ল্যাপটপের জন্য দুই বন্ধুকে জবাই!
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস
১৪ জুলাই, ২০১৫ ১৩:২২:৪৬

ঢাকা: খুলনার খালিশপুর থানার মুজগুনি এলাকায় ল্যাপটপ ও ক্যামেরার জন্য দুই বন্ধুকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে অপর বন্ধু বাপ্পি। প্রান্ত বিশ্বাস (১৮) ও মিঠুন (১৯) নামের ওই দুই বন্ধুকে গত ৪ জুলাই গভীররাতে গলায় ছুরি দিয়ে কোপায় আরেক বন্ধু বাপ্পী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আহতরা। তারা সবাই খুলনা সিটি পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র।
গতকাল ঢাকা মেডিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মিঠুনের অবস্থা বেশি গুরুতর। মুখ ফুলে উঠেছে। কথা বলতে পারছেন না। প্রান্তর অবস্থাও প্রায় একই রকম। তিনিও কথা বলতে পারছেন না। ডাক্তার জানিয়েছেন, সৌভাগ্যবশত শ্বাসনালী কেটে যায়নি। আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে, দুর্বৃত্ত পেশাদার নয়।
আহতদের বন্ধু উজ্জ্বল সবসময় তাদের দেখাশুনা করছেন। তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, প্রান্ত, মিঠুন মেসে থাকত। তাদের মেসে বেড়াতে আসে বাগেরহাট জেলার মুক্ষাইট এলাকার বাপ্পী। রুমে প্রান্ত ও মিঠুনের ল্যাপটপ এবং একটি ক্যামেরা ছিল। ওই ক্যামেরা ও ল্যাপটপ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বাপ্পি রাতে বাটিতে ভাগ করে রাখা তরকারির ভেতর ঘুমের ওষুধ মেশায়। সেহেরীর সময়ে ঘুম থেকে ওঠে সে। পরে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের গলা কাটে। এসময় হালকা জ্ঞান আসে মিঠুন এবং প্রান্তর। দুজনে বাঁচার আকুতি জানায়। তখন বাপ্পী বলে, ‘তোদের বাঁচাতে পারি কিন্তু কাউকে আমার কথা বলতে পারবি না। এ জন্য আমাকে লিখিত দিবি।’ গলাকাটা অবস্থায় দুজন বিছানায় শুয়ে কাগজে সই করে। এরপর বাপ্পী নিচতলা থেকে অন্য ছেলেদের ডেকে আনে। তাদের বলে, ‘মিঠুন আমাকে ফোন দিয়েছিল। ওদের নাকি কে গলা কেটেছে। তাই আমি ওদের কাছে এসেছি। আপনারা আসেন।’
এরপর অন্য ছেলেরা অজ্ঞান অবস্থায় দুজনকে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যায়। মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। মেডিকেলে নেয়ার পথে বাপ্পীর অসংলগ্ন কথায় সন্দেহ হয় অন্য ছেলেদের। তারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে বাপ্পীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর বাপ্পী হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করে।
খালিশপুর থানা পুলিশ ঘাতক বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ল্যাপটপ এবং ক্যামেরাও উদ্ধার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ. আনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় ঘাতক বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে বাপ্পী একজন চতুর প্রকৃতির ছেলে। পুলিশ মনেপ্রাণে চাচ্ছে তার কঠোর শাস্তি হোক। ভিকটিমরা কিছুটা সুস্থ হলে তাদেরকে দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করাবো।’
মিঠুনের বাবা ঢাকামেডিকেলে বসে বলেন, ‘ভাই ছেলেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কলেজে দিছিলাম। এক বছর আগে একটা ল্যাপটপ কিনে দেই। ল্যাপটপের ১২০০ টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। আমি গরীব মানুষ। ছেলেকে বাঁচাতে এখন টাকা পাব কই?’
(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এএ/এএম)