logo ০৮ মে ২০২৫
জীবনের মূল্য এত কম!
জাহিদ হোসেন
১১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৩:৩৩:৫৫
image


জীবনের এত কমমূল্য ভূ-ভারতে আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। নয়ত জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মতো অসাধারণ সাংবাদিককে রাস্তায় পড়ে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়? একের পর এক মৃত্যুর পরও রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল যেন শেষ হওয়ার নয়। যাযাবর তাই যথার্থ বলেছিলেন, ‘বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।’ জগলুল আহমদে, মিশুক মুনীর কিংবা তারেক মাসুদের মতো অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দায়িত্বহীনতায়, অসাবধানতায়। শুধু যে এসব মহান মানুষ হারিয়ে যাচ্ছেন তা তো নয়, অনেক সম্ভাবনাময় মানুষও রাস্তায় নেমে পরিণত হচ্ছে অনাকাক্সিক্ষত সমস্যায়। গত ১৫ বছরে দেশে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়।

ঢাকা শহরের গড় গতিবেগ কত আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। ধানমন্ডি থেকে খিলগাঁওয়ে ৭-৮ কিলোমিটার যেদিন এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাই সেদিন খুশিতে বাকবাকুম করে মন। গুলিস্তান থেকে মিরপুর কিংবা উত্তরা ১৫ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো পার হয়ে যায় তিন ঘণ্টারও বেশি সময়। সেই শহরে গাড়ি চাপায় প্রতিদিনই পথচারীর মৃত্যু খুবই অসহায় করে তোলে আমাদের।

জগলুল ভাই সবসময় ধীরস্থির ধরনের মানুষ ছিলেন। বয়স তাকে চলাফেরায় আরো গোছানো করেছে। একটি বাস থেকে নামতে কতই বা সময় লাগবে, ১০ সেকে- ১৫ সেকে-, এটুকু সময় অপেক্ষা করার ফুরসত নেই চালকের। সামনে কোথায় যেতে চাই আমরা। আমাদের গন্তব্য কোথায়? ঊর্ধ্বশ্বাসে এই যে ছুটে চলা সেখানে কি একবারও আমরা দেখি আমাদের চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে কারা? প্রতিদিন যে কেবল একজন দুজন মারা যাচ্ছে সম্ভাবনার তুলনায় মৃত্যুর এই সংখ্যা কম মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যে যেভাবে পারছে একজন আরেকজনকে পিছ মারিয়ে, ল্যাং মেরে, ধাক্কা দিয়ে, গুঁতো দিয়ে পথ আগলে আমরা সামনে যাচ্ছি। আমরা বাস চালাই, রিকশা চালাই, গাড়ি মোটরসাইকেল, ট্রাক, সাইকেল এমনকি যদি পায়ে চলেও যাই তবুই এগিয়ে চলার এই বিশৃঙ্খলার কোনো বিশেষ নেই।

ঢাকার বাসে যারা চড়েন তারা জানেন এখানে বাসে তোলার জন্য কেমন জামাই আদর পান যাত্রীরা। অথচ ওই একই যাত্রী একই কন্ডাক্টরের কাছ থেকে পান গলা ধাক্কা। এই ব্যবস্থা চলছে দিনের পর দিন। এখানে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানিয়ে রাখি। ১৯৮৭ সালের ১৩ জানুয়ারি মিনিবাসে চড়ে মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে যাচ্ছি। রাজারবাগ মোড়ে বাস থামল। আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। হাতে ক্রিকেট ব্যাট। পিছনে স্কুলের ব্যাগ। আমি ভিড় ঠেলে নামছি। একটি পা তখনো বাসে আরেকটি রাস্তায় স্পর্শ করেছে। নামার জন্য শরীরের সব ওজন তখন রাস্তায় থাকা পায়ে। ঠিক এমন সময় চলা শুরু করল বাস। আচমকা ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গেলাম রাস্তার ওপরে। জগলুল ভাইও মনে হয় একইভাবে পা রেখেছিলেন। আমার ভাগ্য ভালো একটি হাত শুধু চলে গিয়েছিল বাসের চাকার নিচে। তাই প্রায় তিন দশক পর যখন দেশের অর্থনীতি অনেক ভাল হয়েছে, ১৯৮৭ সালের চেয়ে মানুষ, রাস্তা এবং সড়কের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু জীবনের হয়নি  কোনো রূপান্তর।  সেই অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি, আতঙ্ক নিয়ে আমরা রাস্তায় হাঁটছি, চলছি।

দৈনিক ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল  দত্তের সাংবাদিকদের উপস্থাপনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত টক শোতে সার্কসংক্রান্ত আলোচনার একজন অতিথি ছিলেন জগলুল আহমেদ। রাত ঠিক ৮টার দিকে জগলুল আহমেদ তাকে ফোন করে জানান, তিনি কারওয়ানবাজার পৌঁছে গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মীদের সে রাতের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে এমন একটি চিত্র পাওয়া যায়। রাত সোয়া ৮টার দিকে বাংলামোটরের দিক থেকে একটি মিনিবাসে করে কারওয়ানবাজারে সোনারগাঁও মোড়ে পুলিশের ট্রাফিক বক্সের সামনে থামে জগলুল আহমেদকে বহনকারী মিনিবাস। বাস থেকে নামার জন্য পা বাড়ান তিনি। তিনি এক পা নামিয়ে রাস্তায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসটি সজোরে চলতে শুরু করে। এতে তিনি সড়কে পড়ে যান। পড়ার সময় তিনি মিনিবাসের এক পাশের সঙ্গে মাথায় প্রচ- ধাক্কা খান। এরপর মিনিবাসটি দ্রুতগতিতে ফার্মগেটের দিকে চলে যায়। তিন যুবক তাঁকে ধরাধরি করে রাজধানীর পান্থপথের বেসরকারি মোহনা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে গ্রিন রোডের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ইমরুল কায়েস নামের এক যুবক বলেন, ‘রক্তাক্ত অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ সড়কেই পড়েছিলেন জগলুল আহমেদ চৌধুরী। মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল। তখন তিনি দৌড়ে গিয়ে জগলুল ভাইকে ধরেন। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কয়েকটা গাড়িকে হাত নেড়ে থামাতে ইশারা করেন। তবে কেউ শোনেনি। পরে তিনজন মিলে ধরাধরি করে পান্থপথের মোহনা হাসপাতালে জগলুল ভাইকে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে  রক্তাক্ত জগলুল ভাইকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে গ্রিন রোডের অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দেড় কোটি মানুষের এই শহরে প্রতিদিন রাস্তায় চলছে  কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষ। সেখানে একজন জগলুল বাসের ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারাবেন, একজন জাহিদ চাকার নিচে পড়ে হাত হারাবেন এতে কারো উদ্বেগ নেই, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় কি নেই। সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেবে, সম্ভাবনার পরিসংখ্যানে ৫০ লাখে দিনে এক-দুজনের প্রাণহানি খুবই নগণ্য। বলা যায় শন্য। কিন্তু এই শূন্য কি মারাত্মক, কষ্টকর শূন্য সেটা জানে ওইসব পরিবার যাদের ঘরশূন্য হয়েছে রাস্তায় মানুষের বেপরোয়া আচরণে। এগিয়ে চলার অনৈতিক প্রতিযোগিতায় যেখানে সত্যিকার অর্থে আমরা শুধু পিছিয়ে চলছি।

জগলুল ভাই কেন মারা গেলেন এই অমোঘ সত্য আমাদের জানা নেই। অন্ধ, মূক, বধিরের এই শহরে জগলুল ভাইয়ের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের হাস্যকর রসিকতাও আমাদের সইতে হয়। জগলুল ভাইকে যে অসভ্য পিশাচ আঘাত হেনেছে তার চেয়ে অনেক তীব্র আঘাত হানছেন সুশিক্ষিত দায়িত্ববান মানুষরা, উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি। সৌজন্যমূলক সান্ত¡না। এদের নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। কারণ আমাদের সহ্যসীমার প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জগলুল ভাইয়ের মৃত্যু ফুলস্টপ নয় কমা। কেননা যারা ফুলস্টপ আর কমার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন, নগরের পরিকল্পনার মাধ্যমে জগলুল আহমেদের স্মৃতিস্তম্ভকেই শহরের মৃত্যুর মিছিলে ফুলস্টপ বানিয়ে দিতে পারেন তারা এমন উদ্যোগ নেবেন না। ৫০ লাখ মানুষের চেয়ে নগরের দায়িত্বশীলরা অনেক বেশি চিন্তিত ১ লাখ মানুষকে নিয়ে যারা রাস্তা, ফুটপাত দখল করে রাস্তাকে চলাচলের অনুপযোগী করে রেখেছে।

ঢাকার রাস্তায় বের হলেই দেশের সামগ্রিক একটি চিত্র চোখে পড়বে। বিশৃঙ্খলার চরমে পৌঁছে গেছি আমরা।  যে যেভাবে পারছি এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। যেন দেখার কেউ নেই, চূড়ান্ত ঝুঁকির কথা জেনেও ঝাপিয়ে পড়ছি রাস্তায়। যেন এই নগরে কোনো সরকার নেই, প্রশাসন নেই, পুলিশ নেই। আবার আমরা যারা চলছি তারাও যেন ঝুঁকি নিয়ে চলাই সবচেয়ে কাক্সিক্ষত। কারো কারো জন্য আবার ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে আধুনিক দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক বাতির ব্যবস্থা। সেখানে লাল-হলুদ-সবুজ বাতি জ্বলছে নিয়ম মেনে। তবে বড়দের চোখে কিছু না পড়লেও শিশুদের চোখ তা এড়ায় না। মনে আছে আমার ছেলের বয়স যখন ৩ তখন সে প্রায়ই প্রায়ই প্রশ্ন করত লাল বাতি জ্বলছে তাহলে গাড়ি চলছে কেন কিংবা এখন তো সবুজ বাতি গাড়ি থেমে আছে কেন। সে  এমনভাবে তাকাতো যেন বাবা তাকে ভুল কিছু শিখিয়েছে। চূড়ান্ত বিব্রত হয়ে তার দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করতাম।

ঢাকার রাস্তায় নিয়ম না মানাই নিয়ম অথবা মনে হয় যেন এখনো কোনো নিয়ম করাই হয়নি। আসলে নিয়ম মানা মানুষের সহজাত বলে মনে হয় না কখনোই। মানুষকে নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখতে হয়। তাকে নিয়ম মানাতে বাধ্য করতে হয়। ভেড়ার পালের একটা গল্প মনে আছে নিশ্চয়ই আপনাদের। লাইন দিয়ে যাচ্ছে এমন একটি ভেড়ার দলের সামনে আপনি একটি টুল দিয়ে দিন। তারা লাফ দিয়ে সেটি পার হতে থাকবে। গবেষণায় দেখা যায়, ওই টুল সরিয়ে নিলেও পরের ভেড়াগুলো টুল যেখানে ছিল সেখানে এসে লাফ দিচ্ছে। ভেড়া হয়ে থাকা মানুষ যে আসলে ভেড়া নয় তা বোঝা যায় শৃঙ্খলাসংক্রান্ত তাদের আচরণে। আপনি কয়েকদিন রাস্তায় চলাচলে কড়াকড়ি করুন, দেখবেন বেশ ভালোভাবেই চলছে তারা। কড়াকড়ি শিথিল হলেই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।

কাগুজে আইনে মানুষকে ভয় পাওয়ানো কঠিন। কিন্তু আইন মানাতে হলে মানুষের মধ্যে আইন ভাঙলে শাস্তি পেতে হবে এমন ভয় পাওয়া জরুরি। আইন আসলে রাস্তায় চলাচলে আমাদের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। কোনটা গাড়ি চলার জায়গা, কোনটা মানুষ চলার। কখন চলতে হবে, কখন থামতে হবে এমন নানা নির্দেশনা আছে আইনে। কিন্তু আমাদের শহরের রাস্তায় যেমন মানুষ চলে হরহামেশা তেমনি ফুটপাতজুড়ে থাকে মোটরসাইকেল। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্য দুর্ঘটনার চেয়ে দুইগুণ বেশি মারা যায় পথচারী। আইন অনুযায়ী নির্ধারিতভাগে গাড়ি এবং মানুষ চললে দুর্ঘটনা অনেক কমবে আশা করা যায়। তার চেয়েও বড় কথা এতে পথচারী এবং চালকদের ভোগান্তি অনেক কমবে।

ঢাকা শহরের দুর্ঘটনার জন্য পথচারী, চালক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকেই দায়মুক্ত করা যায় না। তবে কে কতটা দায়ী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। গাড়ি যেমন যেখানে সেখানে থামছে, বাসস্ট্যান্ড নয়, মানুষ বাসে উঠছে-নামছে তার সুবিধাজনক স্থান থেকে। আবার যে যেখানে পারছে রাস্তা পার হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ইশারা দিয়ে নেমে পড়ছে রাস্তায়। গাড়ির গতি কত আছে। নামতে পারবে কি না। কোনো কিছুই বিবেচনায় থাকছে না। এত গেল পথচারীদের অবস্থা। চালকদের অবস্থাও তথৈবচ। অধিকাংশেরই নেই লাইসেন্স। এদের অনেকেরই আবার এখনো লাইসেন্স নেওয়ার বয়সই হয়নি। পুলিশের চোখের সামনেই তারা গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

এই শহরের রাস্তার চল্লিশ থেকে ষাটভাগ দখল হয়ে গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে থাকে। রাস্তার পাশে গড়ে উঠছে দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খাবারের দোকান থেকে শুরু করে গাড়ির গ্যারেজ আবার কোথাও বা অনাকাক্সিক্ষত পার্কিংয়ের দখলে থাকছে রাস্তা। এসব দখলমুক্ত করার কাজ পুলিশ এবং প্রশাসনের। তবে পুলিশ এবং স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সরাসরি আর্থিকভাবে উপকারভোগী তাই রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া ঢাকার রাস্তা দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। ঢাকার রাস্তা পরিষ্কার করতে হলে সেটা ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে।

ঢাকার রাস্তায় মানুষ চলে ৫০ লাখ। এই রাস্তায় প্রতিদিন গাড়ি চালান অন্তত ১০ লাখ মানুষ। রিকশা হিসাব না করে উপায় নেই বলেই সংখ্যাটা এতে বেশি। দশ লাখ চালককে দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সারা শহরে কাজ করছে মাত্র সাড়ে তিন হাজার পুলিশ। এত অল্প পুলিশের পক্ষে কোনোদিনই দশ লাখ চালককে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ডিএমপি ট্রাফিক ১০০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে। তবে ঢাকা শহরের গাড়ির আইন অমান্য করার প্রবণতার সঙ্গে এই জরিমানা অতি নগণ্য। তার চেয়ে বড় কথা এই জরিমানার ফলে কোনো সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

ম্যাগাসিটি ঢাকার রাস্তাকে চলাচলের উপযোগী ও নিরাপদ করতে হলে দখলদার এক লাখ আর দশ লাখ রিকশাচালকের বিকল্প কর্মসংস্থান করতে হবে। রাস্তার দখলদার আর রিকশা তুলে দেওয়ার প্রশ্ন এলে পুলিশ, প্রশাসন আর রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব দরদী হয়ে যান। তারা তখন বিকল্প কর্মসংস্থানের কথায় মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। রিকশা এবং হকার দখলমুক্ত করা সম্ভব না হলে রাজধানীর রাস্তাকে কোনোভাবেই বাগে আনা সম্ভব নয়।

মধ্য আয়ের দেশ হতে চাই আমরা। হাতে আছে ছয় বছর। অর্থনীতির গতি বাড়াতে হলে মানুষের গতি বাড়াতে হবে। সেজন্য যেখানে যে প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করতে হবে। একদিকে গতি বাড়ানো অন্যদিকে ঝুঁকি কমানো এই দুই লক্ষ অর্জন সহজ নয়। এজন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা এগারো লাখ মানুষের কথা ভাবতে গিয়ে জিম্মি করে রাখছি ৫০ লাখ মানুষকে। তবে এগারো লাখের কথা ভুলে গেলে চলবে না। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এখন শিল্প এবং কৃষিতে শ্রমের সংকট চলছে। ফলে রিকশা এবং হকারদের একটি অংশের বিকল্প কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিই হয়ে আছে।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এই শহরের বাসিন্দাদের সবাইকেই যানজটের ধকল প্রায় একই রকম সহ্য করতে হয়। তারপরও বেড়ালের গলায় ঘণ্টা পরানোর কাজটা কেউ করতে পারছেন না। ভাবটা এমন যে মেট্রোরেল আর উড়াল সেতু ছাড়া এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। ব্যবস্থাপনা দিয়ে সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার চেষ্টা কখনো চোখে পড়ে না। তাই অব্যবস্থাপনাই আমাদের অমোঘ হয়ে আছে। যার বলি হচ্ছেন জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মতো কৃতী ব্যক্তিরা। মৃত্যুর এই মিছিল থামানোর উদ্যোগের জন্য আর কতকাল আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে?