ঢাকা: একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি সকালে ৮৭ গ্রাম আটার রুটি ও ৮৭ গ্রাম ডাল-সবজি পান। দুপুর ও রাতে ৪৯৫ গ্রাম সরু চালের ভাত, ২১৮ গ্রাম মাছ-মাংস এবং সারাদিনে প্রায় ১৪৫ গ্রাম ডাল পান। এ ছাড়া তেল, লবণ, মরিচসহ সব মিলিয়ে তিন বেলা খাবার বাবদ একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ হয় ১১৫ টাকা।
কারাগারে ভিআইপি এই বন্দিদের সরকার বরাদ্দ খাবারে প্রয়োজন মেটে না। এর বাইরে ভিআইপি বন্দীরা কারা ক্যান্টিন থেকে বাড়তি খাবার সংগ্রহ করে থাকেন। এ ছাড়া বন্দিদের স্বজনরা সাক্ষাতের সময় শুকনো খাবার ও ফলমূল দিয়ে যান। এসব দিয়েই খাবারের প্রয়োজন মেটাতে হয় তাদের।
তবে প্রিজন ক্যান্টিনের (পিসির) মাধ্যমে কারাগারে বন্দির নামে টাকা পাঠানোর রীতি চালু রয়েছে। পিসিতে বন্দীর স্বজনা টাকা পাঠান। সেই টাকায় তারা বাড়তি খাবার খেতে পারেন।
তবে বন্দীদের খাবার সরবরাহে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান কারা কর্মকর্তারা।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১৪ প্রভাবশালী নেতা বর্তমানে কারাবন্দী। তাদের মধ্যে কারো কারাবাসের সময় ৮ বছরের বেশি। তারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও বিদেশে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। বিশেষ এই বন্দিদের অনেকেই বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা ব্যাধিতে ভুগছেন বলে স্বজন ও কারা সূত্র জানায়।
সূত্র মতে, তিন বেলা খাবারবাবদ একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির জন্য সরকারি বরাদ্দ ১১৫ টাকা। স্বজনদের দাবি, এই পরিমাণ খাবার যৎসামান্য ও নিম্নমানের হওয়ায় কারাবন্দিরা এ খাবার খেতে চান না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘জেলে আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করা হতো। সাধারণ বন্দিদের মাটিতে ফেলে রাখা পোড়া রুটি খেতে দিত। ওই রুটি আমাকেও খেতে হতো। তবে একমাস পরে আমাকে ডিভিশনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।
বন্দিদের স্বজনদের অভিযোগ, কারাবন্দি বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে দু-একদিনের জন্য কারাগারের বাইরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় মাত্র। এছাড়া জটিল রোগের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই কারাগারে। বয়স্ক বন্দিরা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুপথযাত্রী।
তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, বন্দিরা সুস্থ আছেন। জেলকোড অনুযায়ী তারা সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কারাগারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জেলার দেওয়ান আমজাদ হোসেন ডন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বার্ধক্যজনিত রোগব্যাধি ছাড়া কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা ভালোই আছেন। জেলকোড অনুযায়ী তাদের সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ আছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি মাহবুবুর রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ আছেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাশেম আলী ও তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। গিয়াসউদ্দিন আল মামুন কোর্টের আদেশে আগে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদা ভোগ করেছেন। তবে পরবর্তী সময়ে সেটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ বন্দি হিসেবে আছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বার্ধক্যজনিত ব্যাধি ছাড়া ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের কোনো সমস্যা নেই। তারা ভালোই আছেন।
তবে যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেল খানায় থাকাকালে আমাদের সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করা হতো।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, জেল খানায় থাকাকালে আমি কারাগারের লাইব্রেরি থেকে একটি বই নিয়ে পড়ছিলাম। ওই বইটির নাম টেন টু পাকিস্তান। ওই বইটি আমার হাতে দেখে জেলার আমার সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিল। এছাড়া জেলখানায় সকালে নিন্মমানের রুটি, ভাজি, দুপুরে মোটা চালর ভাত ও নিন্মমানের মাছ, মাংস এবং রাতেও খুব নিন্মমানের খাবার দেওয়া হতো। এগুলো খেয়ে রীতি মতো অসুস্থ হয়ে পড়তাম।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন এক কারা কর্মকর্তা।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কারাগারে সাধারণ বন্দিদের জন্য বরাদ্দ থাকে প্রায় ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। এই টাকায় হিসাব করে খেলে অনেক ভালো খাবার খাওয়া সম্ভব।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে আছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লুৎফুজ্জামান বাবরের এক স্বজন বলেন, বাবর অ্যাজমা, নাকে রক্তপড়া ও কোমরে আঘাতসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত। তাকে প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই শামছুল আলম তোফা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তিনি কারাবন্দি। নানা রোগব্যাধিতে অনেকটাই কাবু। তার সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর বলেন, সরকারি বাজেট অনুযায়ী বন্দিদের খাবার দেওয়া হয়। যাদের এ ধরনের খাবারে সমস্যা হয় তারা প্রিজন ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খান। ভিআইপি বন্দিদের কারাবিধি মোতাবেক চিকিৎসাও দেওয়া হয়ে থাকে।
(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/এএ/এমএম)