logo ২৭ এপ্রিল ২০২৫
যে দুই কারণে প্রশাসনে আটকে আছে পদোন্নতি!
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
২৯ মার্চ, ২০১৫ ০০:০৯:৩০
image

ঢাকা: ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা কার্যকর না হওয়া  এবং অস্থিরতার আশঙ্কায় জনপ্রশাসনে আটকে আছে  বেশ কিছু পদোন্নতি। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে কিছুটা হলেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে দুটো কারণে জনপ্রশাসনে পদোন্নতি ঝুলে আছে।


আপাতত পদোন্নতি প্রক্রিয়া ধীরে চলার নীতিতে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)- অলিখিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সূত্রে জানা গেছে, যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত ৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা  (সিনিয়রিটি কার্যকর) নিয়ে নানা ঝামেলা রয়েছে। সরকারপন্থি বলে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা এটা মেনে নিতে পারছেন না। এ কারণে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে তারা বুঝিয়েছেন, এই মুহূর্তে সিনিয়রিটি কার্যকর করা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গেলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে।


এছাড়া গেজেট জারির পর পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা একাট্টা হয়ে সরকার বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারেন। যা আন্দোলনের এই মুহূর্তে সরকারের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। এসব নানা দিক চিন্তা করে এসএসবি’ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করেছে। পদোন্নতি সংক্রান্ত এসএসবি’র সুপারিশ চূড়ান্ত করে রাখলেও আপাতত ওই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্রীর কার্যালয়ে গত সপ্তাহে পাঠানো হলেও তা শেষ পর্যন্ত তা ঝুলে রয়েছে।পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বরে জানা গেছে।


এদিকে কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে তিন স্তরে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা প্রায় ঠিক করে রেখেছে এসএসবি।


সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আগে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা ঠিক করতে হবে এর পরে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।


তিনি আরও বলেন, এর আগে পদোন্নতি দিলে সমস্যা হবে। আমরা শুনেছি এ কারণেেই সার-সংক্ষেপ স্বাক্ষর করা হচ্ছে না।


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসনে তিন স্তরের  পদোন্নতির জন্য যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে প্রায় ১১০ জন ও উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে দুই শ’২০ জন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে তিন শ’কর্মকর্তা পদোন্নতি পেতে পারেন। জনপ্রশাসনের এপিডি উইং (নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ) পদোন্নতির  কাজ শেষ করছেন। এদিকে প্রশাসন ক্যাডারে মোট কর্মকর্তার সংখ্যা এখন প্রায় পাঁচ হাজার।


গত ছয় বছরে কয়েক দফায় প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। বর্তমানে উপসচিবের নিয়মিত (ডিউটি) পদ আছে ৮৩০টি। কিন্তু বর্তমানে উপসচিব আছেন ১ হাজার ২৮৮ জন। যুগ্ম সচিবের পদ আছে ৪৩০টি, তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯০৪ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১০৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৫৮ জন। তাই তিন স্তরের পদোন্নতি হবে পদের চেয়ে অতিরিক্ত। এবারের পদোন্নতিতে উপ-সচিব পদে ২০তম ব্যাচ, যুগ্ম সচিব ৯ম ও দশম ব্যাচ এবং অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৫ ব্যাচকে নতুন করে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০তম ব্যাচ আরও এক বছর আগেই উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময় এসএসবি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও উপ-সচিব পদে পদোন্নতি হয়নি।


প্রশাসনে সবচেয়ে কম সংখ্যক কর্মকর্তাকে সুপারসিড (পদোন্নতি বঞ্চিত) করা হবে। প্রশাসনে তিন স্তরে প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এখনও তদবির চলছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে। আবার মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে তদবির করছেন।  


এসএসবি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে নিজ নিজ পদোন্নতি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন। কোন কোন কর্মকর্তা সরাসরি সাক্ষাৎ না করে লিখিত আবেদন বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্যের আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন। কেউ কেউ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদেরকে পদোন্নতির অনুরোধ করাচ্ছেন। পদোন্নতির জন্য প্রচলিত প্রক্রিয়ার ওপর ভরসা না রেখে শত শত কর্মকর্তা এসব তদবির করছেন।


ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/এইচআর/এআর/ ঘ.))