ওয়াসার এমডি তাকসিমের বড় প্রকল্প দুর্নীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০৭ মে, ২০১৫ ১০:৩৪:৩৫

ঢাকা: ঢাকা ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প। এ প্রকল্পে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। নিয়ম ভেঙে ইচ্ছামাফিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ আর পাইপ আমদানিতেও হয়েছে ভয়াবহ দুর্নীতি। অযৌক্তিকভাবে বিদেশি কম্পানি থেকে ঋণ গ্রহণ আর টেন্ডারের ক্ষেত্রে ভেটিং না হওয়ার ঘটনাও সবার মুখে মুখে।
জানা যায়, পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে হরিলুটের জন্যই নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। দুই ফেজে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে পিডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তাঁর আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমানকে। তাকসিম এ খান এই কর্মকর্তাকে প্রথমে তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর তাঁকে ঢাকা ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অবসরে যাওয়া একজন ব্যক্তিকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এমন দায়িত্ব দেওয়ার নজির নেই। শুধু নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য তাকসিম এ কাজটি করেছেন। এই ব্যক্তি ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় এমডির সব দুর্নীতির সহায়ক ছিলেন।’
এ ব্যাপারে ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে প্রকল্প অনুমোদনের ১৩ মাস আগেই ঢাকা ওয়াসা ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং পরামর্শক নিয়োগের আগেই তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের পাইপ আমদানি করা হয়েছে। কাজের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়নি, ভেটিং হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এতে ঢাকা ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পে সরকারের কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরকষাকষি (ভেটিং) না করায় কমপক্ষে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের আগেই বিদেশ থেকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী (পাইপ) আমদানির জন্য ব্যয় হয়ে যাওয়া টাকার ওপর অতিরিক্ত সুদ গুনতে হবে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা।
প্রথম থেকে ঢাকা ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী এম এ রশিদ সিদ্দিকী। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাঁকে প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের (ফেজ-১) ব্যয় নির্ধারণ করা হয় তিন হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার ও ঢাকা ওয়াসা। ঋণের জন্য চায়না এক্সিম ব্যাংককে ২.৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সরকার ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর একনেক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেয়। পদ্মার জশলদিয়া পয়েন্টে এই শোধনাগারটি স্থাপন করা হবে। এখান থেকে পরিশোধিত পানি কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য বসানো হচ্ছে পাইপ। ঋণের শর্তানুযায়ী চায়নিজ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পে ব্যবহৃত পাইপ চীন থেকে আমদানির শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়।
এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি।
অথচ এই প্রকল্পের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা চুক্তি করে ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সরকার প্রকল্প অনুমোদন করার ১৩ মাস আগেই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসার কাজের রীতি অনুযায়ী ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজ নিয়ে দরকষাকষি হয়। এতে প্রতি টেন্ডারে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে দাম কমে থাকে। সে অনুযায়ী এই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার কাজে কমপক্ষে সাড়ে তিন শ কোটি টাকা সরকারের সাশ্রয় হতো। এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার সচিব কাজী ওয়াছিউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
(ঢাকাটাইমস/৭মে/টিআর/এমএন)