ঢাকা: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সরকার বিটিভিকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর কথা ভাবছে। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি দেশের অন্য ৫টি বিভাগীয় সদরেও ৫টি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি চীনা কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আজ সকালে রামপুরাস্থ টেলিভিশন ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সুবর্ণ জয়ন্তি ও বাংলা ভাষায় টেলিভিশন সম্প্রচারের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ বক্তব্য রাখেন।
বিটিভির মহাপরিচালক আবদুল মান্নান সুবর্ণ জয়ন্তি অনুষ্ঠানের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিভির ডিডিজি (অনুষ্ঠান) বাহার উদ্দীন খেলন, ডিডিজি (বার্তা) শাহিদা আলমসহ বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিটিভির আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ডিজিটাল টেরিস্টরিয়াল ট্রান্সমিটার স্থাপন করে অত্যাধুনিক ছবি ও শব্দের গুণগত মানসম্পন্ন ট্রান্সমিশন চালু করার পরিকল্পনা বিটিভির রয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারও শুরু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ)বিধিবদ্ধ শর্তানুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে এ ট্রান্সফরমেশন সম্পন্ন হবে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, ৫১ বছরে পা দেয়া বিটিভির নতুন বছরের শুরু থেকেই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নতুন করে পথচলা শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘৫০ বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও ঔপনিবেশিক ধাঁচের শাসনব্যবস্থা রুখে শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বিটিভি সরকারের সহযাত্রী’।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বিটিভি পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য প্রথম সম্প্রচার মাধ্যম। আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর বিটিভি ৫১ বছরে পদার্পণ করবে। ১৯৬৪ সালের এ দিনে বিটিভি সম্প্রচার শুরু করে। আর এ উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
আগামীকাল বিকাল ৩টায় বিটিভি রামপুরা ভবন প্রাঙ্গণ থেকে সুবর্ণজয়ন্তির এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিক, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, পদস্থ সামরিক-বেসমারিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ও বিটিভির সকল তালিকাভুক্ত শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (এবিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল জাভেদ মুত্তাগী, ফার্স্ট এনাউন্সার বিটিভি মর্ডেচি হাইম চুয়েন উপস্থিত থাকবেন।
সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠানমালায় মুনীর চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইমদাদুল হক মিলন, ড. ইনামুল হক ও ফেরদৌস হাসানের লেখা ৭টি বিশেষ নাটক নির্মাণ ও সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া ৭ জন বিশিষ্ট শিল্পীর পরিবেশনায় থাকবে ৭টি একক সঙ্গীতানুষ্ঠান।
বিশিষ্ট এ শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন- ফেরদৌসী রহমান, আবদুল জব্বার, সাবিনা ইয়াসমিন, সৈয়দ আবদুল হাদী, ফরিদা পারভিন, খালিদ হোসেন ও রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা। সঙ্গীত পরিবেশন ছাড়াও এসব অনুষ্ঠানে শিল্পীদের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হবে।
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে ৩৮ জন সম্প্রচারবঞ্চিত শিশু, কিশোর ও তরুণ শিল্পী বাছাই করা হয়েছে। ১৪টি শাখায় নির্বাচিত এ শিশু, কিশোর ও তরুণ শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। অনুষ্ঠানমালায় ৭ দিনে ৭টি বিষয়ে আড্ডার অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে। বরেণ্য অনুষ্ঠান উপস্থাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, সংবাদপাঠক ও বিশিষ্টজনরা আড্ডা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। বিটিভিতে সম্প্রচারিত ৭টি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচারের আয়োজন করা হবে।
৭টি বিভাগ থেকে সম্প্রচার সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিল্পীদের প্রতিযোগিতামূলক বাছাইয়ের মাধ্যমে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থাও থাকবে। বিশেষ এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে- লালন শাই’জির গানের অনুষ্ঠান যেমন ধারণ করা হয়েছে লালন মাজারে, তেমনি নজরুলের ওপর অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লা থেকে। আরো থাকবে হাসন রাজার গানের অনুষ্ঠান।
(ঢাকাটাইমস/২৪ডিসেম্বর/এমএম)