছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা।
জামায়াত নেতারা প্রায়ই বলেন, তাদের দলের যে শৃঙ্খলা আছে তা আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে থাকলে সেই দলকে ক্ষমতা থেকে সরানো কঠিন হতো।
আবার প্রথম দুই দফায় ভোট হওয়া ২১২ উপজেলার মধ্যে একশরও বেশি উপজেলাতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থী ছিল না জামায়াতের। ফলে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় গিয়ে কর্মী-সমর্থকরা খেটেছেন তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে। ফলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থিতদের তুলনায় কর্মী সংখ্যা কম ছিল না জামায়াতের। ফলে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছে তারা। পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক প্রচার নিষিদ্ধ হলেও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা এই প্রচার চালিয়েছেন বিভিন্ন উপজেলায়। আর স্বল্পশিক্ষিত এবং নিরক্ষর মানুষদের সহজেই কাছে টানতে পেরেছে তারা। চট্টগ্রামে যে কয়টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ভোট হয়েছে তাদের মধ্যে কেবল লোহাগড়ায় এখন পর্যন্ত ভোট করেছে জামায়াত। আর এই উপজেলায় প্রচার চালাতে আশপাশের অন্য উপজেলা থেকে কর্মীরা এসে খেটেছেন। এই অবস্থা রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। দ্বিতীয় পর্বে রাজশাহীতে কেবল এই উপজেলায় ভোট হওয়ায় আশপশের উপজেলার কর্মীরা এসে খেটেছেন তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে।
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হলে যা হয় : নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময় জামায়াতের সন্ত্রাস আর আন্দোলনের কারণে আলোচিত হয়ে উঠে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা। জামায়াত কর্মীদের তা-বে বলতে গেলে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়ে এই জেলায়। কিন্তু প্রথম পর্বে জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান হিসেবে পরিচিত আশাশুনি উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ বি এম মোস্তাকিমের কাছে ১ হাজার ১৬৮ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মুর্তজা আলী।
সামান্য ব্যবধানে জামায়াত প্রার্থীর এই পরাজয়ের কারণ বিএনপির সমর্থন না পাওয়া। এই উপজেলায় আলাদা ভোট করেছে বিএনপি এবং তাদের সমর্থিত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ভোট।
২০০৯ সালের নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে চেয়ারম্যান পদে সহজ জয় পেয়েছিলেন জামায়াতের সিরাজুল ইসলাম। সে সময় এখানে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি বিএনপি আর স্বভাবতই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট দেয়ায় সিরাজুল পান সহজ জয়। এই এলাকাটিও জামায়াত অধ্যুষিত বলে ধরা হয়। কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে এখানে ভোটের চিত্র। এবার জামায়াতকে সমর্থন না দিয়ে নিজ দলের নেতাকে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি আর তাতে হেরে গেছেন সিরাজুল ইসলাম। এখানে জেতা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল কাদের পেয়েছেন ২৪ হাজার ৯২৪ ভোট। এক হাজার ২০৮ ভোট কম পেয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মজিদুল হকক পেয়েছেন ১৮ হাজারর ৮১০ ভোট।
প্রথম দফা নির্বাচনে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বিএনপির সমর্থন পা পেয়ে সামান্য ভোটে জামায়াত হেরে গেলেও দ্বিতীয় দফায় শ্যামনগরে বিএনপির সমর্থন পেয়ে সহজেই জিতে যান জামায়াত নেতা আবদুল বারী।
জোট না হওয়ায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেননি জামায়াত নেতা নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী।
দ্বিতীয় দফায় কাহালু আর শাহজাহানপুরে জামায়াতকে সমর্থন জানায় বিএনপি। কিন্তু শাহজাহানপুরে স্থানীয় বিএনপি জামায়াতকে সমর্থন দিতে রাজি হয়নি। আলাদা প্রার্থী দাঁড় করে তারা এবং হেরে যান জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের কোন্দলে পোয়াবারো : এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কোন্দল আর বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়েছে। কেন্দ্র থেকে বারবার চেষ্টা করা হলেও বিদ্রোহীদের ভোট থেকে সরানোর তেমন সাফল্য পায়নি আওয়ামী লীগ। কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও গোপনে গোপনে কাজ করেছেন দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে। আর এর পুরো ফায়দা তুলে নিয়েছে বিএনপি- জামায়াত।
সিলেটে এবার যে দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জিতেছে তার দুটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জিততে পারতো সহজেই। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৬৯ ভোট পেয়ে জিতেছেন জামায়াত নেতা নাজমুল ইসলাম। ৭৬৭ ভোট কম পেয়ে হেরেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইকবাল আহমদ চৌধুরী। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও জিততে পারতো সরকার সমর্থকরা। কিন্তু এখানে সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন দুইজন। এদের মধ্যে আকবর আলী পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৮০ ভোট আর হুমায়ুন ইসলাম কামাল পেয়েছেন ৩৮০ ভোট।
জৈন্তাপুর উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত জয়নাল আবেদীন জিতেছেন ২৩ হাজার ৬১ ভোট পেয়ে। তার চেয়ে তিন হাজার ৮৬২ ভোট কম পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমদ। তিনি ভোট করেছেন দল সমর্থিত প্রার্থী মো. আবদুল্লাহর বিপরীতে। আবদুল্লাহকে জেলা আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানালেও উপজেলার নেতা-কর্মীদের মূল অংশটি সমর্থন জানায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে। আর দলে ভাগাভাগির সুযোগটা ভালোই নিয়েছে জামায়াত। আবদুল্লাহ এখানে পেয়েছেন ৭ হাজার ৩১৪ ভোট। অর্থাৎ এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলে জামায়াত প্রার্থী হারতেন ৩ হাজার ৪৫২ ভোটে।
একই অবস্থা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়। জামায়াত নেতা শফিউল্লাহ্ শফি এখানে জিতেছেন ৫০ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে। তার জয় এখানে এসেছে আওয়ামী লীগের ভাগাভাগির কারণে। দ্বিতীয় স্থানে ফারুক আলম তবির চেয়ে তার ভোট বেশি ছিল ১২ হাজার ২৬১। তবি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৫৪৫ ভোট। অথচ তৃতীয় স্থানে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৯ ভোট।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় জামায়াত নেতা মোখলেছুর রহমান জিতেছেন ৫৪ হাজার ৫৮৯ ভাট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মঞ্জুর এলাহী পেয়েছেন ৩৮ হাজার ২৫৫ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিজামউদ্দিন পেয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি ভোট। অর্থাৎ সরকার দল একক প্রার্থী দিলে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনী এলাকাটিয় জিততো আওয়ামী লীগ।
কিছু উপজেলায় জয় এসেছে ভোটব্যাংকের জোরেই : পাকিস্তান আমল থেকেই উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং দেশের ভেতরেও কিছু কিছু এলাকায় জামায়াতের ভোটব্যাংক আছে। এসব উপজেলায় একাট্টা হয়ে লড়াই করায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো করেছেন। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর এবং মহেশপুর, চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় ভোটব্যাংকের জোরেই জিতেছে জামায়াত। এর বাইরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী না থাকায় রংপুরের পীরগাছায় জিতেছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। জাতীয় পার্টির স্থানীয় পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাব কাজ করে এবং দল কাউকে সমর্থন না দেয়ায় মিঠাপুকুরে জামায়াতের পক্ষেই কাজ করেছে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ। এর সুফল পেয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী দলটি।
(ঢাকাটাইমস/ ০৪ মার্চ/ এআর/ ঘ.)