ঢাক: বিদেশে অবস্থান করেই রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ানটেড জাফর আহমেদ মানিক। র্যাব ও পুলিশের ভয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতে পলাকত জীবন বেছে নিলেও ঐ অঞ্চলের উপর তার প্রভাব একটুও কমেনি। বরং তার দিক নির্দেশনায়ই ঐ এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মানিকের সহযোগীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন।
ঐ এলাকার ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য মানিকের একটি নিজস্ব বাহিনীও রয়েছে। ভারত থেকে মোবাইলে মানিক তার সহযোগীদের নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।
চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্যবসায়ী হাসান ইমরানুর রহমান এদের অন্যমত। মানিক বাহিনীর ভয়ে তিনি তাঁর জিমনেসিয়ামটি বন্ধ করে দিয়ে একরকম পলাতক জীবন যাপন করছেন। মানিক বাহিনীর ভয়ভীতির কথা পুলিশকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।এ নিয়ে তিনি থানায় একাধিক জিডি করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে অনেকেই ভেতরে ভেতরে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছেন এ বাহিনীকে। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।
শাহজাহানপুরের ‘স্টেপ এন্ড হিট’ নামের ব্যামাগারের মালিক হাসান ইমরানুর রহমান ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ‘মানিকের ভয়ে ২০১২ সাল থেকেই আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এখনও মানিকের লোকজন প্রতিনিয়ত আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, চাঁদা না দেয়ায় ২০১২ সালের ১৮ জুন সন্ধ্যায় মানিকের লোকজন আমার জিমনেসিয়ামে এসে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে মতিঝিল জোনের ডিসির নির্দেশে শাহজাহানপুর থানার ওসি ফোর্স পাঠিয়ে তালা খুলে দেন। এ বিষয়ে শাহজাহানপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করি।
এরপরও ওরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আমাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং পরে আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আমার চাচাকে দেখাশোনা করতে দেই। আমি গ্রামে চলে যাই এবং দীর্ঘ দিন পালিয়ে পালিয়ে থাকি। পরে আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসা শুরু করলে মানিকের লোকজন আবার আমার খোঁজখবর নিতে থাকে। পরে ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর বিকালে মানিকের সহযোগী খোকন ওরফে ঠাসকি খোকন, কামরুল, মাসুম ওরফে চুকখা, ফারুক, কল্লোল, শাহীন ও রায়হানসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন আমার ভাইকে বলে, ‘তোর ভাই ইমরানকে কইস মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে।.....আমাগো মানিক ভাইরে কালার করছে, হের পুলিশ বাপগো দিয়া ব্যবসার তালা খোলাইছে, আমাগো নামে থানায় অভিযোগ দিছে, হেরে গুলি কইরা লাশ কুত্তারে খাওয়ামু।’
এই হুমকি পাওয়ার পর আমি শাহজাহনপুর থানায় একটি জিডি করি। এরপর কামরুলের সহযোগী ফয়সালও বিদেশে পালিয়ে যায়। এখন সেখানে বসেই সে প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিচ্ছে। ওরা আমার মোবাইল নম্বরে ফোন করে হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমি একই থানায় ওদের নামে জিডি করি।’
শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন মোল্লা জানান, মানিক ও তার বাহিনীকে গ্রেপ্তরের জন্য পুলিশ তৎপর। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
কে এই মানিক?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিক ২০ টির বেশি মামলার আসামি। সে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন। বাসা ২৭১/১ উত্তর শাহজাহানপুরে। ১৯৯১ সাল থেকে অপরাধ রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করে সে। হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। পরে ২০০১ সাল থেকে মানিক ভারতে পারি জমায়।
(ঢাকাটাইমস/৬ মার্চ/এএ/এআর)