ঢাকা: প্রশাসনের বিক্ষুব্ধ বেশ কয়েকজন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে রাতে বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শেষ হয় ১০ টার দিকে। ওএসডি কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুগ্ম সচিব একেএম জাহাঙ্গীর (ওএসডি)। তার নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা রাত সাতটা ৪০ মিনিটের দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তবে সাংবাদিকদের এড়াতে আলাদ আলাদাভাবে তারা ভিতরে প্রবেশ করেন।প্রথমে চারজন ও পরে দুই দফায় আরো ১৫ জনেরও বেশি ওএসডি কর্মকর্তা খালেদার রাজনৈতিক কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন।কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন।
বৈঠক সাড়ে আটটায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও খালেদা জিয়া পৌঁছান রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে। এর দুই মিনিট আগে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের বাইরে এসময় সাংবাদিক, বিএনপি নেতাকর্মী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভির দেখা গেছে। তবে কাউকেই কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
বৈঠকে একেএম জাহাঙ্গীরের (সাবেক এপিডি) সঙ্গে ছিলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকতা ইব্রাহিম মিয়াজি ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নুরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আবদুল মান্নান ও একেএম হুমায়ুন কবির, সিনিয়র সহকারী সচিব এহসানুল হক, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ক্যাশ সরকার তোহা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বাদিউল কবির, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী শহিদুল হক, এমএলএসএস মামুন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এমএলএসএস মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এরা সবাই ওএসডি কর্মকর্তা।
সচিবালয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে সচিবালয়ে ওএসডি কর্মকর্তারা লাইব্রেরিতে বসে বৈঠক করে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। এ নিয়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় গত কয়েক দিন থেকেই।
তবে বিএনপি সূত্র এবং উপস্থিত সচিবদের কেউ বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেননি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা শিডিউল কোনো বৈঠক ছিল না। সাবেক অনেক সচিব আছেন যারা কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তারা নিয়মিত এখানে আসেন।’
বর্তমান সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বর্তমান কোনো সচিবকে চিনি না। যদি কার্যালয়ে বর্তমান সচিবদের কেউ এসে থাকে তাহলে সরকার তা বলতে পারবে।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব এমএ হালিম বলেন, ‘এখানে আমাদের সিডিউল কোনো বৈঠক ছিল না। নিয়মিত যেমন আসি তেমনি আমরা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছি।’
এখানে সচিবদের বৈঠক হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কই না তো, এমনতো কোনো বৈঠকের খবর জানি না। না, ওইরকম কিছু ছিল না।’এ সময় বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়া অপর একজনের কাছে নাম জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনাকে আমি নাম বলবো কেন?’
জানা যায়, কার্যালয়ে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন সরকারি কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠককালীন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাবিউদ্দিন আহমেদ ও এমএ কাইয়ূম কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণত কোনো বৈঠক বা কর্মসূচি থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ থাকে না। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের সচিবদের নিয়ে বৈঠকের খবর জানতে পেরে সাংবাদিকরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হলে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
বর্তমান সরকারের গত ৯ মাসে ১৩৮ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে বলে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ওএসডি করা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সচিব এক জন, অতিরিক্ত সচিব ১৪, যুগ্ম সচিব ৪১, উপসচিব ২২, সিনিয়র সহকারী সচিব ৫০ এবং সহকারী সচিব ১০ জন। তিনি জানান, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ৪২ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমান সরকারের আমলে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অতিরিক্ত সচিব ও বেশ কয়েকজন যুগ্মসচিব ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা প্রায় ৯ বছর ধরে ওএসডি এবং পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে আছি। আমরা আর কতদিন বসে থাকবো। বসে থাকতে থাকতে আমাদের মেধা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/এইচআর/এমএম/ এআর/ ঘ.)