logo ০৩ মে ২০২৫
দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই এটি হচ্ছে: সালেহউদ্দিন
সোনালী ব্যাংকের ভল্ট দোতলায় তোলার চিন্তা
মোছাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
১০ মার্চ, ২০১৪ ২২:৩৩:৫৬
image


ঢাকা: সুড়ঙ্গ খুঁড়ে কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা লুটের দেড় মাসের মাথায় একই ধরনের ঘটনা ঘটলো বগুড়ার আদমদীঘি শাখায়। অথচ কিশোরগঞ্জ শাখায় চুরির পর সারা দেশে ব্যাংকটির শাখাকে বিশেষভাবে সতর্ক করার পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।



 





বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক কেবল জেলা শহরে শাখা থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের শাখা আছে গ্রাম পর্যায়েও। প্রতিটি ব্যাংককেই লেনদেনের জন্য টাকা রাখতে হয় ব্যাংকে। অথচ উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদার করার সুযোগ কম। এটাই ভাবিয়ে তুলেছে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে।



 





জানতে চাইলে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবির একজন সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ বলেন, সোনালী ব্যাংকেই এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ব্যাংকের প্রশাসনের কোনো দুর্বলতা আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।



 





সুরঙ্গ খুঁড়ে কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা সরানো হয় গত ২৬ জানুয়ারি। এই ঘটনার পর নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কমিটি বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শনও করেছিল। এর মধ্যেই গত শনিবার আদমদীঘি শাখায় একই কায়দায় লুট করা হয় ৩২ লাখেরও বেশি টাকা।



 





দুটি ঘটনার পর সোনালী ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ সারা দেশে তাদের শাখার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার দত্ত জানান, সারা দেশে ব্যাংকটির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ১৫ দিনের মধ্যে সংস্কার করা হবে। শাখাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষীও রাখা হবে।



 





ব্যাংকের ভল্টগুলো ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠানো যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সে ক্ষেত্রে সুরঙ্গ খুঁড়ে টাকা সরানোর আশঙ্কা পুরোপুরি কমে যাবে বলেও মনে করছেন তারা।  



 





সোনালী ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আদমদীঘির ঘটনার পর পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশের শাখাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করার জন্য ৬০টি দল গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোর নিরাপত্তার দুর্বলতার দিক খতিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা দেবে।



 





জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, বগুড়ার আদমদীঘির ঘটনার পরও গভর্নর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য একটি পরিদর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। তারা দেশব্যাপী অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। নিচতলায় ব্যাংকের শাখা হওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চুরি যেকোনো জায়গা থেকেই হতে পারে। নিচতলায় দেখে চুরি হচ্ছে, বিষয়টি ঠিক এমন নয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকে একই কায়দায় টাকা চুরির ঘটনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতাই প্রমাণ। ব্যাংকের শাখা কোথায় হবে ও নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ রকম চলতে থাকলে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হবে।



 





এদিকে কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকে লুটের দুদিনের মধ্যে প্রায় সব টাকা উদ্ধার হলেও একনো ২০ লাখ টাকার হদিস নেই। ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে র‌্যাব উদ্ধার করেছে ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন, বাকি ২১ লাখ টাকার মধ্যে সাত লাখ টাকা তিনি একটি ট্রাকচালকের সহকারীকে দিয়েছেন। চালভর্তি এই ট্রাকে বস্তায় ভরেই তিনি টাকা এনেছিলেন। আর ২৩২ বস্তা চালের মধ্যে ২২৪ বস্তা তিনি ফরিদপুরে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পাঠিয়েছেন।

এদিকে জানতে চাইলে জাকের মঞ্জিলের সঙ্গে জড়িত একজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, কেউ ২২৪ বস্তা চাল তাদেরকে দিয়েছেন বলে কোনো তথ্য নেই। তবে এর খোঁজ পাওয়া গেছে। এর সমপরিমাণ টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া হবে।



 





(ঢাকাটাইমস/ ১০ মার্চ/ এমবি/ এআর)